Thursday 10 September 2015

শিতালং শাহ

শিতালং শাহ :-
সিলেট জেলার তৎকালীন করিমগঞ্জ মহকুমার শ্রীগেীরি মৌজায় ১৮০০ সালে জন্ম গ্রহন করেন । তাঁর বাবা মুন্সি জাহা বখশ । শিতালং শাহের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সলিম শাহ । সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ির মওলানা আবদুল ওহাব ছিলেন তাঁর মারফতি সাধনার দীক্ষাগুরু ।
শিতালং শাহ নিজে গান গাওয়ার পাশাপাশি গান রচনাও করতেন । তাঁ শিষ্য আসকর আলী এসব লিপিবদ্ধ করে রাখতেন । কিন্তু জীবদ্দশায় তাঁর কোনো বই প্রকাশিত না হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন তাঁর গানের কয়েকটি সংকলন প্রকাশ করেছেন । ১৮৮৯ সালে তিনি মৃত্যবরণ করেন ।




ঠগা খাইলাম রে ভাই বন্ধুয়ার বাজারে,
মাতিয়া বুলিয়া ঠগিয়া যার ধৈলাম না দুয়ারে ।

ঠগের হাট ঠগের বাজার ঠগের পসার
এবার না ধরিলে ঠগ ঠগবে বারে বার ।

দিনে ঠগে রাইতে ঠগে আর ঠগে কামে
অচেতন হইলে ঠগে আর ঠগে ঘুমে ।

ঠগ ধরা পড়িয়াছে ভাই বন্ধুয়ার বাজারে
চল যাই দেখে আসি মে ঠগেনি ঠগিয়েছে আমারে ।।

শিতালং ফকিরে কহে আল্লা নিরঞ্জন

ধরিতে না পাইলাম ঠগ হইয়া এক মন-গো ।

Thursday 3 September 2015

দুদ্দু শাহ , ( ১৮৪১ – ১৯১১ )

দুদ্দু শাহ :- ( ১৮৪১ – ১৯১১ )
যশোর জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বেলতলা গ্রামে ১৮৪১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর বাবা ঝড়মন্ডল একজন কৃষক ছিলেন । চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন । হরিশপুর গ্রামে শ্রীনাথ পাঠশালায় শিক্ষাজীবন শুরু হয় । শিক্ষা পেয়েছিলেন আরবী, ফার্সি ও সংস্কৃত ভাষায় ।

৩০ বছর বয়সে লালনের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বাউল গান লিখতে শুরু করেন । শেষ বয়সে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন । ১৯১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন ।


Tuesday 1 September 2015

শেখ বানু :- ( ১৮৪৯ - ১৯১৯).

শেখ বানু :- ( ১৮৪৯ - ১৯১৯).
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার বামৈ ইউনিয়নের ভাদিকারা গ্রামে ১৮৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা মুন্সি নাসির উদ্দিন । তিনি ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ।
অল্প বয়সে পিতাকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন । কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসায় নামযশ করে ‘ ভানু বেপারি ’ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান । একসময় নিজ গ্রামেরই সার বানুকে বিয়ে করেন ।কিন্তু তাঁদের কেনো সন্তান না হওয়ায় বামৈ গ্রামের জুলেখা বিবিকে বিয়ে করেন । এরপরও সন্তানের মুখ দেখতে পারেন নি শেখ ভানু 
একদিন ব্যবসা – সংক্রান্ত কাজে নৌকা করে ভৈবর বাজার যাওয়ার সময় নদীর তীরের দিকে দৃষ্টি পড়ে শেখ ভানুর । তিনি দেখতে পারলেন একটা মৃত মানুষের শবদেহ টেনে – হিচঁড়ে খাচ্ছে কয়েকটি কাক ও কুকুর । ওই দৃশ্য দেখে শেখ ভানুর মনে ভাবান্তর হয় । ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়েন গানের জগতে । এ পর্যন্ত তাঁর লেখা প্রায় শতাধিক গানের সন্ধান পাওয়া গেছে । তিনি ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ( ১৯১৯ সাল ) ৩ কার্তিক মৃত্য বরণ করেন ।



