Wednesday, 29 July 2015

বাউল মন , মরমী কবি বাউল হেলাল উদ্দিন

বাউল মন , মরমী কবি বাউল হেলাল উদ্দিন
বাউল হেলাল উদ্দিন

বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার এবং সিলেট বেতার পল্লীগীতির বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী মরমী কবি মোঃ হেলাল উদ্দিন ১৯৬০ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের কামার গ্রামে জন্মগ্রহন করেছেন । পিতা মসদ্দর আলী, মাতা রুপেজা বিবি । হেলাল উদ্দিন শৈশব থেকেই লোকসঙ্গীতের প্রতি দুর্বল ছিলেন বিধায় অল্প বয়সে প্রখ্যাত গায়ক মুজিবুর রহমান সরকারকে উস্তাদ হিসেবে গ্রহন করে । মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি আলী হোসেন সরকার এবং মনিবুর রহমান সরকারের নিকট তত্ত্ব মরমী গানের তালিম নেন । মুজিব সরকার, আলী হোসেন সরকার, এবং মনিবুর রহমান সরকারের নিকট তালিম নিয়ে হেলাল উদ্দিন হয়ে উঠেন সত্যিকারের একজন মরমী সাধক । তিনি বিভিন্ন সময় মুজিবুর রহমান সরকার,আলী হোসেন সরকার, ক্বারী আমির উদ্দিন, আব্দুল হামিদ,সফিকুন্নুর,রহি ঠাকুর প্রমূখ লোককবিদের সাথে গান গেয়ে বিশেষ করে মালজোড়া গানের জন্য সিলেট,সুনামগঞ্জ,নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পরিচিতি লাভ করেছেন । এই পরিচিতি  লাভের মাধ্যমে ভক্তদের আমন্ত্রণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে গান গাইতে গিয়েছেন একাধিকবার । বিভিন্ন সময় চ্যানেল এস, ইটিভি ( একুশে টিভি ) তে গান গেয়ে সুনাম অর্জন করেছেন । এছাড়া বিশটি অডিও ক্যাসেটে গান কণ্ঠ মিলিয়েছেন । মরমী কবি মোঃ হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ চার দশক সঙ্গীত সাধনা করে রচনা করেছেন পাঁচ শতাধিক তত্ত্ব গান । তবে কোন গীতি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি । এই প্রথম মোঃ হেলাল উদ্দিনের ৩০০ টি গান নিয়ে গীতি সংকলন ** বাউল মন ** সম্পাদনা করেছেন ** ফারুকুর রহমান চৌধুরী ** 

আমারে দয়া করো দয়াল আল্লাজী,
করুণার আশায়,ডাকি যে তোমায়, ভিখারী সাজি ।।

আমি বড় অপরাধী,কুলের আশায় বসে কাঁদি,
দিয়া নামের তরী,লও উদ্ধার করি,
তুমি হইয়া মাঝি ।।

তুমি ছাড়া কে আছে আমার,নতশীরে জানাই আবদার,
কেমনে থাকি একা,দাও আমায় দেখা,
আমি তোমারে খুঁজি ।।

জানি তোমার দয়াবিনে, উপায় নাই সংকট নিদানে,
হেলাল উদ্দিনে কয়, দিও চরণে আশ্রয়,

তুমি হইয়া রাজি ।।




আল্লার এবাদতের দায়,
মানুষ সৃষ্টি করে পাটাইলেন দুনিয়ায় ।
সৃষ্টির সেরা মানুষ হইয়া বেভুলে দিন যায় ।।

ভবে এসে অষ্টপাশে বন্দী হইলায়,
মন দিয়েছো বায়োস্কোপে শয়তানে ভুলায় ।।

নবী মনো আপন চিনো মুর্শিদের উছিলায়,
তুমি বা কার কেবা তোমার ভাবিলে পাইবায় ।।

হিংসা নিন্দা ছেড়ে থাকো মানুষের সেবায়,
সরিষা পরিমাণ হিংসা থাকা ভালো নায় ।।

আজ বাদে কাল থাকবো কিনা বলা বিষম দায়,
হেলাল উদ্দিন কি ধন লইয়া স্বদেশে যাইতায় ।।






একলা থইয়া যাইতায় গিয়া অতা তোমার বিচারনি,
কও হুনি ।
গেলে তুমি আর আইবায়নি ।।

কিতার লাগি যাইতায় গিয়া ছাড়িয়া ঘরখানি,
থাখলায় খাইলায় আমার ঘরো পাউরি লাইছনি ।।

যাইতে যদি চাও তোমারে রাখতাম পারমুনি,
কও আমারে আমি তোমায় কোন্তা কইছিনি,

তোমারে খাওয়াইলাম কুরমা পোলাও বিরানী,
আর কিতা চাও তুমি আমারে কইবায়নি ।।

তোমারে ছাড়িয়া কিলা কাটাইমু রজনী,
হেলাল উদ্দিনরে  তোমার লগে নিবায়নি ।।




ও হে বিশ্ব স্বামী, তুমি সর্বজীবের অন্তর্যামী,
প্রেমও ভাবে এ নিখিল করিলে সুজন,
তোমাতেই আদি অন্ত ভাবি নিরঞ্জন ।।

হেলা কি অবহেলায়, জ্বালা কি নিরালায়,
কে জানে কিভাবে আছ কোথায়,
আগুন পানি মাটি হাওয়ায়,সন্ধানে না পাওয়া যায়,
গোপনে থাকিয়া করো উদ্দেশ্য সাধন ।।

স্রষ্টা তুমি সর্বদা সৃষ্টির দীনবন্ধু,
করুণা বর্ষিতে তুমি অনন্ত এক সিন্ধু,
অসীম ধরাধাম তোমার কাছে এক বিন্ধু
তাতে আর কিন্তু না দিয়া কখন ।।

আসমান জমি চন্দ্র সুর্য এমনি একj মহিমায়,
রাখিয়াছ কৌশল করে যেমন করে শোভা পায়,
সৃষ্টি যত মোহমায়ায়,
কয় দিনের আশায় করে যায় ভ্রমণ ।।

আটারো হাজার আলম সীমা দিয়ে হিসাবে,
আদম হইতে স্মরণ করি শেষ নবী হাবীবে,
অলি আবদাল এইভাবে, গাউছ কুতুব যত হবে,
গেলো যারা আসবে আরো যত জন ।।

হেলাল উদ্দিন ভাবি সদায় থাকিয়া তোমার অধীন
মাতা পিতা পীর মুর্শিদ আরো যত মুমিন,
জানাই আদাব সালাম আমি দীন হীন,
ভুল ত্রুটি হইলে আমায় করিবে মার্জন ।।




ও-হে আল্লাহ নিরঞ্জন, তোমায় ভক্তিভাবে করি স্বরণ,

গাইতে তোমার গুণকীর্তন শক্তি দাও আমায় ।।

যার উছিলায় এই পৃথিবী সৃজন করলেন দয়াল সাঁই,
নবীজির নাম স্মরণে অধীনে সালাম জানাই,
লাখো লাখো দুরূদ ভেজি দয়াল নবীর পাক রওজায় ।।

মা-ফাতেমা হযরত আলী হাসান হোসেন প্রাণের ধন,
নুরের মশাল দ্বীনের নবী সাথে পাক পাঞ্জাতন,
আলি নবী পয়গাম্বরগণ, যারা আসলেন এই ধারায় ।।

রড়পীর খাজা মঈন উদ্দিন শাহজালাল এমনি,
৩৬০ আউলিয়া নিয়া বঙ্গেতে আসলেন তিনি,
সিলেট প্রথম আযানধ্বনি,হইল যার উছিলায় ।।

তারপরে স্মরণ করি দয়াল মুর্শিদের নাম,
জন্মদাতা পিতার পদে জানাইলাম হাজার সালাম,
আদরের ধন মা জননী ভক্তি রাখি তিনির পায় ।।

শ্রোতা ভাইয়ের সালাম আদাব জানাই আমি অজ্ঞানে,
বিদ্যা বুদ্ধি নাই যে আমার কয় হেলাল উদ্দিনে,
মন মজাইয়া বাউল গানে রয়েছি ক্ষমার আশায় ।।




ওহে খোদা বিশ্বপতি,তোমার করুণা অতি
তুমি বিনে নাহি গতি, আমি গোনাহগার ।।

সৃজিয়াছ তোমার নুরে,মোহাম্মদ নবীজিরে,
মাখলুকাত যার খাতিরে আটারো হাজার
কঠিন হাসরের দিন,হবেন উম্মতের জামিন
সাফিউল মুজনিবিন,করিবেন উদ্ধার ।।

নবীর চার খলিফা প্রধান,আলী আবু বকর উমর উসমান,
নয়নের ধন হাসান হোসেন মা ফাতেমার,
তাদের সকলের নাম স্মরণ করে সালাম জানাই ভক্তি ভরে,
নামের গুণে পাপী তরে,পাইয়াছে কিনার ।।

সকল পীরের সর্দার জানি,আব্দুল কাদির জিলানী,
অর্ধেক কোরআন জবানী করেলেন গর্ভে থেকে মার,
বাগদাদ শরীফে মোকাম,জানাই হাজার হাজার সালাম,
বড়পীর তোমার নাম জগতে প্রচার ।।

আজমীরে মঈন খাজা, চিশতিয়া তরিকার রাজা,
কত বেদিন পাইয়া সাজা, হইল তাবেদার,
তোমার কেরামতির কাছে,যাদুকররা হার মেনেছে,
তাওহীদের নিশান উড়েছে,কি যে চমৎকার ।।

বাবা শাহ্জালাল আউলিয়া,৩৬০ সঙ্গী নিয়া,
সিলেট আসলেন চলিয়া,হুকুমে আল্লার,
শাহচটে দিলেন আযান,ভাঙ্গিল সাত তালা দালান,
গৌড় গোবিন্দের ঘটল নিদান,বীরত্বে বাবার ।।

সভা করে আছেন যত, সালাম আদাব শত শত,
ভুল ভ্রান্তি হবে কত, ক্ষমা চাই এবার,
হেলাল উদ্দিন ভক্তি ভরে,মাতা পিতার চরণ ধরে,
বিনয়ে বলি কাতরে, দোয়া চাই সবার ।।



কেমন আছে বিনদিনী রাই,
শিল্পী :- ওস্তাদ বাউল এম. হোসেন
গানটি লিখেছেন :- মরমী কবি বাউল হেলাল উদ্দিন
কেমন আছে বিনদিনী রাই,
রে সুবল ভাই ।
কেমন আছে বিনদিনী রাই ।।

জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে,
বলো রাধা কেমন আছে ।
নইলে পাছে, আমি মরে যাই ।।

বাঁশি বাজাই কদমতলা,
বাড়ে মনে দ্বিগুন জ্বালা ।
হই উতলা,দরশন না পাই ।।

রাধা কি আসবে না জলে,
সখিগণ সকলে মিলে ।
হেলাল উদ্দিন বলে , দেখে প্রাণ জুড়াই ।।




ক্ষোভহীন প্রশান্ত,তেজিয়ান অক্লান্ত,
অখিল সমস্ত, অক্ষি গত,
অন্তহীন চিরস্থায়ী অনন্ত ।।

অনুপম নিরবয়ব অতুলনীয়,
অভিন্ন ধরণীশ্বর একক অদ্বিতীয়,
অক্ষয় অধিপতি প্রশংসা অতি,
জানাই প্রণতি অবিরত ।।

অজরামর অধিষ্ঠিত হে অধিনায়ক,
ব্যাপিত বিশ্বময় তুমি প্রতিপালক,
সলি স্থলে,অনিল ও অনলে,
সৃষ্টিকুলে,তুমি সমাদৃত ।।

অনাশ্রয়ের আশ্রয় তুমি আমি রিক্ত সহায়হীন,
তুমি তারক তুমি রক্ষক,আছি তোমার অধীন,
অনাদি আদিহীন,কৃপা চায় হেলাল উদ্দিন,
তিতিক্ষিত সীমাহীন তুমি শাশ্বত ।।





তোমার নিজ গুণে করো ক্ষমা করিতেছি ভুল,
আমার এ ফরিয়াদ আল্লাহ করো হে কবুল ।।

সদায় কাদেঁ প্রাণপাখি,
দু‘হাত বাড়াযে আল্লাহ তোমরে ডাকি,
আমায় দিওনা ফাকিঁ
শুন্য হৃদয়ে থাকি,ফুটাও এস্কের ফুল ।।

তুমি দয়াল বলে,
রহমত ভিক্ষা চাহিতেছি এ কাঙ্গালে,
তোমার দয়া পাইলে,
সুখি হব সর্বকুলেেএ কুল সে কুল ।।

আমি গোনাহগার,
তোমারী দরবারে আল্লাহ করিতেছি আবদার,
আশা রাখি হে ক্ষমার,
হেলাল উদ্দিন হইল তোমার, নামেতে আকুল ।।



দাও দেখা দয়াল বন্ধু ডাকি আমি তোমার কাতরে,
দয়াল নাম শুনিয়া,আশাতে রইলাম চাইয়া,
আসবে তুমি আমারই ঘরে ।।

বন্ধু বন্ধু বলে,বুক ভাসে নয়ন জলে,
কোথায় রইলে ভুলে আমায় মনে পড়ে নারে,
নাম শুনে প্রাণ সঁপিলাম,তবু না দেখা পাইলাম,
একা রইলাম ঘোর অন্ধকারে ।।

জীবন থাকতে একটি বার, দেখতে চাই তোমার দিদার,
এ মিনতি আমার, তোমারই দরবারে,
হেলাল উদ্দিনের আশা করিও না নিরাশা,
পিপাসা মিটাও দয়া করে ।।



দয়া করগো দয়াল আল্লাহ দয়া করো মোরে,
দয়াময় দয়াল বন্ধু ডাকি আমি তোমারে ।।

জানি তুমি দয়ার সাগর দয়ারই ভান্ডার,
পাপ করেছি ক্ষমা করো আমি গোনাগার ।।

অকুলিয়ার কুল তুমি অগতির গতি,
সয়ালের দয়াল জানি তুমি বিশ্বপতি ।।

করজোড়ে বিনয় করি ওগো আল্লাহ সাঁই
তুমি ছাড়া এ ভুবনে আর কেহ নাই ।।

বাঁচাও মারো সবই পার তোমার এখতিয়ার,
আমার প্রতি সদয় দেখা দাও একবার ।।

হেলাল উদ্দিন বলে আল্লাহ আমি বড় হীন,
অপরাধী জেনে আমায় ভাসিও না ভীন ।।


দয়া করো বলে তোমায় সবাই দয়াল কয়,
যে যাহা চায়,তোমা থেকে পায়,নাই কোন সংশয় ।।

করুণা অফুরাণ,সংকটে কর ত্রাণ,
বাঁচাও মম প্রাণ,তুমি হে মহান,
দয়াতে দয়াময় ।।

হইয়া সারথি,জাগাও মোর সুমতি,
রাখো হে মিনতি,অগতির গতি,
আমাতে হও উদয় ।।

হেলাল উদ্দিনের মন,ব্যাকুল তোমার কারণ,
দাও হে দরশন,বন্ধু সুজন,
হইয় না নিদয় ।।


দয়াময় দয়াল ও বন্ধু দয়ারই ভান্ডার
তুমি যারে কর দয়া ভয় কী আছে তার ।।

তোমার দয়ার ভান্ডার হইতে,
দয়া কর দ্বীনবন্ধু রইলাম আশাতে ।
দয়া যদি নাহি করো কলংক হবে তোমার ।।

তোমার কাছে নিবেদন করি,
দিবারাত্রি থাকি যেন নাম স্মরণ করি ।
তোমার নাম পুঁজি করে হই যেন এই ভব পার ।।

দয়ার আশায় যদি আমি যাই মরিয়া,
নিজগুণে দয়াল মোরে নিও তরাইয়া ।
হেলাল উদ্দিন মরণকালে আশা রাখি করুণার ।।



রক্ত দিয়েছি আরো দেব, প্রয়োজন হলে মরব,
রাখবো দেশের মান ।
জন্মভুমি বাংলাদেশ আমার প্রাণের প্রাণ ।।

একতায় হইয়া বদ্ধ,
অশান্তি করিব রুদ্ধ,
দেশের জন্য করব যুদ্ধ,
উড়াইব শান্তির নিশান ।।

সবাই মিলে শপথ নেব,
শোষণহীন সমাজ গড়ব,
অন্যায়কে ধ্বংস করব,
মজলুমের করব উত্থান ।।

ন্যায় নীতি প্রতিষ্টা করব,
অনাচার দূর করিব,
আঁধারে আলো ফুটাব ,
গাইব জয়ের গান ।।

শহীদের স্থৃতি ধারণ করে,
অসমতা রাখবো দুরে,
হেলাল উদ্দিন সবার তরে,
করি আহবান ।।



 রহিম রহমান আল্লাহ আমায় দাও হে নাজাত,
নবীজির খাতিরে কবুল করো মোনাজাত ।।

অনন্ত অসীম তুমি দয়ার সাগর আলা,
তোমার নামের সাথে নাম লিখেছো মোঃ রাসুলুল্লাহ
যার কারণে সৃজন করলা,কুল মাখলুকাত ।।

দোস্ত বলে যারে তুমি নিজে ডাকিলা,
সেই নবীর উম্মতের গুণাহ মাফ করে দাও আল্লাহ,
নবীজি সাফায়ত উলা,হাসর পুলসিরাত ।।

আউয়ালুমা খালাকালাহু নুরী হাদিসে প্রমাণ,
আঊয়াল আখের জাহের বাতেন নবীজির সম্মান,
হেলাল উদ্দিন পাপী নাদান,চাই মাগফেরাত ।।



হয়ে অপরাধী, ডাকি নিরবধি,
দেখাও দাও দরদী, দয়া করিয়া,
কোথায় তুমি রইলে আমায় ভুলিয়া ।।

পাইলে তোমারে,সকল জ্বালা যায় দুরে,
কেন আমারে দিলে এত যন্ত্রণা ।
জানিয়া তোমায় আপন, সব দিয়েছি বিসর্জন,
বন্ধু গুণধন, দেখা দাও আসিয়া ।।

যদি না পাই দেখা,ওহে প্রাণ সখা,
থাকা আর না থাকা,সকলি সমান ।
তুমি না আসিলে জনম যাবে বিফলে,
দুঃখেরই অনলে যাব পুড়িয়া ।।

তোমারে দেখিতে বাসনা মনেতে,
দেহে প্রাণ থাকতে আস দয়া করিয়া ।
বাসিও না আমায় ভীন, বলে হেলাল উদ্দিন,
কাঁদি নিশিদিন তোমার লাগিয়া ।।




১৩).

দয়াময় দয়াল ও বন্ধু দয়ারই ভান্ডার
তুমি যারে কর দয়া ভয় কী আছে তার।।

তোমার দয়ার ভান্ডার হইতে,
দয়া কর দ্বীনবন্ধু রইলাম আশাতে।
দয়া যদি নাহি করো কলংক হবে তোমার।।

তোমার কাছে নিবেদন করি,
দিবারাত্রি থাকি যেন নাম স্মরণ করি।
তোমার নাম পুঁজি করে হই যেন এই ভব পার।।

দয়ার আশায় যদি আমি যাই মরিয়া,
নিজগুণে দয়াল মোরে নিও তরাইয়া।
হেলাল উদ্দিন মরণকালে আশা রাখি করুণার।। 










১৪).

হাত উঠাইয়া মাঙ্গি দোয়া কবুল করো না,
খালি হাতে আমায় ফিরাইয়া দিও না।।

একবার তোমার পাইলে দিদার,
কেটে যাবে সকল আঁধার।
রহিম রহমান নাম যে তোমার,
আমারে করো ফানা।।

করিয়াছি কত গোনা,
ক্ষমা করো সাঁই রাববানা।
নাম শুনে হইলাম দেওয়ানা,
অসীম তোমার করুণা।।

ধরি তোমার পাকচরণে,
পার করিও ঘোর নিদানে।
ভেবে কয় হেলাল উদ্দিনে,
আর কোন ধন চাই না।।





১৫).

মন তুমি আল্লাহ বলরে,
বল মোহাম্মদ রাসুল,
দমে দমে পড়ো নাম করিবেন কবুল।।

একবার ও নাম জপলে না মনরে মনো,
বসিয়া নিরালা।
কোন দিন জানি দমের কোঠায়,
লেগে যাবে তালা।।

মা ফাতেমা নায়ের বাদাম রে মনো,
মাস্ত্তলে টাংগাইয়া।
হযরত আলী হাসান হোসেন,
পাঞ্জাতন ভাবিয়া।।

অধম হেলাল উদ্দিন বলেরে মনো,
আমি বড় হীন।
বিলাসিতায় অবহেলায়,
গেলো আমার দিন।।





 ১৬).

আমারই গোনাহ যত সবি তোমার জানা,
ক্ষমা করে দাও ওহে রাববানা।।

সয়ালের দয়াল, আমি যে কাঙ্গাল,
ডাকিয়া বেহাল, পুরাও মন বাসনা।।

স্বরূপে হও সাকার, অন্ত নাই মহিমার,
আমারে করো পার, করি যে কামনা।।

কয় হেলাল উদ্দিন, আশার আশে কাটাই দিন,
বাসিও না আমায় ভীন, চাই তোমার চরণখানা।।





 ১৭).

আমি ডাকব তোমায় প্রাণ থাকতে দেহায়,
সোনা বন্ধুয়া রে।
করো তোমার যাহা মনে চায়।।

বন্ধুয়ারে-আমি অধম অপরাধী, ডাকি তোমায় নিরবধি,
তুমি বিনে কেহ নাই ধরায়, ও বন্ধুরে।
সয়ালের দয়াল তুমি, কোরানে শুনেছি আমি,
জগৎস্বামী, কাঁদি তোমার দায়।।

বন্ধুয়ারে-ডাকি তোমায় আপন জেনে, অশ্রু ঝরে দুই নয়নে,
দয়া কি লাগে না এই কান্নায়, ও বন্ধুরে।
যেদিন খেলার হবে ইতি, নিভে যাবে ঘরের বাতি,
দুঃখীর পতি, কে ডাকবে তোমায়।।

বন্ধুয়ারে- তোমার দেখা পাইতে সেদিন, কেঁদে বলে হেলাল উদ্দিন,
নিজ গুণে তরাই আমায়, ও বন্ধুরে।
আজরাইল আসিবে যখন, তোমার নাম যে থাকে স্মরণ,
পালাতে দিও না ওজন, হাসরের বেলায়।।





১৮).
তুমি যে আমারই, আমি যে তোমারই,
সারা জীবন থাকব দুজন এই আশা করি।।

রাখিব তোমায় বন্ধু হৃদয় ও পিঞ্জরে,
দোহাই লাগে আমায় ছেড়ে যাইও নাকো দূরে।
চলে গেলে যাব মরে,  
গলে দিয়া ছুরি।।

আমার যাহা সব তোমারে বিনামূল্যে করব দান,
তুমি কাছে থাকলে হবে চাওয়া পাওয়ার অবসান।
তোমার লাগি কাঁদে যে প্রাণ,
সহিতে না পারি।।

হেলাল উদ্দিন বলে বন্ধু নাই আমার সাধন ভজন,
তোমায় ছাড়া কিছুই চাই না এই আমার নিবেদন।
তুমি আমার মানিক রতন,
যাইও না আমায় ছাড়ি।।




১৯)

সরল মনে ডাকি বলে করো তুমি অভিমান,
যদি ডাকের পাই না সাড়া নিজেই হবো অপমান।।

পাই না খুঁজে পথের দিশা,
করি শুধু তোমার আশা।
তুমি বিনে নাই ভরসা,
আল্লাহ তুমি দয়াবান।।

ডাকলে যদি না হই সুখী,
তবে কেন তোমায় ডাকি।
তুমি আমায় দিয়ে ফাঁকি
আছো নাকি বর্তমান।।

হয়ে আমি মর্মাহত
ডাকি তোমায় অবিরত।
হেলাল উদ্দিন দিবা রাত্র,
গাইতেছি তোমারই গান।।







২০)
আমি সারা জীবন করেছি শুধু নাফরমানি কাজ,
তাই তো তুমি আমার প্রতি হয়েছ নারাজ।।

তোমার আদেশ অমান্য করে অভিশপ্ত পথ,
গ্রহণ করে ভুল করেছি সামনে বিপদ,
আমি করলাম না তোমার এবাদত, নাই রোজা নামাজ।।

লা তাকনাতুমির রহমতুল্লাহ বলেছ তুমি,
তোমার রহমতের আশায় রয়েছি আমি,
কুলি সাইয়িন কাদির তুমি, সর্বত্র বিরাজ।।

তোমারে না পাওয়ার কত ব্যথা এ বুকে,
মরণ যেন হয় আমার তোমাকে দেখে,
হেলাল উদ্দিন তোমায় ডাকে, হে রাজাধীরাজ।।

২১)
অকুলের কুল দয়াল তুমি আমারে করো উদ্ধার,
ভবের মায়ায় বন্দী হইয়া হইলাম আমি গোনাগার।।

দু দিনের এ দুনিয়াদারী,
ধন আর মানের বাহাদুরী।
করি কত ছল চাতুরী,
নেশায় পড়ে বেশুমার।।

লোভ আর মোহেতে পড়ি,
পাপের বোঝা করছি ভারী।
কেমনে আমি দিব পাড়ি,
ভব নদীর নাই কিনার।।

অসহায়ের সহায় তুমি,
জানি তোমায় হৃদয় স্বামী।
পথ হারাইয়া কাঁদি আমি,
হেলাল উদ্দিন চাই দিদার।।

২২)
আর কত দিন থাকব আমি এই ভবের বাজারে,
আপন যারা সবাই গেলো সর্বহারা করে।।

কি করিব কোথায় যাব সঙ্গের সাথী নাই,
সাথীহারা পাখির মতো কেমনে দিন কাটাই,
আপন বলে যার কাছে যাই, সেও চায় না ফিরে।।

মায়াজালে বন্দী হইয়া করলাম ধান্ধাবাজি,
বিফল গেল মানব জনম হারাইলাম পুঁজি,
যুক্তি করে ছয়জন পাজি নিল চুরি করে।।

যার তার ভাবে সবাই গেলো হয়েছি একেলা,
হেলাল উদ্দিন ভাবছি বসে ডুবে গেলো বেলা,  
দূর করে দাও ভবের জ্বালা সহে না অন্তরে।।

২৩)
লইলাম না তোমার নাম করলাম না এবাদত,
নিজ গুণে তুমি আমায় করো হেদায়ত,
আল্লাহ আমারে দেখাও সুপথ।।

কাম ক্রোধ লোভ মোহ হিংসা অহংকার,
আমি হয়েছি এসব রিপুর তাবেদার,
আমার সকলি করিল সংহার তোমার আনামত।।

বিনীতভাবে তোমার কাছে করি নিবেদন,
তোমার নামের পাগল বানাও আমার দুষ্ট মন,
আমি ভোগ করেছি সারা জীবন তোমার নিয়ামত।।

কেহ যদি ভুল করিয়া ভুল স্বীকার করে,
ক্ষমা চায় করজোড়ে তোমার দরবারে,
হেলাল উদ্দিন আশা করে পাইতে রহমত।।

২৪)
আল্লাহ আমি অপরাধী আমায় ক্ষমা করো,
তোমারই দরবারে প্রভু আছি নত শিরো।।

না জানিয়া না বুঝিয়া ভুল করিয়াছি,
করজোড়ে হাত তুলিয়া তোমারে ডাকতেছি,
রহিম রাহমান নাম শুনেছি, দয়ারই সাগরো।।

আমার মতো এমন পাপী কেহ ভবে নাই,
পাপের বোঝা মাথায় লইয়া বলো কোথায় যাই,
আছি নামের দিয়া দোহাই, বাঁচাও না হয় মারো।।  

জানি দয়াল নামটি তোমার অতি দয়াবান,
তুমি যারে করো দয়া পায় সে পরিত্রাণ,
হেলাল উদ্দিন বলে মহান, তুমি সবি পারো।।

২৫)
আমি তোমারে ডাকি গো আল্লাহ আমি তোমারে ডাকি,
তোমায় পাব বলে, এই ভূ-মন্ডলে, কত আশা মনে রাখি।।

আমি গোনাগার, বান্দা তোমার,
দিদার চাই একবার, দেখাও দেখি।
আমার জীবন মরণ, শুধু তোমার কারণ,
ছটফট করে পরাণপাখি।।

তোমারই করুণা, আমারই কামনা,
তুমি বিনা, আমি কেমনে থাকি।
একবার দয়া করে, এসো আমার ঘরে,
দেখিতে চায় দুটি আঁখি।।

কত যে আশায়, ডাকি যে তোমায়,
রয়েছ কোথায়, দিয়া লুকি।
হেলাল উদ্দিন বলে, জীবন গেল চলে,
মরণ আছে শুধু বাকি।।

২৬)
আমায় তুমি করো ক্ষমা, আমার অপরাধের সীমা নাই,
দয়াল বলে ডাকি তোমায় সাই, করুণা, চাই।।

লা শরীক আল্লাহ তুমি কেহ নাই তোমার সমান
করুণার সিন্ধু হইতে বিন্দু দয়া করো দান,
তুমি রহিম তুমি রাহমান,
তাই তোমার মহিমা গাই।।

কু-মতির কু-মন্ত্রণায় সু-পথে মন চলে না,
পাপ পূণ্য যা করেছি সকলি তোমার জানা,
সব হারিয়ে হইলাম দেনা,
জিজ্ঞাসিলে জবাব নাই।।

ভাবে বুঝি দোষের দোষী হয়েছি হেলাল উদ্দিন,
দুরাশার আশা মনে আসবে কি মোর শুভ দিন,
আমার প্রতি হও দয়াসীন,
বিদায় বেলা দিদার চাই।।

২৭)
লা শরিক আল্লাহ তুমি সর্বশক্তিমান
তুমি খালিক তুমি মালিক তুমি রহিম রহমান
তুমি জলিল তুমি জববার তুমি হান্নান মান্নান।।

অনাদির আদি তুমি অসীম তোমার রহমত
সৃষ্টির প্রতি রয়েছে তোমার অফুরন্ত মহববত,
কে বুঝে তোমারই কুদরত, সকলি তোমারই দান।।

সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ করে সৃজন করলা মানব জাত
কোরানে প্রমাণ দিয়েছ আশরাফুল মাখলুকাত,
ভক্ত আশিক পাইতে নাজাত, গাইছে তোমার গুণগান।।

ছিলে আছো থাকবে তুমি নাহি তোমার লয় ক্ষয়
ভুবন জড়ে বিরাজ করো যখন যেথায় ইচ্ছা হয়,
হেলাল উদ্দিন ডাকছে দয়াময়, আমায় করো পরিত্রাণ।।

২৮)
আমি তোমায় ডাকি বন্ধু রে
আরে ও বন্ধু দেও না তুমি সাড়া।
তোমার কারণ, লোকে এখন, বলে কপাল পুড়ারে।।