Monday 31 August 2015

শাহ আব্দুল লতিফ (১৮৪০ - ১৯৬০ )

শাহ আব্দুল লতিফ : (১৮৪০ - ১৯৬০ )
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার এলাকার পার্শ্ববর্তী ফুলগাঁও গ্রামে ১৮৪০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন ।তাঁর বাবা সৈয়দ আনোয়ার উদ্দিন । ছোট থাকতেই বাবা – মা মারা যান । এ সময় নানি তাঁকে লালন – পালন করে বড় করে তোলেন । ভারতের একটি মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেন । তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে বর্তমানে এক মেয়ে জীবিত রয়েছেন । আব্দুল লতিফ প্রায় দুইশ গান রচনা করেছেন । তিনি ১৯৬০ সালে ( ২৭ কার্তিক ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ ) মৃত্যবরণ করেন ।

Thursday 27 August 2015

কাকন শাহ ফকিরের গান


 হাসনাত মুহ.আনোয়ার
একজন লেখক ও কবি হিসাবে সুপরিচিত । পত্র – পত্রিকায় কলাম নিবন্ধ ছড়া রম্যরচনা লিখে পাঠকনন্দিত । তাঁর রম্যরচনা – কাকন’স জার্নাল,পুথি – বিলাতনামা সুধীমহলে প্রশংসিত । একজন গীতিকার হিসাবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে । অবশ্য কাকন ফকির নামেই গান লিখে থাকেন । একসময় অডিও ক্যাসেটে এবং অধুনা ইউটিউবে তাঁর গান শ্রোতামহলে সমাদৃত । সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বড়তলা গ্রামে জন্ম,মাতৃলালয় ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ শহরে লেখাপড়া ও লেখালেখির সুত্রপাত । দু- দশকের অধিক কাল ধরে বিলেতের ব্রাডফোর্ড শহরে সপরিবারে বসবাস করছেন ।
লোকসাহিত্য বিষয়ে গবেষণা এবং স্থানীয় ইতিহাস বিশেষত ব্রাডফোর্ড শহরে বাংলাদেশিদের বিগত ষাট বছরের ইতিহাস নিয়ে একটি তথ্যসমৃদ্ধ বই লেখার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন । এক দশকের গবেষণার ফসল এ বইটির কাজ সমাপ্ত প্রায় । অবসরে বাগান করা এবং স্থানীয় ইতিহাসের মাল মশলা সংগ্রহের লক্ষ্যে ঘুরে বেড়ানো তাঁর শখ ।

হাসনাত মুহ.আনোয়ারের জন্ম
আমার জন্ম জানুয়ারী ১৯৬৫ খ্রী:
প্রথম লেখা১৯৭৮  সাপ্তাহিক সিলেট
সমাচার  .. একটি ছড়া  ১৯৮০ থেকে গান লেখা শুরু করেন ।


Hasnat Mohd.Anwar is not only a genious writer but he is equally a prominent poet and a poet of folk Bengal. He is abouve all a lyric composer of Surma- valley.
In his creations, he has been able to create a beautiful pen picture of his time,his people and place. Regardless of race, religion & gender humanity is the prime focus in his creation.
His lyrics echoes the great Surma Valley based on the dolk traditions of Bangladesh. He has tried to fulfil the mission of universal humanitarian appeal. In his creations,he represents a very special special sense of culture of his own people.
I wish his every success in the year to come.