তোমায় যদি পাই না আমি রে
আরে ও বন্ধু থাকিতে জীবন,
প্রেমানলে জ্বলে পুড়ে হইবে মরণ রে।।

আমি তোমার তুমি আমার রে
আরে ও বন্ধু না দেখলে বাঁচি না,
আমায় দেখা দিতে তোমায় কে করেছে মানা রে।।

হেলাল উদ্দিন তোমার পাগল রে
আরে ও বন্ধু পুরাও মন বাসনা,
আর কত কাঁদাবে আমায় সহিতে পারি নারে।।

২৯)
আমি সর্বকুলে তোমার দয়া চাইরে প্রাণের বন্ধু
তুমি ছাড়া আপন কেহ নাই।।

দয়াময় দয়াল তুমি দয়ার সীমা নাই,
আমার হৃদ আসনে বসো একবার দেখে প্রাণ জুড়াই।।

সাথীহারা একা আমি কেমনে দিন কাটাই,
তোমার বিরহে আমার মনে শান্তি নাই।।

তুমি ছাড়া মনের দুঃখ বলার জায়গা নাই,
অন্তর্যামী মনের খবর জানো তুমি সাঁই।।

তোমার কাছে তোমার দয়া ভিক্ষা আমি চাই,
হেলাল উদ্দিন এই আশাতে নামের সারি গাই।।

৩০)

অকুল সাগরে, সাগরে আমারে ভাসাইলায়,
কুল নাই কিনারা নাই কুমিরে ভয় দেখায়।।

অতল সাগরের জল তরঙ্গ খেলায়,
সংকটে প্রাণ কাঁপে ডরে রহিলায় কোথায়।।

সলিলে হাবুডুবু নিমজ্জিত প্রায়,
সমীরের গতি দেখে ডাকি যে তোমায়।।

অনাথের নাথ তুমি আমি নিরুপায়,
উত্তরণ করো মোরে রয়েছি আশায়।।

সিন্ধু পার করিয়া দাও বিন্দু করুণায়,
হেলাল উদ্দিন তোমার কাছে দয়া ভিক্ষা চায়।।

৩১)

আমি যেন গাইতে পারি তোমার গুণগান,
আমি যে অজ্ঞান আমায় শক্তি করো দান।।

মহাজ্ঞানী তোমায় জানি
দান করো জ্ঞান ওহে দানী।
জুগাইয়া দাও মধুর বাণী
হে মহীয়ান।।

যে গান গাইলে তোমায় দেখি
সে গান যেন আমি লেখি।
গানে আমি তোমায় ডাকি
করো হে কল্যাণ।।  

তোমার গুণগান গাইতে
নামের সাথে প্রেম করিতে।
হেলাল উদ্দিন এই আশাতে
গানে করি ধ্যান।।


৩২)

আল্লাহ আমায় একবার দেখাও মক্কা মদিনা,  
আমার মনের আশা পূরণ করো নিরাশ করো না।।

মক্কায় আছে তোমার ঘর,
শুনেছি কত সুন্দর,
হাজরে আসওয়াদ পাথর,
কুদরতেরই নিশানা।।

তোমার ঘর তওয়াফ করিয়া,
নবীজির রওজাতে গিয়া,
ইয়া নবী ইয়া রাসুল কইয়া,
হাত তুলে চায় করুণা।।

মক্কা আর মদিনাপুরী,
না দেখিয়া যদি মরি,
তোমার কুদরতেরই চরণ ধরি,
মরণের ডাক দিও না।।

মক্কা মদিনা যাইতে,
হেলাল উদ্দিন রই আশাতে,
আল্লাহ আমার জীবন থাকতে,
পুরাও মনের বাসনা।।


৩৩)

ভব নদী তটে, বিষমও সংকটে,
এসো হে নিকটে, তুমি তারক।
অকুল নদীর ঢেউ দেখে, ভয়ে কাঁপে বুকে,
কালো কুমির ডাকে, কি ভয়ানক।।

দেখে নদীর তরঙ্গ, কাঁপে সর্বঅঙ্গ,
চাই তোমার সঙ্গ, তুমি ভয়নাশক।
অভয়ে দাও আশ্রয়, কৃপা গুণে কৃপাময়,
হইয়া সদয়, পার করো পালক।।

নদীর পাড়ে বসে ভাবি দিবা শেষে,
আঁধারে এসে, কে দিবে আলোক।
আমি একা নাই সাথী, কি হবে মোর গতি,
চরণে মিনতি, জাগাও পুলক।।

অতল নদী জলাকার, আসে কত ঝড় জোয়ার,
নাই তরণী হইতে পার, গোলাকার গোলক।
হেলাল উদ্দিন তোমার, ভিখারী করুণার,
করো হে উদ্ধার, আমি যে নিলক।।

৩৪)

ও দয়াল আল্লাজী,
আমারে বানাও নামাজী,
দিবা রাত্রি থাকি যেন তোমার নামে মজি।।

আল্লাজী-নামাজ আদায় না করিলে সাজা আছে বুঝি,
তোমার কাছে হেদায়তের রাস্তা আমি খুঁজি।।

আল্লাজী-তোমার পথের পথিক হইতে মন হয় না রাজি,
মায়াজালে বন্দি হইয়া করলাম ধান্দাবাজি।।

আল্লাজী-ভবে এসে রিপুর বশে হারাইলাম পুঁজি,
হেলাল উদ্দিন তোমার আশায় ঘুরে পাগল সাজি।।


৩৫)

আল্লাহ তোমার নামেরই দোহাই,
জীবন থাকতে যেন নবীজির দিদার পাই,
উম্মত দরদী দয়াল নবী পাপী তাপীর কান্ডারী তাই।।

যার মাধ্যমে জেনেছি আল্লাহ আমি তোমার নাম
পেয়েছি পবিত্র বাণী কোরানে কালাম,
নামাজ রোজা ধর্ম ইসলাম,
গিয়াছেন শিখাই।।

সত্যের বাহক হয়ে রহমত বরকত নিয়া
মানুষ রূপে এলেন মানুষের মুক্তির লাগিয়া,
মোহাম্মদী উম্মত হইয়া,
 শুকরিয়া জানাই।।

হেলাল উদ্দিন কয় আল্লাহ দয়াল নবীজিরে
স্বপ্নে না হয় বাস্তবে একবার দেখাও দয়া করে,
নিবেদন তোমার দরবারে,
কবুল করো সাঁই।।


৩৬)

তোমায় ডাকি গো,
ওগো আল্লাহ পরোয়ার,
বিন্দু দয়া করে আমায় সিন্ধু করো পার,
আমি গোনাগার।।

পাপিষ্ঠ নিকৃষ্ট আমি এই ভবের বাজার,
পাপ বিহনে পূণ্য নাই কর্মেতে আমার ।।

অনন্ত অসীম তুমি রহমতের ভান্ডার,
করজোড়ে ভিক্ষা মাঙ্গি দরবারে তোমার।।

হেলাল উদ্দিন চায় তোমারে দেখিতে একবার,
তোমারে না পাইলে আমার জীবনও অসার।।

৩৭)
ওরে মন ভোলা,
দমে দমে পড়ো লা-ইলাহা-ইল্লাললা,
আল্লাহ বিনে কেহ নাই ঘোর সংকটের বেলা।।

অদ্বিতীয় রাজাধীরাজ লা-শরিক আল­াহ,
মোহাম্মদী নূরে করলেন জগৎ উজালা।।

সাধন করে আল্লাহ নাম বানাও গলের মালা,
ইল্লালা জিকিরে যাবে ক্বলবের ময়লা।।

ইবাদতের জন্য মানুষ ভবে পাঠাইলা,
লাভের আশায় ভবে এসে মূলধন হারাইলা।।

হেলাল উদ্দিন বলে আমার নায়ের মাঝি মাল্লা,
যার তার পথে সবাই গেলো হয়েছি একেলা।।

৩৮)
হর দমে জপো জপোরে পাগল মন আল্লাহ আল্লাহ
থাকিতে জীবন, করোরে সাধন, হবে মানব তন উজালা।।

লোভ লালসায়, মজিয়া মোহ মায়ায়,
ভুলিয়া রহিলায়, করে হেলা।
ছাড়িয়া ভোগবিলাস, হও আলার চিরদাস,
পরাধীন পরবাস, যায় বেলা।।

ছেড়ে হিংসা অহংকার, জিকির করো আল্লার,
হবে মন পরিষ্কার, রবে না ময়লা।
পবিত্র হবে দেহা, পড়িলে যাহা,
লাইলাহা, ইল্লাললা ।।

আল্লাহ নামের সারি, কলবে করো জারি,
ডাকো নাম ধরি, নিরালা।
হেলাল উদ্দিন বলে, জীবন গেলো বিফলে,
লইলাম না গলে, নামের মালা।।

৩৯)
তোমার নামের পাগল বানাও আমারে,
অপরাধী জেনে আমায় রেখো না অন্ধকারে।।

তোমায় ছাড়া চাই না কিছু আর,
তুমি আদি তুমি অনন্ত পরোয়ার দিগার।
তুমি দয়াল দয়ার ভান্ডার,
কোলে নেও দয়া করে।।

নামের সুধা আমায় করাও পান
সুধা পানে পাষাণ গলে হয় মোমের সমান।
পলাইয়া যাবে শয়তান।
হৃদয়ের আসন ছেড়ে।।

তোমায় ভুলে হইলাম সর্বহারা,
লইলাম না তোমার নাম যে নামে মধু ভরা।
হেলাল উদ্দিন তুমি ছাড়া,
কোথায় যাবো কার দ্বারে।।


৪০)
এই দুনিয়ায় আমরা সবাই মুনিবের গোলাম,
মুনিবের গোলামী করিতে এই ভবে আসিলাম।।

মুনিবের হুকুম মানা গোলামের কাজ
হুকুম না মানলে মুনিব জানি হয় নারাজ।
রাখি না রোজা পড়ি না নামাজ,
একি করিলাম।।

মুনিবের আদেশ যারা করিবে পালন
গোলামের দফতরে তাদের নাম হবে লিখন।
ধন্য তাদের মানব জীবন,
পড়ে পবিত্র কালাম।।

তুমি মুনিব আমি গোলাম আছি তোমার অধীন
অপরাধ ক্ষমা চায় কয় হেলাল উদ্দিন।
বাসিও না আমারে ভীন,
আশাতে রইলাম।।

৪১)
দয়াল আল্লার লীলাখেলা বুঝার সাধ্য আছে কার,
রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে,
সব তার এখতিয়ার।।

আজ আছি কাল থাকব কি না,
আল্লাহ  ছাড়া কেউ জানি না,
হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না,
তিনি নিয়ন্ত্রক সবার।।

যখন যাহা ইচ্ছা করেন,
তখন তাহা করতে পারেন,
যারে খুশি তারে মারেন,
অকুলে কেউ পায় কিনার।।

বাদশাকে ফকির বানাইয়া
ফকিরকে বাদশাহী দিয়া,
সাগরকে নগর বানাইয়া,
সাগর হয় ভেঙ্গে পাহাড়।।

সৃষ্টি যত স্রষ্টার অধীন
চলে যেতে হবে একদিন,
এই বিশ্বাসে হেলাল উদ্দিন,
ভরসা রাখি তোমার।।

৪২)
আল্লার এবাদতের দায়,
মানুষ সৃষ্টি করে পাঠাইলেন দুনিয়ায়।
সৃষ্টির সেরা মানুষ হইয়া বেভুলে দিন যায়।।

ভবে এসে অষ্টপাশে বন্দী হইলায়,
মন দিয়েছো বায়োস্কোপে শয়তানে ভুলায়।।

নবী মানো আপন চিনো মুর্শিদের উছিলায়,
তুমি বা কার কেবা তোমার ভাবিলে পাইবায়।।

হিংসা নিন্দা ছেড়ে থাকো মানুষের সেবায়,
সরিষা পরিমাণ হিংসা থাকা ভালো নায়।।

আজ বাদে কাল থাকবো কিনা বলা বিষম দায়,
হেলাল উদ্দিন কি ধন লইয়া স্বদেশে যাইতায়।।


৪৩)
তুমি বিনে এ ভুবনে কেউ নাই আপনা,
তোমার নামে হইলাম আমি পাগল দেওয়ানা।।

তোমার ভালবাসা পাইতে কাঁদি আমি দিবা রাতে,
যদি তুমি থাকো সাথে, পুরবে বাসনা।।

তোমারই বিরহের জ্বালা, আমার সোনার অঙ্গ হইল কালা,
গলেতে কলংকের মালা, সইতে পারি না।।

হেলাল উদ্দিন তোমায় পাইলে, ত্রিতাপ জ্বালা যাবে ভুলে,
রেখ আমায় চরণতলে, নিরাশ করো না।।


৪৪)
তুমি মারতে পারো, তুমি বাঁচাইতে পারো,
তুমি কাঁদাইতে পারো, তুমি হাসাইতে পারো,
আল্লাহ সবি পারো, আল্লাহ সবি পারো।।

ভূমিকম্প দিয়া মারো এক্সিডেন্ট করাইয়া
আগুনে পুড়াইয়া মারো জলে ডুবাইয়া।
বিছানায় শুয়াইয়া রাখো কত রোগ দিয়া
ডাকলে থাক নিরব হইয়া, যা ইচ্ছা তা করো।।

আইয়ুব নবীকে বাঁচাও কোষ্ঠ রোগ দিয়া
ইউনুস নবী বাঁচলেন মাছের পেটে থাকিয়া।
ইউসূফকে বাঁচালে কুয়ার ভিতর রাখিয়া,
ইব্রাহীম রইলেন বাঁচিয়া, আগুনে না পুড়ে।।

আদম আর হাওয়া কাঁদলেন গন্দম খাইয়া
ইয়াকুব নবীকে কাঁদাও পুত্রশোক দিয়া।
নবীজি কাঁদিলেন শুধু উম্মতের লাগিয়া
আসিক মাসুকের লাগিয়া, কেঁদে জরোজরো।।

নমরুদ ফেরাউনকে হাসাও বাদশাহী দিয়া
শাদ্দাদ হাসিলো একটা বেহেস্ত বানাইয়া।
এজিদকে হাসাইলে তুমি ক্ষমতায় বসাইয়া
হেলাল উদ্দিন কয় ভাবিয়া, তুমি ভাঙ্গো গড়ো।।


৪৫)
আমায় তুমি কেন বাসো ভিন্ন, প্রাণের বন্ধুয়ারে
একবার তোমায় পাইলে আমার জীবন হইতো ধন্য।।

তুমি আমার স্রষ্টা আমি সৃষ্টি যে নগণ্য,
ভুবন জুড়ে শুনি তোমার নামেরই প্রাধান্য।।

তুমি বিনা আমি অসহায় হে মহামান্য,
করুণার বারি দিয়ে মিটাও পাপের চিহ্ন।।

মানুষ কুলে জন্ম নিয়ে হয়ে গেছি বন্য,
হেলাল উদ্দিন চায় তোমারে বুঝি না পাপ পূণ্য।।


৪৬)
আমার ঘরে আওরে বন্ধু দেখিব তোমারে,
তোমায় ডাকি প্রাণও পাখি কোনদিন যাবে উড়ে।।

সবাই জানে আমি তোমায় ডাকি গানের সুরে,
নিজ গুণে আসো একবার স্বরূপে রূপ ধরে।।

মন সাধে সাজাইলাম ঘর কত আশা করে,
আসবে তুমি দেখবো আমি দুটি নয়ন ভরে।।

হেলাল উদ্দিন তোমায় ছাড়া আর কিছু চাই নারে,
পথও চেয়ে থাকি সদায় দাঁড়াইয়া দুয়ারে।।