Dr. Shafi Uddin Ahmed
             Professor
             Dept of Bengali
             M C College, Sylhet

             Bangladesh


কলঙ্কিনী কইরা মোরে কই লুকাইলায়,
বন্ধু মন মনুরায়,দিন থাকিতে দেখানি দিবায় ।।

পাগলিনীর বেশে ঘুরি নগরে নগর
যার কাছে যাই তারে জিগাই,তোমারও খবর
তোমারও বিরহের আগুন, জ্বলছে কলিজায় ।।

তোমার আশায় হারাইলাম কুল, এই না সংসারে
কুল পাইতে কুলনাশা হই,ঘুরি দ্বারে দ্বারে
একবার দেখা দাও আমারে, আছি যে আশায় ।।

তোমার মোহন রুপ দেখিতে, মনে বড় আশা
আশা পুরাও দয়াল বন্ধু, কইরো না নিরাশা
ফকির কাকন কুল বিনাশা মিনতি জানায় ।।


Wednesday 26 August 2015

বাউল সাধক আরকুম শাহ

আরকুম শাহ:-

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামে ১৮৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা মোহাম্মদ আছিম । ১৯৪১ সালে তাঁর একমাত্র গানের সংকলন হকিকতে সিতারা প্রকাশিত হয়েছে । তিনি ১৯৪১ সালে মৃত্য বরণ করেন ।

মুর্শিদ ধরিও কান্ডার,
অবুঝ বালকের নৌকা ডুবিব তোমার,
মুর্শিদ ধরিও কান্ডার ।।

আমার নৌকায় তোমার বেসাত ধরছি পাড়ি আমি,
নৌকা ডুবি বেসাত গেলে কলঙ্কিনি তুমি ।।

আমার নৌকা ভব সায়রে তুমি নিজ ঘর
দিল ‍দুর্বিনের আয়না ধরি রাখিও নজর ।।

ধন্য বাপের বেটা যেই শত গুন তার,
বাপের ধনের বেটা মহাজন রংপুরের বাজার ।।

স্বামীর মাঝে নারীর বেসাত নারীর মাঝে স্বামী
তোমার মাঝে আমি মুর্শিদ আমার মাঝে তুমি ।।

চন্দ্র চড়ির মধুর ভান্ডার ভরিয়া থইছ ঘরে
বেপারী দেখিয়া বাট নাম রউক সংসারে ।।

হযরত শাহা আব্দুল লতিফ নিজের বেসাত দিয়া
পাগল আরকুমের নৌকা দিয়াছেন ভাসাইয়া ।।


২)
চাইর চিজে পিঞ্জিরা বানাই,
মোরে কইলায় বন্ধু রে বন্ধু নিরধনিয়ার ধন
কেমনে পাইমু রে কালা তোর দরশন ।।

সমদ্রে জল উঠে বাতাসের জোরে
আবর হইয়া ঘুরে পবনের ভরে
জমিনে পড়িয়া শেষে সমুদ্রেতে যায়
জাতেতে মিশিয়া জাত তরঙ্গ খেলায় ।
তুমি আমি আমি তুমি জানিয়াছি মনে
বিচিতে জন্মিয়া গাছ বিচি ধরে কেনে
এক হইতে দুই হইল প্রেমেরই কারণ
সে অবধি আশিকের দিল করে উচাটন ।।

পরিন্দা জানোয়ার যদি কোন এক কলে
জাতি ছাড়া বন্ধ হয় শিকারিয়ার জালে
কিরুপে জিন্দেগি কাটে বন্ধ খানায় তার
মাশুক হইয়া কর আশিকের বিচার ।
আশক মাশুক যদি থাকে দুই স্থানে
টেলী দিয়া খুসীর মঙ্গল যদি জানে
বিনা দরশনে কিলা বাঁচিব জীবন
শুন প্রভু প্রাণ প্রিয়া মোর নিবেদন ।।

পাগল আরকুমে কয় মাশুক বানিয়া
দুহাং পাতাইয়া থইছে উলুরে গাথিয়া
আহার করিতে যদি না যাইত মন
না লাগিত প্রেম লাঠা না হইত মরণ ।।



3)

আমার বুকে যে আগুন গো ললিতা সখী
তোমরা তার ভেদ কেউ জানো না ।
আমার কেউ দোষ দিও না ।।

আমি দাসী কুল বিনাশীর এই সে ভাবনা
ওরে পিরীত করি ছাড়িয়া গেল হায় গো ললিতা সখী
ফিরিয়া সে আর আইলো না ।।