৪৭)
সারা জীবন কাঁন্দাইলে পাইয়া কি অপরাধ রে,
মিটাইলে তোর স্বাদ রে বন্ধু মিটাইলে তোর স্বাদ।।

তুমি বন্ধু ছিলে আমার হৃদ আকাশের চাঁদ,
তোমায়হারা হইয়া কত সইলাম অপবাদ রে।।

প্রথম দেখার কালে তোমায় দিলাম ধন্যবাদ,
মন আনন্দে গাইলাম আমি তোমারী প্রবাদ রে।।

তুমি বিনে কে শুনিবে আমার ফরিয়াদ,
হেলাল উদ্দিন তোমায় পাইলে যাবে মনের বিষাদ রে।।


৪৮)
আজব কারিগর তুমি আজব রঙ্গিলা,
কি সুন্দর করে একটা ঘর বানাইলা।।

সাড়ে তিন হাত লম্বা ঘর,
দেখতে লাগে কি সুন্দর।
অন্ধকার ঘরের ভিতর
তুমি লুকাইলা ।।

দুইটি খুঁটির উপরে
ঘরখানি খাড়া করে।
আগুন পানি বাতাস নূরে
মাটি মিশাইলা।।

রংমহল ঘর চৌদ্দ তালার
চতুর্দিকে ছাউনি চামড়ার।
হেলাল উদ্দিন কয় চমৎকার
নয় দরজা খোলা।।


৪৯)
তোমার নামেতে আমি হলেম দিওয়ানা
দু’হাত তুলে মাঙ্গি দোয়া কবুল করো না।।

নাম শুনেছি আমি তোমার
চোখে দেখলাম না একবার।
দূর করে দাও মনের আঁধার, সাঁই রাববানা।।

আমি যে তোমারই পাগল
ঘুরি কত বন আর জঙ্গল।
নাই যে আমার কোন সম্বল, তোমার সব জানা।।

দিও না গো দূরে ঠেলে
থাকব তোমার চরণ তলে।
ভেবে হেলাল উদ্দিন বলে, এই মোর কামনা।।


৫০)
এলাহীর আদালতে আসামী হইলাম,
আমি একি করিলাম।
লইলাম না আল্লাহ নবীর নাম।।

প্রতিশ্রুতি দিয়া এই ভবে আসিলাম,
এসে মায়ার ফাঁদে আমি বন্দী হইলাম।।

নামাজ রোজা নাই ধর্ম নামে মানিলাম
মর্ম না বুঝে শুধু কর্ম করিলাম।।

সত্যকে মিথ্যা দিয়া স্বার্থে ঢাকিলাম
ঈমান আমল নাই হালাল হারাম না চিনলাম।।

পূণ্য নাই পাপে তরী বুঝাই করিলাম
রং তামাশা ভোগ বিলাসে দিন কাটাইলাম।।

ভবের হাটে দোকান দিয়া পুঁজি হারাইলাম
হেলাল উদ্দিন ভাবিতেছি কি জবাব দিতাম।।





৫১)
দয়াময় দয়া করো মোরে, আমি ডাকি তোমারে,
সংকটে উদ্ধার করো আমি পাপীরে।।

দেখাও দেখি, বলাও বলি, শুনাও শুনি, চালাও চলি,
আমারে খাওয়াইলে খাই, না খাওয়াইলেও পারো তাই,
তোমার দয়ায় আমি বাঁচি নইলে যাই মরে।।

কাঁদাও কাঁদি, হাসাও হাসি, নাচাও নাচি, ভাসাও ভাসি
আমার যাহা সব তোমারই, হায়াত আর মউতের ডুরি,
রেখেছ তোমার হাতে কৌশল করে।।

আমার বলতে কিছু নাই মিছে আমিত্বের বড়াই,
তুমি স্বাধীন তোমার অধীন, আছি পাগল হেলাল উদ্দিন,
তবে কেন আমার ভুলে রয়েছ দূরে।।


৫২)
আওরে বন্ধু আওরে আও,
ভক্তের বাসরে তুমি আও।
মিনতি জানাই তোমারে একবার দেখে যাও।।

বন্ধু বলে ডাকি তোমায় আমার পানে চাও,
আমার মনে কি চায় তুমি দেখে বুঝে নাও।।

ভক্তের বাসরে যদি রাখো তোমার পাও,
মনানন্দে জড়াইয়া ধরব তোমার গাও।।

পাগল হইয়া ডাকি মনের আশা পুরাও
কৃপা করে দেখা দিয়া আমারে বাঁচাও।।

বিচ্ছেদের আগুনে কেন আমারে পুড়াও
হেলাল উদ্দিন ডাকে তোমায় একবার সাড়া দাও।।



৫৩)
আমার মরণে কলমা নসিব অইবনি
লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আমারে পড়াইবায়নি।।

কলমা শরিফ পড়ে যারা দুনিয়া গেছেন ছাড়ি
মাবুদ আল্লাহর কাছে তারা আদর্শ ব্যাপারী।।

কলমা নসিব হয় না যদি আমার মরণকালে
জীবনের ভরা ডুবাইয়া ভাসিব অকুলে।।

কলমা সাধন করছে যারা তাদের জীবন ধন্য
মানবতরী বুঝাই করল পাপ নাই শুধু পূণ্য।।

কলেমা ঈমানের ভিত্তি ঈমানে মুমিন
কলেমার উছিলায় মুক্তি চায় হেলাল উদ্দিন।।


৫৪)
আশা করে বসে আছি দিদার পাইতে
দয়া করে এসো আমার এই ভাঙ্গা ঘরেতে।।

অপরাধ করেছি আল্লাহ তোমারই দরবারে
তাই তো আমি সদায় কাঁদি, রহিম নাম ধরে।
রাখিও না আমায় দূরে অবহেলাতে।।

তোমারই দরবারে আল্লাহ করি প্রার্থনা
নিজ গুণে পূরণ কর মনের বাসনা।
আশাতে বঞ্চিত করো না, রহমত হইতে।।

দয়াল নাম ভরসা করে হেলাল উদ্দিনে
তুমি সহায় তুমি সম্বল সংকট নিদানে
কবর ও হাসর ময়দানে পাই যে দেখিতে।।


৫৫)
তুমি আমার হও বা না হও আমি তোমার হইতে চাই,
চরণে দিও আমায় ঠাঁই।।

আমার প্রতি সদয় হইও নির্দয় তুমি হইও না
এ জগতে তুমি ছাড়া কেউ নাই আমার আপনা।
তোমার রহমত থেকে বঞ্চিত কর না,
বিন্দু দয়া আমি চাই।।

আমারে তাড়াইয়া দিলে কোথায় যাব কার দ্বারে,
কে আমাকে আশ্রয় দিবে সবাই খোঁজে তোমারে।
ভিখারী তোমার দুয়ারে
নতশিরে হাত উঠাই।।

নিবেদন করি প্রভু গ্রহণ কর আমারে,
দাসী হয়ে থাকব আমি তোমার চরণ ধরে।
হেলাল উদ্দিন কয় কাতরে,
মনের আশা পুরাও সাঁই।।

৫৬)
মরণকালে আমারে পড়াইও দয়াল আল্লাহ
লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদ রাসূলুলা।।

তোমার পাক কালিমা পড়িয়া আমি যদি যাই মরিয়া, 
অন্ধকার কবরে গিয়া থাকব আমি একেলা।।

যখন তোমার ইচ্ছা হবে, আজরাইল পাঠাইবে,
পাক পবিত্র রাখবে আমার বিদায়ের বেলা।।

ঠিক রাখতে যেন পারি ঈমান, এই তওফিক করিও দান,
আমল নাই পাইতে পরিত্রাণ, ভরসা তুমি মাওলা।।

শূন্য হাতে কেমনে যাব, তোমার কাছে কি জবাব দিব,
হেলাল উদ্দিন ক্ষমা চাইব, লইয়া নবীর উছিলা।।


৫৭)
মা আমেনার কোলে এলেন মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ
দু জাহানের বাদশাহ তিনি, মা আমেনার নয়নমণি,
হাবিবে কামলিওয়ালা।।

অপূর্ণতার বেদনায়, যার আগমন প্রতিক্ষায়,
এ বিশ্ব ভুবন ছিলো ব্যাকুল।
বেহেস্তি সুবাসে, সৃষ্টি মনের উল্লাসে,
বসিয়া জপে নাম নিরালা।।

রহমতের ছায়া ছায়াহীন কায়া,
দুনিয়াবাসীর জন্য আশির্বাদ স্বরূপ।
তাওহীদের সূর্য আলোতে এ রাজ্য,
করিয়াছেন নবী উজালা।।

ইসলামের পতাকা, বাজাইলেন ডংকা,
সত্য সরল পথে করলেন আহবান।
তরাইতে পাপী উম্মত, চাই নবীজির সাফায়াত,
হেলাল উদ্দিন কয় হাসরের বেলা।।


৫৮)
মদিনা তুমি বড় ভাগ্যবান,
তোমার বুকে ঘুমিয়ে আছেন নবী দুজাহান।।

বেদ্বীনের অত্যাচারে আমার নবী মোহাম্মদ
জন্মভূমির মায়া ছেড়ে মদিনায় করলেন হিজরত।
ভ্রান্ত মানুষ পাইলো সুপথ, দেখে নূরের চাঁন।।

নবীজির চরণ পরশে মদিনা হয় পবিত্র
ইসলাম গ্রহণ করে মানুষ কলেমা শুনা মাত্র।
আমার নবীজি তাওহীদের পাত্র, অমৃত জবান।।

মদিনা নাম ধরিয়া করজোড়ে মোনাজাতে
দুরূদ সালাম পৌঁছান নবীজির রওজাতে।
হেলাল উদ্দিন মদিনাতে, যাইতে পেরেশান।।



৫৯)
বড় আশা ছিল রে মনে যাব মদিনায়
যেথায় চিরশায়িত আমার নবী মোস্তফায়।।

রওজা জিয়ারত করিতে কত মানুষ যায়
ইয়া নবী ইয়া রাসূল বলে সালামও জানায়।।

মদিনায় গিয়াছে যারা নবীজির রওজায়
মানব জনম সার্থক তাদের এই দুনিয়ায়।।

মদিনার মাটি আর বাতাস লাগলে গায়
অপবিত্র দেহ মন পবিত্র হয়ে যায়।।

হেলাল উদ্দিন পাপী উম্মত বড় অসহায়
কেমনে যাব মদিনায় নাই আমার উপায়।।


৬০)
রবিউল আউয়াল চাঁদের বারো তারিখে, সোমবার ছুবে ছাদেকে,
ধরার বুকে এলেন আমার দয়াল নবীজি।
সৃষ্টির সেরা মানুষ ধরায় পাঠাইলেন আল্লাজী ।।

মানুষ ভুলে আল্লার রাস্তা, ছিলো না সমাজ ব্যবস্থা,
মদ আর গাঁজা খাইতা পাপ না বুঝি।
মেয়ে জন্ম নিলে সকলে মিলে,
জীবিত কবর দিত পাষাণ সাজি।।

ডাকাতি আর চুার, সুদ ঘুষ জুয়ারী
কে কারে মারি বানাইতো পুঁজি।
নারীদের ছিল না দাম বেচা কেন অবিরাম,
চিনত না হালাল হারাম, বিচারে নাই কাজি।।

বানাইয়া মাটির মূর্তি, সকলে করত ভক্তি,
এই ছিল ধর্মের রীতি, দেখ ইতিহাস খুঁজি।
ছিলো পাপাচারে অন্ধকার, জোর যার মুলুক তার,
জিনা আর বেভিচার, করত ধান্দাবাজি।।

তাওহীদের বাণী লইয়া ধরাতে আসিয়া,
উম্মতের লাগিয়া, নবী দরদী সাজি।
দিলেন ইসলামের দাওয়াত, দেখাইলেন সত্য পথ,
হেলাল উদ্দিন চায় সাফায়াত, দুরূদ সালাম ভেজি।।


৬১)
নবীজি আমারে করো ভব নদী পার,
তোমার দয়ায় তরে গেল কত গোনাগার।।

কুল হারিয়ে কুলের আশায় কাঁদি দিবানিশি,
রিপুর বশে সব হারিয়ে হইলাম দোষী।
আঁধারে  ঘিরিল আসি, দেখি অন্ধকার।।

নামাজ রোজা নাই যে আমার কি করি উপায়,
ধর্মে কর্মে মন বসে না দিন কাটে হেলায়।
পাপের বোঝা লইয়া মাথায়, দোহাই দেই তোমার।।

কু-পথে মন মজাইয়া ভুলি তোমার নাম,
খেয়ার কড়ি নাই যে, আমার ঘুমাইয়া রইলাম।
হেলাল উদ্দিন আশায় রইলাম, তুমি জামিনদার।।


৬২)
মক্কায় উদয় হল নূরের চাঁদ, মা আমেনা জিন্দাবাদ,
সেই চাঁদের আলো দেখে কুল মাখলুকের মিটল মনের সাধ।।

যুগযুগান্তর যোগী ঋষি, চাঁদের প্রেমে ধ্যানে বসি,
আপনি ধরা দিলো আসি, লয়ে সু-সংবাদ।।

মিথ্যায় সত্য ঢাকা ছিল, আলোয় অন্ধকার নাশিল,
তাওহীদের ডংকা বাজিল, দূর হলো বিষাদ।।

অপূর্ব সেই চাঁদের কিরণ, দেখে মুগ্ধ হলো ভুবন,
হেলাল উদ্দিন পাইতে চরণ, জানাই ফরিয়াদ।।


৬৩)
ইয়া মোহাম্মদ মোস্তফা নবী কামলিওয়ালা,
সাফায়তের কান্ডারি নূরে আলা।।

সৃষ্টিকে তুমি উদ্ধারিতে,
রহমত স্বরূপ এলে ধরাতে।
আল্লার বাণী প্রচারিতে,
সকল শেষে নবী তোমায় পাঠাইলা।।

আসিয়া এই ধরার বুকে,
ইয়াহাবলি উম্মতি মুখে।
ব্যথায় অশ্রু ভরা চোখে,
কেদেঁ কেদে নবী বুক ভাসাইলা।।

পাপে পূর্ণ ছিল বসুন্ধরা,
মুক্তির দূত এলে তুমি খোদার পিয়ারা।
হেলাল উদ্দিন কয় মরু সাহারা,
তোমার পরশে নবী হইল উজালা।।


৬৪)
আমার প্রাণের প্রিয় নবী হযরত,
পারের আশায় ডাকি তোমায় তোমার এক পাপী উম্মত।।

তুমি সৃষ্টির মূল, তুমি অকুলের কুল,
তুমি ঈমানের ফুল, তুমি আল্লাহর রাসূল।
তোমার উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত।।

তুমি সাইয়েদুল মুরসালিন, তুমি খাতেবুন নাবিউন,
তুমি রহমতুলি­ল আল-আমিন, তুমি সফিউল মজনবিন।
আমারে দেখাও তোমার নূরানী সুরত।।

তুমি আঁধারে আলো, তোমার দিদার যে পাইলো,
তার ভাগ্য ভাল তার জনম সার্থক হলো।
হেলাল উদ্দিন করিতে চায় রওজা জিয়ারত।।


৬৫)
এলেন খোদার পিয়ারা নবী, মোহাম্মদ আরাবী,
স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আমার প্রিয় নবী।।

চন্দ্র, সূর্য আর গ্রহ তারা, জীন ইনসান আর ফেরেস্তারা,
কুল মাখলূক আত্মহারা দেখে নূরের ছবি।।

কার যেন আজ শুভাগমন, কার যেন আজ অভিনন্দন,
(তার) আগমনের বার্তা সমীরণ, ছড়ায় পূণ্য ভাবি।।