ভাসাইয়া প্রেম সায়রে ফিরিয়া চাইলো না ।
ওরে ডুবিয়া যদি মরি আমি গো হায়গো ললিতা সখি
রইবো দুঃখ চরণ পাইলাম না ।।

জিতে মরা জ্ঞান হারা হইলাম না দেওয়ানা
ওরে জগতে কলঙ্কী হইলাম গো হায়গো ললিতা সখি
তবু বন্ধের দয়া হইল না ।।

পাগল আরকুম বলে প্রাণ না দিলে মাসুক মিলে না
ওরে পার যারা ধর তারা গো হায় গো ললিতা সখী

মুই দাসীর আশা পুরলো না ।।

3)

কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে ফুলে পাইলা ভ্রমরা,
ময়ুর বেশেতে সাজইন রাধিকা ।।
সুয়া চন্দন ফুলের মালা,সখিগনে লইয়া আইলা,
কৃষ্ণ রাধার গলে দিলা বাসর হইল উজালা ।।
কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে রাধায় দিলা কৃষ্ণর গলে,
উদল ও বদল করি আনন্দে করইন খেলা ।।
সুয়া চন্দন ছিটাইলা , সুগন্ধেতে মোহিত উজালা
আনন্দে সখিগন নাচে দেখিয়া প্রেমের খেলা ।।
কৃষ্ণ প্রেমের প্রেমিক যারা,নাচে গায় খেলে তারা
কুলমানের ভয় রাখে না ললিতা আর বিসখা ।।
পাগল আরকুম কইন পুরুষ নারী,হস্তে হস্তে ধরাধরি

বৃন্দাবনে আজ এস্কের ঝড়ি খেলিতেছে প্রেমের পাশা ।।

Monday 24 August 2015

বাউল সাধক কালা শাহর গান ( ১৮২০ - ১৯৬৯)

কালা শাহ : ( ১৮২০ - ১৯৬৯)

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের ধাইপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর বাবা তমিজ বেপারি । তাঁর তিনটি গানের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে । এগুলো হচ্ছে : প্রেম তরঙ্গ, রত্ম সাগর ও আনন্দ সাগর । তিনি প্রায় চার শ গান লিখেছেন । তাঁর জন্ম-মৃত্য প্রসঙ্গে দিরাইয়ের বাউল গীতিকার সয়াল শাহের তথ্যানুযায়ী, কালা শাহ দেড়শ বছর জীবিত ছিলেন । তিনি মুক্তিযুদ্ধের বছর দুয়েক আগে মারা যান । সেই হিসেবে তাঁর জন্ম সাল ১৮২০ । 

আমার মুর্শিদ পরশমনি গো, লোহারে বানাইলায় কাঞ্চা সোনা
মুর্শিদ রতন অমুল্য ধন, জীবন থাকতে চিনলাম না ।।

মুর্শিদ চরণ যে করছে সাধন,বিনা দুধে দৈ পাতিয়া তুলিয়াছে মাখন
সেই যে মাখন,কর ভক্ষণ,ভবক্ষুধা থাকবে না ।।

মুর্শিদ নামে গলে পর হার, কুলকলঙ্ক লাজলজ্জা কি করিব তোমার
এগো মুর্শিদ,মুর্শিদ,মুর্শিদ বইলে, সদায় কর কল্পনা ।।

হৃদ কমলে যখন ফুটবে ফুল,মন মনুরা জ্ঞানচান তোর হইবে আকুল
এগো দেখলে ছবি পাগল হবি, কারো মানা শুনবে না ।।

মুর্শিদ নামে ছাড়বে নিঃশ্বাস, মনারবছে হাওয়া নিকলে কেবলও বাতাস
এগো নিঃশ্বাসে বিশ্বাস করিয়া ধ্যানে নামটি জপ না ।।

কালা শায় কয় আরে মন পাগল,সরলে গরল মিশাইয়া হারাইলে সকল
এগো সরল দেশে ডুবিয়া থাক, গরল লাগ পাবে না ।।