ফুলে ফলে কানাকানি, জলে স্থলে জানাজানি,
খোশ আমদেদ ইয়া পরশমণি, জানাইলো সবি।।

মা আমেনার ছোট ঘরে, আলোকিত বেহেস্তি নূরে,
হেলাল উদ্দিন চায় নবীজিরে, এই আমার দাবি।।

৬৬)
ও মন মজও রে, মজও দয়াল নবীর প্রেমে,
সাকরাত মউত কবর হাসর তরবে যাহার নামে।।

দিন গেল বিলাসিতায় রাত গেল কামে,
চক্ষু মেলে চেয়ে দেখো কেউ নাই ডানে বামে।।

ভাবো মন তাওহীদের মুর্শিদ মদিনা মোকামে,
ইয়া নবী ইয়া রাসূলুল্লাহ বল দমে দমে।।

কামে ক্রোধে লোভে মোহে মজলে ধরাধামে,
চিনলে না দয়াল নবীরে রয়েছ কু-কর্মে।।

হেলাল উদ্দিন বলেরে মন কোনদিন ধরবে যমে,
নবীজির আশিক হইয়া থাকো সজাগ ঘুমে।।


৬৭)
প্রেম করোরে মন দয়াল নবীজির সনে,
নবীজি আমার পারের ও কান্ডার,
দয়ারই ভান্ডার দুজাহানে।।

নবীজির প্রেমিক যারা হয়েছেন দুনিয়ায়,
স্বার্থক তাদের মানব জনম করিয়াছেন সাধনায়।
সংকটে নবীর উছিলায়, ভয় নাই কোনখানে।।

মোহাম্মদ নামের মধু জীবন থাকতে করো পান,
ঠিক নাই তোমার হঠাৎ কোনদিন জীবন হবে অবসান।
দেহমন করো কোরবান, থাকো ঐ নাম স্মরণে।।

নবীর প্রেমে আশিক হইয়া দুরূদ পড়ো মন পাষাণ,
দুরূদ অমূল্য রতন ঠিক হবে আমল ঈমান।
আউয়াল আখের নবীজির শান, কয় হেলাল উদ্দিনে।।


৬৮)
ইয়া হাবিব আল্লাহ ইয়া রাসূল আল­াহ
একবার আমায় দেখাও তোমার নূরানী বদন।
তোমারে না পাইলে আমার বৃথা এ জীবন।।

আমি পাপী উম্মত তোমার দিদারের আশায়,
ডাকি তোমায় নেও না আমায় সোনার মদিনায়।
রাখো তোমার চরণ ছায়ায়, করি নিবেদন।।

তুমি রহমত তুমি বরকত ছায়াহীন কায়া,
ধরায় এলে তরাইতে মুক্তির বাণী নিয়া।
নবীজি তোমার লাগিয়া কাঁদে আমার মন।।

সত্য প্রচারিতে এলে অন্ধকার যুগে,
দেখলো তারা নয়নভরে ছিলো যাদের ভাগ্যে।
হেলাল উদ্দিন দিদার মাঙ্গে, দাও হে দরশন।। 



৬৯)
আল্লার হাবীব বিশ্বনবী নূরের ছবি এলেন ধরায়,
সৃষ্টির সেরা মানুষ পাঠাইলেন পুত্র রূপে মা আমেনায়।।

বেহেস্তি ফুল মক্কায় ফোটে,
মা আমেনার ভাগ্যে জোটে।
সৃষ্টিতে সেই সংবাদ রটে,
চতুর্দিকে সুবাস ছড়ায়।।

রিক্ততার হল অবসান,
নিখিল বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ।
নূরের জ্যোতি পূণিমার চাঁন,
আলোয় আঁধার নিল বিদায়।।
মহাজ্ঞানী পথ প্রদর্শক
চিরসত্য বাণী প্রচারক।
আমার নবী ছিলেন আঁধারনাশক,
হেলাল উদ্দিন সালাম জানায়।।


৭০)
হবেন নবী রোজ হাসরে উম্মতের জামিনদার,
দয়ার সাগর দয়াল নবী দয়ারই ভান্ডার।।

কঠিন হাসর পুলসিরাতে, তোমার করুণা পাইতে,
দিলেন আল্লাহ তোমার হাতে, সাফায়াতের ভার।।

স্থান দিও নিদানকালে, লেওয়াউল হামদ ঝান্ডাতলে,
অকুলের কুল দয়াল বলে, করিও উদ্ধার।।

হাউজে কাওসারের পানি, পান করাইও পাপী জানি,
হেলাল উদ্দিন কয় দিন রজনী, ফরিয়াদ আমার।।


৭১)
আমার মন পাখি তুই যারে মদিনায়,
রওজা মোবারকে গিয়ে চুমা দিয়ে আয়।।

যারে পাখি মদিনা মোকাম,
রওজার পাশে দাঁড়াইয়া জানাইও সালাম।
সাইয়েদিনা মোহাম্মদ নাম, জপ সর্বদায়।।

যেথায় নবী আছেন ঘুমাইয়া,
ইয়া নবী ইয়া রাসূলুল্লাহ ডাক কাঁদিয়া।
চোখের জলে বুক ভিজাইয়া, ধুলা মাখো গায়।।

পবিত্র সেই মদিনা ভূমি,
হেলাল উদ্দিন কয় মুক্তা হীরার চেয়ে দামী।।
করিস না তুই আর পাগলামী, সময় বয়ে যায়।।


 ৭২)
কুল মাখলুক যার কারণে সৃজন করিলেন,
আল্লায় নিজে নামের সাথে,
মোহাম্মদ নাম লিখিলেন।।

আল্লার নূরে নবী পয়দা নবীর নূরে এ জাহান,
বেহেস্ত দোজখ চন্দ্র সূর্য জমিন আর আসমান।
ফেরেস্তা আর হুর গোলেমান,
যার প্রশংসা করেন।।

আরশ কুরশি লওহ কলম মানব দানব জীন ইনসান,
পাহাড় পর্বত সাগর নদী যার খাতিরে দু-জাহান।
আল্লার বাণী পবিত্র কোরআন
নবীজি পাইলেন।।

পশু পাখি কীটপতঙ্গ বৃক্ষ আদি তরুলতা,
স্রষ্টার সৃষ্টি গায় আমার দয়াল নবীজির কথা। 
হেলাল উদ্দিন চাই সমতা,
যে দিন হাসর জমাইবেন।।


৭৩)
সাকিয়ে কাওছার দয়াল নবীজি আমার  
সাফিউল মুজনিবিন কঠিন হাসরের দিন,
হবেন উম্মতের জামিনদার।।

সূর্যের তাপে উম্মত হবে দুর্বল,
পিপাসিত হবে সকল,
পান করাইয়া কাওছারের জল,
পুলছিরাত করিও পার।।

উম্মতি উম্মতি বলে,
বুক ভাসাইয়া চোখের জলে,
সুপারিশ করবেন রাসূলে,
দরবারে দয়াল আল্লার ।।

উম্মতের মুক্তির তরে নবী,
আল্লার কাছে করবেন দাবি,
হেলাল উদ্দিন সদায় ভাবি,
পাইতে তোমারই দিদার।।


৭৪)
রাসূলে আকরাম,
তোমায় জানাই সালাম,
সাইয়্যিদিনা মাওলানা মোহাম্মদ।
উম্মতের লাগিয়া নবীর কত যে দরদ।।

তোমার প্রেমে হয়ে মশগুল,
জপে ঐ নাম সৃষ্টিকুল।
বৃক্ষ লতাপাতা ফুল,
সাগর নদী-নদ।।

সৃষ্টি তরাইতে ধরায়,
পাঠাইলেন আল্লাহ তোমায়।
থাকি যেন চরণ ছায়ায়,
তরিতে বিপদ।।

রাহমাতুলি­ল আল-আমিন,
ডাকি আমি দ্বীনহীন।
দেখা দাও কয় হেলাল উদ্দিন,
সেবি তোমার পদ।।  


 ৭৫)
মারহাবা মারহাবা ইয়া রাসূল আল্লাহ,
ঐ নাম সকলে করো গলের মালা।।

আউয়ালে আল্লায় সৃজন করে,
দোস্ত বলে ডাকলেন যারে।
উম্মত তরাইতে আখেরে,
ধরায় পাঠাইলা।।

আল্লার রাসূল আল আরাবি,
বিশ্বমানবের বিশ্বনবী।
ঘোর সংকটে যারে পাবি,
ডাকো নিরালা।।

আমার নবী বেহেস্তী ফুল,
ধরায় এলেন তরাইতে কুল।
হেলাল উদ্দিন হইল আকুল,
চাই চরণ ধুলা।।


৭৬)
আমার সালাম কইও গিয়া নবীজির রওজায়,
ভোরের হাওয়া যাও কি তুমি সোনার মদিনায়।।

কইও আমি মদিনার পাগল,
আরব সাগর পাড়ি দিতে নাই কোন সম্বল।
নূরের আলোয় করে ঝলমল,
দেখতে মনে চায়।।

কইও আমি বাঙ্গালী উম্মত,
সোনার চান্দের সোনার রওজা করতে জিয়ারত।
দেখতে দয়াল নবীর সুরত,
আশাতে দিন যায়।।

কই আমার নবীজির কাছে
হেলাল উদ্দিন চরণ ধুলার আশায় রয়েছে।
নূরী বদন যে দেখেছে,
সে ধন্য দুনিয়ায়।।


৭৭)
সোনার মদিনায়, ও কেউ লইয়া যাও আমায়,
ভক্তি ভাবে সালাম দিব নবীজির রওজায়।
ভক্তিভাবে চুমা দিব নবীজির রওজায়।।

রওজায় দাঁড়াইয়া বলব ইয়া রাসুলাল­
পাপী তাপী তুমি তরানেওয়ালা।
গায়ে মাখব নবীজির রওজার ধুলা,
পবিত্রের আশায়।।

রওজাতে হইয়া হাজির করব নিবেদন,
সাফায়াতের আশায় আমি করিব কান্দন।
আমি পাপী উম্মত এখন,
যাব কোথায়।।

মদিনায় যাইতে আমার মনে কত শখ,
নয়ন ভরিয়া দেখতে রওজা মোবারক।
হেলাল উদ্দিনের এই আশা পূরক
ডাকি বাংলা ভাষায়।।


৭৮)
দয়াল মুর্শিদ তুমি পার করো আমারে,
ভাঙ্গা মাস্ত্তল ছিঁড়া বাদাম প্রাণ কাঁপে সদায় ডরে।।

পাপে বোঝাই তরী আমার কেমনে ধরি পাড়ি,
এপার হইতে সেপার যাইতে যদি ডুবে মরি।
তোমার নাম ভরসা করি, ভাসাই তরি সাগরে।।

তোমার নাম স্মরণে কত তরী সাগর হইল পার,
তুমি যদি হও কান্ডারি ভয় নাই ঝড় জোয়ার।
পার করো জানি না সাঁতার, নিবেদন করজোড়ে।।

এই ভবের সাগরে কত রঙ্গের তরী আসে,
পাড়ি দেওয়া কঠিন কাঁদি সাগর পারে বসে।
হেলাল উদ্দিন দিবা শেষে, পড়েছি ঘোর আঁধারে।।


৭৯)
মুর্শিদেরই নাম লইয়া ভাঙ্গা তরী ভাসাইলাম,
আমি যদি যাই মরিয়া তোমারই হবে বদনাম।।

মুর্শিদ ও ভব সাগরের নাই কিনারা বল কোথায় যাই,
পথহারা পথিকের মত ঘুরিয়া বেড়াই।
কি করিব মোর উপায় নাই,
ভেবে দিশা হারাইলাম।

মুর্শিদ ও - হইয়া তুমি নায়ের মাঝি পথ দেখাও মোরে,
ভক্তির বাদাম নামের সারি গাইয়া যাই সে পারে।
কাতরে ডাকি তোমারে,
কেমনে পারে যাইতাম।।

মুর্শিদ ও- হেলাল উদ্দিন বলে ভবে কে আছে আমার,
হইলে আমি অপরাধী তবুও তোমার।  
নইলে আমার জীবন অসার,
আশাতে চেয়ে রইলাম।।



৮০)
সাবধানে চালাইও তরী,
ও মাঝি ভাই,
ডুবলে তরী হারাইবে
এই ভবের কামাই।।

চেয়ে দেখো আকাশ পানে,
ধরলে পাড়ি ঝড় তুফানে।
মুর্শিদ নাম রাখও স্মরণে,
বাইও কিনারা ভিড়াই।।

আসল থুইয়া নকল মালে,
তরী কেন বোঝাই করলে।
সোনার দামে পিতল কিনলে,
সোনার দাম পিতলে নাই।।

আকাশেতে নাইরে বেলা,
সঙ্গী নাই চলছো একেলা।
কত মাঝি পথ হারাইলা,
হেলাল উদ্দিন দেখতে পাই।।


৮১)
মরতে যখন হবে একদিন মরার আগে মরো,
সঠিক পথ ধরো।
লাইলাহা ইল্লাহ ইল্লাল্লাহ জিকির করো।।

মনরে- ভেবে দেখো চক্ষু মুজে অনিত্য দুনিয়ার মাঝে,
কয়দিনের মুসাফির সেজে কিসের বড়াই করো।  
অধীনে রয়েছো রিপুর, স্বাধীন হতে যাও মুর্শিদপুর,
কামিল পীরের বাক্যমধুর, যদি মানতে পারো।।

মনরে- কামনা বাসনা ছাড়ি, মুর্শিদের চরণ ধরি,
সাধন করে মানব তরী, হীরা মুক্তায় ভরো।
লাইলাহা ইল্লাল্লাহ সুরে, দমের বাঁশি বাজাও মনরে,
আশিক হইয়া যাও মাসুক পুরে, বিলাসিতা ছাড়ো।।

মনরে- এ দুনিয়ার মায়ায় ভুলে, মানব জীবন যায় বিফলে,
নামের মালা লইয়া গলে, মায়ার বাঁধন ছিঁড়ো।
হেলাল উদ্দিন মায়ায় বন্দী, পারঘাটায় বসিয়া কান্দি,
পাড়ি দিতে হবে নদী, অকুল ও পাথারো।।


৮২)
তুমি সাগরে তুমি পাহাড়ে, তুমি নগরে তুমি বন্দরে,
তুমি মানুষের অন্তরে।।

(কথায়) তুমি আকাশে তুমি পাতালে,
তুমি ফুলে তুমি ফলে,
তুমি জলে তুমি স্থলে,
তুমি কাছে তুমি দূরে।।

একবার পাইলে তোমারে, রাখতাম আদরও করে,
আমার হৃদয় বাসরে।
আমার জীবনও সাফল্য করে,
থাকতাম দুই চরণ ধরে।।

(কথায়) তুমি মক্কায় তুমি মদিনায়,
তুমি বাগদাদে হযরত বড়পীরের রওজায়,
তুমি আজমীরে হযরত শাহ্জালালের দরবারে,
তুমি আছ মাইজ ভান্ডারে।।

দয়া থাকলে অন্তরে, এসো আমারই ঘরে,
দেখবো দুই নয়ন ভরে।
ডাকি তোমায় বাবেবারে
কাঁদাইও না আমারে।।

(কথায়) তুমি কায়ায় তুমি মায়ায়,
তুমি আশায় তুমি ভরসায়,
তুমি বৃক্ষে তুমি লতায়,
তুমি আলোয় তুমি আঁধারে।।

তুমি যাইও না দূরে, রাখো তোমারই দ্বারে,
আছি বিষমও ফেরে।
হেলাল উদ্দিন ঘোর আঁধারে,
লও আমায় উদ্ধার করে।।


৮৩)
তোমার নামের বৈঠা মুর্শিদ তুলে দাও আমায়,
অকুলও দরিয়ায় পড়ে ডাকি গো তোমায়।।

ছিল আমার সুন্দর তরী,  
ছয় চুরাতে যুক্তি করি।
হইল আমার নায়ের দাঁড়ি।
ভবের দরিয়ায়।।

ছয় চুরা দেয় কুমন্ত্রণা,
তাদের ভাবি আপনজনা।
চোখ থাকিতে হইলাম কানা,
করি হায় রে হায়।

তাদের আশা পূরণ করি,  
নিঃস্ব করে গেলো ছাড়ি।
হেলাল উদ্দিনের ভাঙ্গা তরী,
লাগাও কিনারায়।।


৮৪)
অবহেলায় দিন কাটালে বিলাসিতায় দিয়া মন,
মুর্শিদ পদে মন সঁপিয়া করলে না সাধন।।

কাম ক্রোধ লোভ আদি,
এসব ছাড়তে পারো যদি,
বরজক ধ্যানে নিরবধি,
করোরে মন অন্বেষণ।।

লইলে মুর্শিদের স্বভাব,
দূর হবে তোর মনের কামভাব,
থাকিবে না কোনো অভাব,
হবে রত্ন উপার্জন।।

নিদানকালে ওরে মনা,
উপায় নাই আর মুর্শিদ বিনা,
হেলাল উদ্দিন হইল ফানা,
পাইতে মুর্শিদের চরণ।।


৮৫)
ও মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও,
পথহারা এক পথিক আমি আমায় সঙ্গে নাও।
মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও।।

মুর্শিদও- তুমি হও পথের দিশারী,
আমায় পথের সন্ধান দাও।
কোথায় যাবো সন্ধ্যাবেলা কিনারা লাগাও।।

মুর্শিদও- আইলাম আমি এ কোন দেশে,
চিনলাম না সে গাঁও।
বিনয় করি তোমার সঙ্গে আমায় লইয়া যাও।।

মুর্শিদও- তুমি ছাড়া নাই মোর গতি,
আমায় কোলে নাও।
হেলাল উদ্দিন দোহাই দিয়া ধরি তোমার পাও।।


৮৬)
অন্তিমকালে দয়াল মুর্শিদ তোমায় জেনো পাই,
যেদিন আমায় যেতে হবে ছেড়ে পুত্র কন্যা ভাই।।

বিদায় বেলা আত্মজ্ঞাতি,
কেউ হবে না সঙ্গের সাথী,
তাই তো কাঁদি দিবারাতি,
চোখের জলে বুক ভাসাই।।

ভবের লীলা সাঙ্গ করে,
যেতে হবে পরপারে,
মুর্শিদ তুমি দয়া করে,
আমায় নিও পথ দেখাই।।

মাটির ঘরে রেখে আমায়,
জন্মের মত দিবে বিদায়,
হেলাল উদ্দিন পাই যে তোমায়,
একেলা আমি ডরাই।।


৮৭)
দিন গেল রে,
হেলায় খেলায় দিন গেল,
ঘুমের ঘরে অচেতনে
ভুলাইয়া রাখিল।।

হেলা করে বসে রইলে
খেলায় মন মজিল,
আঁথি মেলে চেয়ে দেখো
        আঁধারে ঘিরিল।।

চুল পাকিল দাঁত নড়িল
যৌবন ভাটি দিল,
রঙ্গের দুনিয়া ছেড়ে
যাওয়ার সময় হইল।।

চেতন গুরুর সঙ্গ লইয়া
প্রেম বাজারে চল
দমে দমে লাইলাহা
ইল্লাল্লাহু বল।।

হঠাৎ কোনদিন আসবে শমন 
কয়দিন থাকবে বল,
হেলাল উদ্দিন কয় মনা ভাই
হিসাব করে চল।।


৮৮)
নেতা তুমি তিনশত ষাট আউলিয়ার,
তুমি আমাদের গর্ব বাবা তুমি আমাদের অহংকার।।

সুরমা নদীর উত্তর পাড়ে সিলেট শহরে,
মাজার শরীফে কত কবুতর উড়ে।
খেলছে কই মাগুর গজারে,
সাধ জাগে দেখার।।

কত মানুষ আসে মাজার করতে জিয়ারত,
মাজারে বসিয়া করেন কোরআন তেলাওয়াত।
জানি তুমি আল্লার রহমত
দোয়া চাই তোমার।।

জালাল বাবার চরণ ছোঁয়ায় সিলেট ভূমি ধন্য,
তসবি তলোয়ার পায়ের খড়ম আছে বাবার চিহ্ন।
হেলাল উদ্দিন করে মান্য,
তুমি অলি আল্লার ।।


৮৯)
দয়া করো জালাল বাবা আমারে,  
দয়াল জেনে আছি খাড়া কাঙ্গাল তোমার দরবারে।।

আছে ভান্ডার ভরা জালালী ধন,
পাইতে আশায় ঝরে নয়ন।
আমার হৃদের কালি করতে মোচন
জাগে সদায় অন্তরে।।

আমরা সবাই গৌরব করি,
বাবা তোমার নামটি ধরি।
সাজিয়া প্রেমও ভিখারী,
আসি তোমার মাজারে।।

হেলাল উদ্দিন কয় ভাবিয়া,
বিদায় করো ভিক্ষা দিয়া।
দয়াল নামের ধ্বনি দিয়া,
বলি বাবা কাতরে।।


৯০)
হাজারে হাজারে, জালাল বাবার মাজারে,
উড়ে জালালী কইতর, কি সুন্দর।
মাজার ছেঁড়ে যায় না, গেলে আসে রয় না,
ভক্ত হইয়া বাঁধল সুখের ঘর কি সুন্দর।।

পুকুর ভরা গজারে, কেউ খায় না ধরে,
ভেসে পানির উপরে, কত খেলা করে।
দেখে খেলা মানুষে, আনন্দ উল্লাসে,
কোলে লইয়া করতে চায় আদর।।

কই মাগুর কুয়াতে, সোনালী রং গায়েতে,
আসে কোথা হতে, কেউ জানে না রে।
ঝর্ণার পানি ঔষধি, খাইলে দূর হয় ব্যাধি,
সরল মনে হয় যদি কাতর।।

কত দেশি বিদেশী, জিয়ারতে আসি,
কাঁদে নিরলে বসি, বাবারই দরবারে।
ফয়েজ চাই বারবার, কেটে যাক আঁধার,
বলে হেলাল উদ্দিনের অন্তর।।


৯১)
শাহ্জালাল বাবা আমার আশা পূরাইও,
শাহ্জালাল বাবা আমায় দোয়া করিও।
জালালী ফয়েজ আমায় দান করিও।।

কত আশিক পাগল বেশে,
ডাকছে তোমায় পাওয়ার আশে।
তোমার ভক্তের নায়ে নিজে এসে,
কান্ডারী হইও।।

শ্রেষ্ঠ তুমি আল্লাহ  ওলী
পাই যে তোমার চরণ ধূলি।
মুছাইয়া মোর হৃদের কালি,
আশিক বানাইও।।

পাইলে বাবা তোমার দরশন,
সঁপে দিতাম এ দেহ মন।
হেলাল উদ্দিনের নিবেদন,
কবুল করিও।।


৯২)
গুরুর চরণে মন বিকাও, সাধনপুরে যাও,
গুরুর চরণে মন বিকাও।
হয়ে তুমি বাঁধনমুক্ত, মনকে করো শক্ত,
গুরু ভক্ত, হয়ে ধরো পাও।।

গুরুর চরণ আশ্রয়ে, অমূল্য বাক্য লয়ে,
মন বিকায়ে, নামের সারি গাঁও।
পালন করে গুরুর আদেশ, মুক্তপুরে করো প্রবেশ,
দুঃখ ক্লেশ হইবে উধাও।।

যে হয় গুরুর খাঁটি শিষ্য, কখনো সে হয় না নিঃস্ব,
ছেড়ে আলস্য, চৈতন্য জাগাও।
অলঙ্ঘনীয় গুরুর বাক্য, বিশ্বাসে ঠিক রাখো লক্ষ্য ,
হয়ে দক্ষ, মানব তরী বাও।।

গুরু নামের সাবান মেখে, ধৌত করো দেহটাকে,
মানববৃক্ষে, প্রেমের ফুল ফুটাও।
গুরুর প্রতি থাকলে ভক্তি, হেলাল উদ্দিন কয় পাবে মুক্তি,
সর্বশক্তি, সাধনায় বিনাও।।  


৯৩)
মোজরদে ইয়ামনি বাবা শাহ্জালাল পীর,
দেখাও নূরানী তসবীর।
আমি তোমার দয়ার কাঙ্গাল দরবারে হাজির।।

দিদার কামনায়,
ভক্ত হইয়া আসে মানুষ তোমারই দরগায়,  
বসে ডাকে নিরালায়।
চোখের জলে বুক ভেসে যায়, করিয়া জিকির।।

তুমি আশিকের পরাণ,
কে বুঝিতে পারে বাবা তোমার লীলার শান,
কত গাই জালালী গান।
তিনশ ষাট আউলিয়ার প্রধান, তুমি মহাবীর।।

করি নিবেদন,
স্বরূপে রূপ দেখতে তোমার মনে আকিঞ্জন,
বাবা চেরাগে রওশন।
হেলাল উদ্দিন তোমার কারণ, হয়েছি অধীর।।

৯৪)
সৃষ্টির সেরা মানুষ হইয়া কর্ম করি পশুর মত,
ধর্মে যাহা নয় স্বীকৃত।।

ধর্মের লেবাস গায়ে পরি,
নিজের স্বার্থ আদায় করি,
মানুষ হইয়া মানুষ মারি,
একে অন্যে পাখির মত।।

সুদ ঘুষ দুর্নীতি হারাম,  
হারাম খাইতে মিলে আরাম,
সত্য ছেড়ে গ্রহণ করলাম,
ধর্মের বিপরীতে যত।।

ইসলাম নয় গাড়ি ঘোড়া,
বিমান নয় দেবে উড়া,
ধর্ম ব্যবসায়ী যারা,
মানুষকে করে বিভ্রান্ত।।
 
ধর্মের পন্ডিত ব্যক্তি যারা,
একবাক্যে স্বীকার করবেন তারা,
নবীজির আদর্শ ছাড়া,
হয়েছি আজ বিপদগ্রস্ত।।

আমরা নবীর উম্মত আল্লার বান্দা,
ধর্মে নাই হিংসা নিন্দা,
হেলাল উদ্দিন থাকতে জিন্দা,
দেখব লীলা আরো কত।।



৯৫)
প্রাণ থাকিলে হয়রে প্রাণী মন থাকিলে মানুষ নয়,
ধর্মেকর্মে শালীনতায় সব মিলিয়ে মানুষ হয়।।

চুরি করা মিথ্যা বলা সকল ধর্মে মানা,
কলি যুগের পাপী মানুষ এসব ছাড়া বুঝে না।
সত্য কথা শুনতে চায় না,
অহরহ মিথ্যা কয়।।

টাকার লোভে খুন খারাপি করে নিরবধি,
দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে তাহা ভাবতো যদি।
চোখের জলে হইত নদী,  
থাকত সদায় মনে ভয়।।

মদ মাধুর্য নারী নিয়ে থাকে সদায় মজিয়া,
জন্মদাতা পিতামাতা যায়রে তারা ভুলিয়া।
অধর্মকে প্রাধান্য দিয়া,
নেশাতে ডুবিয়া রয়।।  

কুপথ ছেড়ে সুপথে ফিরে এসো হাতে হাত ধরি,
সঠিক সুন্দর পথে চলি করবো না মারামারি।
হেলাল উদ্দিন বিনয় করি,  
করো রে ভাব বিনিময়।।


৯৬)
সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে হাতে হাত মিলাই,
মানুষ মানুষের ভাই।
আজ বাদে কাল কি হবে কারো জানা নাই।।

মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জাতি জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক দিয়া,
কয়েক দিনের জন্য এই ভবে দিলেন পাঠাইয়া।
ভাল মন্দ যাচাই করিয়া,
কর্ম করে যাই।।

স্বার্থের লোভে অন্ধ হয়ে মানুষে মানুষ মারে,
মানব হত্যা মহাপাপ সব ধর্মে নিষেধ করে।
(তবে) কেন মানুষে মানুষ মারে,
দয়া মায়া নাই।।

করবো না আর ছিনতাই সন্ত্রাস সকলে করি শপথ,
মরণ কথা স্মরণ করে ভুলতে চাই না সত্যপথ।
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সুন্দর সুরত গড়লেন দয়াল সাঁই।।

হিংসা নিন্দা ছেড়ে দিয়া একে অন্যে করি মহববত,
মানুষের জন্য সুন্দর সৃষ্টি এই যে বিশ্বজগৎ।
শোভে শোভা শুভে না খৎ,
যে বুঝে তারে বুঝাই।।  

সৎ কাজের উপদেশ দেই,
অসৎ কাজে নিষেধ করি,
ন্যায় নীতির আদর্শ মেনে সুন্দর জীবন গড়ি।
করবো না আর মারামারি সবাই শান্তি চাই।।

ধর্ম জ্ঞাতি বিভেদ ভুলে গড়ে নেই মৈত্রি বন্ধন,
অসমতার বাঁধন ছিঁড়ে সবাই করি আলিঙ্গন।
হেলাল উদ্দিনের নিবেদন,
চাই না আর লড়াই।।


৯৭)
রাজাকারমুক্ত দেশ গড়তে সব, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম জেগেছে।।

একাত্তরের মত এবার,
বীর জনতা জাগলো বাংলার,
যুদ্ধ অপরাধীর বিচার,
চেয়ে আওয়াজ তুলেছে।।

রাজাকারদের ফাঁসি চাই,
বাংলায় তাদের অধিকার নাই,
ওরা দেশের শত্রু শয়তানের ভাই,
কত মা বাবাকে মেরেছে।।

যুদ্ধ অপরাধীর ফাঁসি,  
দেখতে চায় দেশবাসী,
ঘর ছাড়িয়া রাস্তায় আসি,
নারী পুরুষ বলতেছে।।

ওরা একাত্তরের নরপিচাশ,  
কত মা-বোনের করল সর্বনাশ,
গায়ে পরে ধর্মের লেবাস,
অধর্মের কাজ করেছে।।

এবার নাই আর বাঁচার উপায়,
পলাইয়া তোরা যাবে কোথায়,
হেলাল উদ্দিন বলে আল্লায়,
রাজাকারদের ধরেছে।।


৯৮)
মানুষ হইয়া মানুষ খোঁজো পাবে মনমানুষের দেখা,
মানুষ অমানুষের কাছে যায় না থাকে একা একা।।

শুদ্ধ মানুষ হতে চাইলে শুদ্ধ পথে চলে আও
অশুদ্ধ পথকে তুমি চিরতরে ভুলে যাও।
নাম ধরিয়া বাঁশি বাজাও,
যে নামে মধুমাখা।।  

যে ফুলে মধু হয় না সে ফুলে যায় না ভ্রমর,
মধুর লোভে উড়ে ভ্রমর কত দেশ দেশান্তর।
পায় যদি সে মধুর খবর,
চলে আসবে লাগবে না ডাকা।।

মনের মানুষ পাইতে চাইলে পবিত্র করো দেহ মন,
ষড় রিপুকে আয়ত্বে এনে নিরলে করো সাধন।
নিজকে নিজে করো শাসন,
হেলাল উদ্দিন কয় ওরে বোকা।।


৯৯)
যে সুর করেছে দান, গাওরে তাহার গান,
বিকাইয়া দেহ মন প্রাণ কাছে ডেকে আন।।

সুরে ডাকো বিনয় করে,
তাল  মাত্রা লয় ঠিক করে,
ধ্যানে রাখো মন ঘোড়ারে,
নাম ধরিয়া মারো টান।।

আবেগ আর মাধুর্য ভরে,
মন মজাইয়া ডাকো তারে,
ভাবের দেশে প্রবেশ করে,
গাইলে পাবে প্রতিদান।।

গানের ভিতর তার সৌন্দর্য,
প্রকাশ করো কারুকার্য,
শুনে সবাই হউক আশ্চর্য,
হেলাল উদ্দিন কয় প্রভুর শান।।


১০০)
বিদেশ এসে দেশের কথা ভুলেছ,
চিরদিন থাকবে বিদেশ মনে মনে ভেবেছ।।

দেশ ছাড়িয়া বিদেশ এলে কামাই করিতে
নেশায় বিভোর হইয়া রইলে মায়ার জগতে,
আপন দেশে হবে যেতে,
তা কি মনে রেখেছ।।

বিদেশী নাম লাগাইলে দেশে যাওয়ার টাকা নাই,
কয়দিনের জন্য এলে হিসেব করে দেখো চাই।
থাকবে তুমি কয়দিন লুকাই,
আসামী সেজেছ।।

ওয়ারেন্ট নিয়া আসবে পুলিশ করিবে গ্রেফতার,
দেশে নিয়ে রাখবে জেলে করবে অত্যাচার।
হেলাল উদ্দিন হও হুঁশিয়ার,
কার আশায় বসে আছ।।




১০১)
মরণ কথা স্মরণ করো রে,
ও মন মরতে হবে কেউ রবে না,
কত আইল কত গেল দেখেও তোর ভুল ভাঙ্গল না।।

কার কোনদিন হবে মরণ,
কেউ জানি না আসবে শমন,
সব ছাড়িয়া করবে গমন,
রাখবে তোমায় নাই বিছানা।।

সময় থাকতে হও হুঁশিয়ার,
মরণ আছে সাথে তোমার,
যারে ধরে ছাড়ে না আর,
দয়ামায়া নাই করুণা।।

ভবে কেহ নয়রে স্বাধীন,
সবাই মরতে হবে একদিন,
ভাবিয়া কয় হেলাল উদ্দিন,
দুনিয়া মুসাফির খানা।।



১০২)
ভাবের খেলা খেলতে যদি চাও,
গুরু ধরে গুরুর কাছে খেলা শিখতে যাও।
না জানিয়া খেলতে চাইলে ভাঙ্গিবে তোর হাত পাও।।

গুরুর কাছে গিয়ে প্রথমে চরণে দাও ভক্তি,
গুরুর কৃপায় শিখতে পারবে খেলার পদ্ধতি।
গুরু যদি হয় তোর সাথী,
পাবে রে মন খেলার বাও।।

গুরুর শিক্ষা ছাড়া খেলার মাঠে যাইও না,
খেলার বিষয় বড় কঠিন করতে হয় সাধনা।
সাধন বিনা কিছু হয় না,
নিজকে নিজে শুধাও।।  

গুরুর আদেশ না পাইয়া যে খেলায় সে বোকা,
তার খেলা দেখে না লোকে মাঠ হয়ে যায় ফাঁকা।
হেলাল উদ্দিন কয় একা
বসে খেলা দেখে যাও।।



১০৩)
আমরা কৃষক মজুর চাষী,
এই দেশকে ভালোবাসি।
কৃষি কাজ করিব সবাই মাঠে দিবানিশি।।

অনাবাদি যত জমি করব মোরা চাষ,
ধান আমাদের প্রধান খাদ্য ফলাই বারমাস।
বইবে দেশে সুখের বাতাস,
ফুটবে মুখে হাসি।।

উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করি,
চলো সবাই মাঠে চলো কর না আর দেরি।
শক্ত হাতে লাঙ্গল ধরি,
থাকব না আর বসি।।

ধান, আলু, বাদাম, গম, শাক-সবজি যত,
দেশের প্রয়োজনে সবাই ফলাই অবিরত।
হেলাল উদ্দিন বলে হইত,
সবার মন খুশি।।



১০৪)
পরিশ্রমে সোনার দেশে ফলাই সোনা,
কৃষক, মজুর, চাষী, জেলে,
চাষ করিলে সবাই মিলে,
খাদ্যের অভাব হবে না।।

ধান প্রধান খাদ্য ধান ছাড়া উপায় নাই,
মাটির সাথে সবাই মিলে করি যে লড়াই।
চাষ করিতে ও চাষী ভাই,
মাঠে চলো না।।

ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, শিম, মূলা,
লালশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, পটল, করলা।
আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু ফলাও না।।

গম, পাট, সরিষা, আলু, আনারস, কালাই,
লেবু, কমলা, মরিচ, ডাল, বাদাম আর রামাই।
জাম্বুরা, তাল, পেঁপে, জলপাই, ডালিম, বেদানা।।  

ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, লাউ, পিঁয়াজ, আদা, রসুন,
তরকারিতে ধনিয়া পাতায় স্বাদ বাড়ে দ্বিগুণ।
হেলাল উদ্দিন ফলাই বেগুন বসে থাকব না।



১০৫)
পতিত জমি আবাদ করি মৌসুমী ফসল ফলাই,
চাষ করিয়া উৎপাদন বাড়াই।
ও কৃষক ভাই,
ও চাষী ভাই।।

পিঁয়াজ, মরিচ, বাদাম, ধান,
গম, আলু, সরিষা ফলান।
মূলা, গাজর, লাউ, শিম, লাগান,
কাকরোল, বেগুন, রামাই।।

মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, পুঁইশাক,
করলা, টমেটো, পেঁপে, লালশাক।
চা, আনারস, কলা, আখ,
ডাল, পাট, বুট, কালাই।।

কাজ করিব সবাই মিলে,
কৃষক মজুর তাঁতি জেলে।
মাছ চাষ করব জলে,
খালি জায়গায় গাছ লাগাই।।

হাঁস মুরগি গরু ছাগল,
কৃষক মজুরের সম্বল।
কাজ করিলে জীবন সফল,
ভাবিয়া দেখো সবাই।।

কৃষি কাজ সবাই করি,
স্বনির্ভর দেশ গড়ি।
হেলাল উদ্দিন কয় লাঙ্গল ধরি,
এ ছাড়া আর উপায় নাই।।



১০৬)
কৃষক মজুর চাষী ভাই,
চাষ করিয়া উৎপাদন বাড়াই।
বাড়ির আশেপাশে উঁচু জায়গায়,
শাক-সবজি ফলাই।।

সকল জমি চাষ করিয়া,
ধান সরিষা গম লাগাইয়া।
সময় মত সেচ দিয়া,
আগাছা কেটে সার ছিটাই ।।

গরু ছাগল মুরগি হাঁস,
পালন করি বারোমাস।
জলে মাছ করব চাষ,
পুকুর পাড়ে গাছ লাগাই।।

কাজ করো ভাই কৃষক চাষী,
ফুটবে সবার মুখে হাসি।
থাকবো না আর ঘরে বসি,
হেলাল উদ্দিন বলে যাই।।



১০৭)
সু-স্বাস্থ্যের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার,
স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সবাই করি ব্যবহার।।

স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন,
সবার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
শুনেন আমার ভাই বন্ধুগণ,
মন দিয়া শুনেন এবার।।

মলত্যাগ করলে খোলা জায়গায়,
পরিবেশ দূষিত হয়ে যায়।
চতুর্দিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়,
উপায় নাই সুস্থ থাকার।।

ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়,
পোলিও চর্মরোগ হয়।
এসব থেকে বাঁচতে নিশ্চয়,
প্রয়োজন পরিচ্ছন্নতার।।

স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা,
ব্যবহার করলে রোগ ছড়াবে না।
পরিবেশ দূষিত হবে না,
(বাড়ির) আশপাশ রাখলে পরিষ্কার।।

গর্ত করে রিং স্লাভ বসিয়ে,
স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন বানিয়ে।
হেলাল উদ্দিন কয় বেড়া দিয়ে,
পায়খানা করি তৈয়ার।।



১০৮)
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শেখ মুজিবুর রহমান,
যার শোকে আকাশ বাতাস কাঁদে বাঙ্গালীর প্রাণ।
ভুলব না কোনদিন জাতির পিতার অবদান,
ভুলব না কোনদিন বঙ্গবন্ধুর অবদান।।

আমাদের এই দেশটা ছিলো পূর্ব পাকিস্তান,
সুজলা সুফলা ছিল গোলা ভরাধান।
কৃষকেরা পরিশ্রমে ফসল ফলাইতো,
পাকিস্তানী শোষকেরা লুট করে সব নিতো।
ছলেবলে এই দেশটাকে করিল শ্মশান।।

এইভাবে শোষণ করল তেইশটি বছর,
বাঙ্গালী জাতি হয়ে উঠলো প্রতিবাদমুখর।
বাঙ্গালীর দুঃখে কাঁদে শেখ মুজিবের মন,
স্বাধিকার আদায়ে গড়ে তুললেন আন্দোলন।
মাতৃভূমি মুক্ত করতে করলেন আহবান।।

ছেষট্টিতে ছয় দফা দাবি করলেন ঘোষণা,
স্বাধীনতার সূর্যের আলো দেখলো সবজনা।
ঊনসত্তরে ছয়দফার জন্য হল গণঅভ্যুত্থান,
সত্তরের নির্বাচনে হল যার প্রমাণ।
বাংলার মানুষ শেখ মুজিবকে দিল হৃদয়ে স্থান।।

একাত্তরের পঁচিশ মার্চ পাক হানাদার,
নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর চালায় অত্যাচার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দিলেন মুক্তির ডাক,
মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে মানুষ গেল লাখে লাখ।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে মানুষ জান করল কুরবান।।



১০৯)
স্বাধীন হল দেশ মানুষ সুখে দিন কাটায়,
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে মুজিবের দিন যায়।
দেশ বিদেশী বেঈমানেরা কু-সন্ধি করিল,
শেখ মুজিবকে স্ববংশে হত্যা করতে চাইল।
গোপন ষড়যন্ত্র করে ডালিম নাফরমান।।

পঁচাত্তরের পনের আগস্ট রাত শেষপ্রহরে,
বঙ্গবন্ধু শহীদ হইলেন সপরিবারে।
বঙ্গবন্ধুর শোককে শক্তিতে পরিণত করি,
হেলাল উদ্দিন বলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ি।
দেশ গড়ার কাজে মোদের চলবে অভিযান।।  


১১০)
বার্ড ফ্লু নামে দেশে একটি রোগ আসিল ভাই,
ঐ রোগ থেকে বাঁচতে হবে সবারে জানাই।।

অতিথি পাখির আগমনে,
বার্ড ফ্লু ছড়ায় সবাই জানে।
থাকলে সবাই সচেতনে,
ভয়ের কোন কারণ নাই।।

হাঁস মুরগি মানুষের গায়,
ছোঁয়াচে রোগ বার্ড ফ্লু ছড়ায়।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায়,
সর্তক থাকি সবাই।।

হাঁস মুরগি আলাদা ঘরে,  
রাখবেন সদায় যত্ন করে।
বার্ড ফ্লু রোগ থাকবে দূরে,
হেলাল উদ্দিন বলে যাই।।



১১১)
আমরা দেশবাসীরে ঈদর শুভেচ্ছা জানাই,
কৃষক চাষী ভাইরে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।
ধনী গরিব হকলর ঘরো খুশির সীমা নাই।।

অনুষ্ঠান হুনরা বইয়া যত শ্রোতা ভাই,
সবাইরে আনন্দ দিতে জারি গান হুনাই।।

নয়া কাপড় পিন্দি নমাজ পড়তে ঈদগায় যাই,
ধনী গরিব নাই ভেদাভেদ বুকে বুক মিলাই।।

রোযা রাখি কাম করছইন কৃষক চাষী ভাই,
কষ্টর ফসল দিবা আল্লায় কোন চিন্তা নাই।।

খুশির শেষে লাঙ্গল লইয়া চলো মাঠো যাই,
চাষ করিয়া আমরা হকলে ফল ফসল বাড়াই।।

হেলাল উদ্দিন গানর সুরে সবরে কইয়া যাই,
সবুজ মাঠো সোনার ফসল কাম করি ফলাই।।  



১১২)
শোনেন দেশের জনগণ শোনেন দিয়া মন,
জন্ম নিয়ন্ত্রণের কথা করে যাই বর্ণন।।

অধিক জনসংখ্যায় ভাইরে উন্নতি হয় ব্যাহত,
তাই তো দেশে খাদ্য ঘাটতি বাড়ছে বেকারত্ব।
মানসম্মত শিক্ষার বিকাশ হয় না ততো দ্রুত,
অপুষ্টি আর রোগের কথা বলব আমি কত।
সময় থাকতে করতে হবে জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ।।

জন বিস্ফোরণের জোয়ার বন্ধ করতে হবে,
পরিকল্পিত উপায়ে জন্মহার রোধ করিব সবে।
পরিবার পরিকল্পনায় দেশে সুফল আসবে,
মানব সম্পদ গড়ে তুলি উপযুক্তভাবে।
দুটি সন্তান হইলে পরে সুখী সুন্দর হয় জীবন।।

পরিবার হইলে বড় দুর্গতি হয় সীমাহীন,
দিনে দিনে জমি কমে বাড়ছে ভূমিহীন।
অর্ধাহারে অনাহারে কাটে তাদের দিন,
ছোট পরিবার গড়িলে আসিবে সুদিন।
অভাবে হয় স্বভাব নষ্ট ভেবে দেখেন বন্ধুগণ।।

অবহেলায় গেলো বেলা আর বিলম্ব নয়,
জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার এখনই সময়।
গ্রহণ করলে সঠিক নীতি হবে দেশের উন্নতি,
দক্ষ মানব সম্পদ গড়লে থাকবে না দুর্গতি।
হেলাল উদ্দিন সবার কাছে করিতেছি নিবেদন।।


১১৩)
ভাগ্যের পরিবর্তন করতে শ্রমের বিকল্প নাই,
বেকারত্ব দূর করিতে পরিশ্রম করো সবাই।।

আন্দোলন করে শ্রমিকরা আমেরিকার শিকাগোতে,
১৮ ঘন্টার পরিবর্তে ৮ ঘন্টা শ্রমের দাবিতে।
সেই আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দিলো অনেক শ্রমিক ভাই।।

১লা মে শ্রমিক ভাইদের আন্দোলনের পরিশেষে,
৮ ঘন্ট কাজ করবে শ্রমিক প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বে।
অধিকার আদায় করিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াই।।

পরিশ্রমে ধন আনে আরো আনে সুখ,
শ্রমের প্রতি কেউ কোন দিন হইও না বিমুখ।
কোন কাজই নয়রে ছোট সকল কাজের সম্মান চাই।।

পরিশ্রম করে শ্রমিক মাথার ঘাম ফেলে পায়ে,
তাহার ঋণ শোধ করো সবে ন্যায্য পারিশ্রমিক দিয়ে
হেলাল উদ্দিন শ্রমিকদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।।



১১৪)
বাংলা আমার জন্মভূমি বাংলা আমার দেশ,
বাংলা আমার মাতৃভাষা গর্বের নাইরে শেষ।।

বাংলা ভাষায় কথা বলে কতই না সুখ পাই,
বাংলার ছবি আঁকি মনের মাধুরী মিশাই।
এই ভাষাতে প্রেম আবেগের ঘটাইরে উন্মেষ।।

জন্মভূমি ছাড়া সুখের পরশ মিলে না,
জননী আর জন্মভূমির হয় না তুলনা।
বাংলা মায়ের আঁচল তলে পাই কত আয়েশ।।

প্রাণ জুড়ানো মন ভুলানো রূপ হেরে নয়ন,
এমন দেশে জন্ম নিয়ে ধন্য এ জীবন।
হেলাল উদ্দিন ভালোবাসি লাল সবুজের দেশ।।



১১৫)
বৈশাখ আইলো রে আইলো,
খুশির জোয়ার মনে বইল।
নতুনেরই আহবানে সবাই মেতে উঠলো।।

পুরাতনকে দাওরে বিদায়,
জেগে উঠো নবীনের ছোঁয়ায়।
দুঃখ কষ্ট ব্যথা ভুলে যাওয়ার সময় হইল।।

(পরে) লাল পাড়েরই সাদা শাড়ি,
মেলায় যায়রে সারি সারি।
পান্তা ভাত আর ইলিশ ভাজা খাওয়ার ধুম পড়লো।।

গ্রামবাংলারই ঐতিহ্যের মিল,
মাটির তৈরী হাড়ি পাতিল।
মুড়ি মুরকি, কুলা ডালা সবাই মিলে কিনলো।।

কি আনন্দ মেলার মাঝে,
ঢাক ঢোল একতারা বাজে।
হেলাল উদ্দিন মনানন্দে বৈশাখ বরণ করলো।।



১১৬)
এলোরে এলোরে নববর্ষ এলোরে,
নতুন বার্তা নিয়ে নতুন বৈশাখ এলোরে।।

অতীতের সুখ দুঃখ ভুলে গিয়ে,
নতুনের আহবানে সাড়া দিয়ে।
নতুন সুরে যাব গেয়ে মন আনন্দেরে।।

নতুনকে সবাই করিতে গ্রহণ,
চতুর্দিকে বৈশাখী মেলার আয়োজন।
নতুন সাজে সাজিয়ে মন নতুন ভাবিরে।।

করেছেন বৈশাখী গানের আয়োজন,
সবাইকে জানাই অভিনন্দন।
ধন্য হউক সবার জীবন কয় হেলাল উদ্দিন রে।।



১১৭)
ভূমিতে পড়িয়া কান্দে জনম দুঃখী মায়,
নিমাই আয়রে ফিরে আয়।
মা বলিয়া ডাকরে নিমাই আয়রে ফিরে আয়।।

যাদু বাছা তোর কারণে,
জ্বলে আগুন আমার মনে।
কফিন পরে ঘুরতে বনে,
কে তরে শিখায়।।

সাধ করে করাইলাম বিয়া,
ঘরে বধু বিষ্ণুপ্রিয়া।
ছেড়ে গেলে কি দোষ পাইয়া,
কাঁদে সর্বদায়।।

এই কিরে তোর ধর্মের রীতি,
ছেড়ে গেলে জীবন সাথী।
পতিহারা হইয়া সতী,
করে হায়রে হায়।।

হেলাল উদ্দিন কয় শচীরানী,
কেঁদে হইলো পাগলিনী।
তুই যে মায়ের নয়নমণি,
দেখতে মনে চায়।।


১১৮)
জনমদুঃখী মাকে ছেড়ে সন্ন্যাসেতে যায়রে নিমাই,
মা বলে আর কে ডাকিবে তুই বিনে আমার কেহ নাই।।

আয় ফিরে যাদু বাছা ধন,
মা জানে সন্তানের বেদন।
গর্ভে তোরে করে ধারণ,
পুত্ররূপে পেয়েছি তাই।।

বিষ্ণুপ্রিয়া কুলবধূ,
তোর কারণে কাঁদে শুধু।
কে তোরে করিয়া যাদু,
দিয়েছে ডোরকফিন পরাই।।

নামাবলী লইয়া গলে,
ভোগ বিলাস বিসর্জন দিলে।
ভেবে হেলাল উদ্দিন বলে,
কি সুখ পাইলে মাকে কাঁদাই।



১১৯) 
পুত্র শোকে মায়ের বুকে,
কত ব্যথা দুঃখ জানি।
আর কেঁদো না শচীরানী।।

কলির যুগের জীব তরাইতে,
গৌরাঙ্গ এলেন ধরাতে।
সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসেতে,
গেলো নিমাই আর আসেনি।।

ডোরকফিনে ঢেকে অঙ্গ,
নিমাই নিলো ভক্তের সঙ্গ।
ভক্তে পাইয়া শ্রী গৌরাঙ্গ,
গায় হরি নামের ধ্বনি।।

তোমার ছেলে নয় সামান্য,
ভক্তের কাছে মহামান্য।
হেলাল উদ্দিন কয় কি জন্য,
ভাবিতেছ দিন রজনী।।



১২০)
স্বদেশে যাইতে হবে কয় দিন থাকবে বিদেশে,
ভেবে দেখ ও পাগল মন নিরলে বসে।।

যৌবনকালে ছিলে তুমি কত যে সুন্দর,
এখন চুল পাকিলো দাঁত নড়িলো আয়ু কমছে তোর।
আগের বল নাই এখন দুর্বল কাতর,
কেহ নাই তোমার পাশে।।

গায়ে যখন ছিল বল করেছে কত অন্যায়,
একবারও কি ভেবে ছিলে বার্ধক্যে পাবে তোমায়।
এখন ঔষধ খাইলে রোগ বেড়ে যায়,
কষ্ট হয় শ্বাস-প্রশ্বাসে।।

যারা ছিলো তোমার সঙ্গী আজ তারা কোথায় গেল,
তোমারে একেলা থুইয়া তারা সবাই পালাইলো।
হেলাল উদ্দিন কি করি বল,
চোখের জলে বুক ভাসে।।



১২১)
তুমি আইলায় না, আইলায় না,
আমারে আইয়া দেখলায় না।
কিলা আছি আমি জানি কোন্তা ভালা লাগে না।।

বিদেশ যাইতে কইয়া গেলায়,
দুই এক বছর বাদে আইবায়।
আইয়া মরে লগে নিবায়
একলা থুইয়া যাইতায় না।।

আমার এক ব্যবস্থা করি,
আইবায় আবার টিকেট করি।
আরও আনবায় কাতান শাড়ী,
গলার দুই ভরি সোনা।।

নিলায় না মর খবর বার্তা,
বিদেশ গিয়া অইলায় কিতা।
কেউনি খাওয়াইল কোন্তা,
করলনি যাদু টোনা।।

তোমারে যদি পাইতাম কাছে,
কত কথা কইবার আছে।
হেলাল উদ্দিনের দিন কিলা গেছে,
কইলে বিশ্বাস করতায় না।



১২২)
আমার জানের জান সোনাবানে কথা হুনে না,
কিতার লাগি ইতা করে বুঝাইলেও বুঝে না।।

যখন যেতার দরকার লাগে,
আনিয়া দেই কইবার আগে।
তবুও তাই থাকে রাগে,
মাতাইলেও মাতে না।।

মায়া করিয়া কই না কোন্তা,
এর লাগিয়া করের ইতা।
লম্বা করি তইছে থোতা,
কেউররেউ ডরায় না।।

মাতিনা ইজ্জতের ডরে,
যেথা মনে চায় ওতা করে।
কিলা থাকি ধৈর্য ধরে,
চিন্তায় ভালালাগে না।।

মাতে কথায় বুঝা গেছে,
সোনাবান মর পাগল ওইছে।
হেলাল উদ্দিন কয় ভূতে ধরছে,
তাবিজে কাম আইত না।।



১২৩)

গাইট গাটুরী বান্ধ তাড়াতাড়ি,
ওলো ও নাইওরি।
গাইট গাটুরী বান্ধ তাড়াতাড়ি।।

আগে পিছে পড়িতেছে পাগলা ঘন্টির বাড়ি,
সীমান্ত এলাকায় খাড়া পুলিশ সারি সারি।।

দুধের মাঝে পানি দিয়া করলে দোকানদারি,
সতী কি অসতী আজি যাইবে ধরা পড়ি।।

কার বা জায়গা কার বা জমি করলে বাহাদুরী,
চৈতন্য গোসাই রয়েছে অচৈতন্যের বাড়ি।।

বেভুলে মজিয়া রইলে কার বা আশা করি,
হেলাল উদ্দিন বলে একদিন যাবে সবি ছাড়ি।।





১২৪)
এরে হুনো ইতা করি সংসার ছলত নায়,
মানুষ যেলা ছলইন ওলা ছল কোন্তা কইতাম নায়।।

তুমি যেতা কররায় ইতা,
মাইনুষে হুনলে কইবা কিতা।
বুঝাইলে বুঝো না কোন্তা,
তোমারেদি অইত নায়।।

কথায় কথায় তর্ক করে,
শরম ভরম নাই একবারে।
আছতে কইলে মাতে জোরে,
আমার বায়দি চৌউখ রাঙ্গায়।।

ইতা করি ছলি কিলা,
মনে হয় কার পাইছে ছালা।
হেলাল উদ্দিন লইমু গলা,
পাও ধরলেও মানতাম নায়।।


১২৫)
মায়ার দুনিয়ায় মায়া লাগাইছে,
মায়া রানী মায়া করি মায়ার ডোরে বান্ধিছে।।

মায়া রানীর মোহ মায়ায়,
ভুলাইয়া রাখিল আমায়।
সময় বুঝে হাসায় কাঁদায়,
তার মায়ায় যে মজিছে।।

মায়া রানীর মায়ার ফান্দে,
মায়ায় বন্দী মন কাঁন্দে।
চোখের জলে নিরানন্দে,
কেঁদে বুক ভাসাইতেছে।।

মায়া রানীর হইয়া অধীন,
রং তামাশায় কাটাইলাম দিন।
মায়ায় মজি হেলাল উদ্দিন,
কাম সাগরে ডুব দিছে।।


১২৬)
ওগো ভেলকির মা,
আর কতদিন করবায় ভেলকিবাজি।
যার লাগিয়া ভেলকি করলায় সে হইছেনি রাজি।।

ভেলকিতে মন মজাইয়া কিতা করলায় রুজি,
হিসাব করে দেখো তোমার কত আছে পুঁজি।।

এখনো সময় আছে যদি আমার কথায় হও রাজি,
তোমার নায়ে তোল একজন ভালা দেখি মাঝি।।

ভেলকি দেখাই দেখাই সময় কাটাইলায় আন্দাজী,
হেলাল উদ্দিন কয় বসে আছ কার লাগিয়া সাজি।।



১২৭) 
সারাদিনে বাড়িত আইলাম আইয়া দেখি বউ ঘর নায়,
ডাকলে কয় ওইনু আমি এবলা আইতাম পারতাম নায়।।

দেখরায়নি তাইর সাহস কত,
পেঠো লাগছে ভাত দিতো।
পিঠিত আইজ গলা খাইত,
ইতা করে কার ছালায়।।

আইত যদি ডাকর লগে,
মাতাইতাম আদর সোহাগে।
দেখতে বড় সুন্দর লাগে,
মাতে কথায় ভালা নায়।।

বিদায় দিমু তিন কথা কইয়া,
দেখি থাকে কার ঘরো গিয়া।
হেলাল উদ্দিন তাইরে লইয়া,
মান ইজ্জত আর বাঁচত নায়।।  



১২৮)
লন্ডন গিয়া নাম লাগাইবায় লন্ডনী,
মাঝে মাঝে চিঠি দিয়া আমরার খবর আর নিবায়নি।।

লন্ডনের বাতাস লাগলে গায়,
দেশের কথা ভুলি যাইবায়।
কত মায়ার মানুষ পাইবায়,
ইশারায় কইলাম বুচ্ছনি।।

লন্ডনর বাজার বড় গরম,
বেপর্দায় চলা নাই হায়া শরম।
ধার্মিক মানুষ মিলে খুব কম,
আনন্দে কাটায় দিন রজনী।।

যাও তোমারে দিলাম বিদায়,
চিঠি দিও কোনদিন আইবায়।
হেলাল উদ্দিন রে মনে রাখবায়,
তোমার আপন ভাই জানি।।

১২৯)
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু নাই মরণের ডর,
মানুষ আছে রে খবর।
আজরাইল আসিয়া যেদিন ঘাড়ে ধরবে তর।।

ন্যায় অন্যায় হালাল হারাম নাই ভেদাভেদ তর,
পাইলে যাহা খাইলে তাহা সারা জীবন ভর।।

লাম্বা কুর্তা লাম্বা দাড়ি টুপি কি সুন্দর,
ধনের লোভে বন্দ গিয়া আইল ঠেলি পরর।।

টাকা দেখলে হাইজ্যাক করি মারি কত চড়,
বাঘে মানে আল­ার দোহাই মানুষের নাই ডর।।

তসবি ঘুরাই মানুষ দেখাই ঠিক নাই মর অন্তর,
এসব দেখে হেলাল উদ্দিন কাঁপে তর তর।।




১৩০)
জবানা বড় খারাপ দয়া মায়া নাই,
আমি শুনলে লজ্জা পাই।
মারামারি কাটাকাটি ভাইয়ে মারে ভাই।।

ভাইরে ভাই- মা বাবায় আশা নিয়া ছেলে দিলা বিয়া,
সুখের ঘরে আগুন দিল নতুন বউ আসিয়া।
বউয়ের ছালা পাইয়া ছেলে মা বাপরে কান্দাই,
বউয়ের কথায় উঠা বসা আদরের জামাই।।

ভাইরে ভাই- আদরের বউ সোহাগিনীর পাইয়া আদর,
মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই হইল পর।
বউয়ে কয় প্রাণের স্বামী তোমারে জানাই,
দেওর ননদ হউর হড়ির আমার দরকার নাই।।

ভাইরে-ভাই-বউয়ের কথায় রাজি হইয়া করল একি ভুল,
কয়দিন পরে ভাইর সাথে ভাইর লাগল গন্ডগোল।
নারীর কারণে পর হইল আপন ভাই,
হেলাল উদ্দিন বলে আমি এমন বউ না চাই।।



১৩১)
তোমার লগে আমার ছলা সম্ভব নায়,
তুমি যেলা ছলো ইলা আমি ছলতাম পারতামনায়।।

ভাল মানুষ ওয়া যায় না ভালা কাপড় পিন্দিলে,
মাত কথায় বংশের পরিচয় গাছের পরিচয় ফলে।
সংগুনে লোয়া ভাসে জলে,
ময়লা দইলে যাইত নায়।।

মান ইজ্জত বাঁচে না যদি তোমার লগে চলিয়া,
কিলা আমি মুখ দেখাইমু তারার কাছে গিয়া।।
যারা মরে কইত ডাকিয়া,
ইগু মানুষ ভালা নায়।।

কতদিন কইলাম বুঝাইয়া মাইনষে যেলা ভালা কইন,
ভালা মাইনষর লগে চললে ভালা মাত কথা হিকইন।
হেলাল উদ্দিন কয় সবে দেখইন,
সাধুর নিশান চুরের নায়।।



১৩২)
বিকালে আসবে বলে, গেলে সকালে,
ফিরে না এলে।
কেন আমায় অপেক্ষায় রাখিলে।।

দিন গেল মাস গেল বৎসর গেল চলে,
আশা দিয়া কেন আমায় নিরাশ করিলে।।

গাঁথিয়া রেখেছি মালা দিব কার গলে,
মালা হাতে লইয়া আমি ভাসি নয়ন জলে।।

বিছানা সাজাইয়া রাখলাম আগর চন্দন ফুলে,
সাজসজ্জা সবি আমার গেল বিফলে।।

আমারে ভুলিয়া তুমি কারে ভালোবাসলে,
হেলাল উদ্দিন বলে তোমার মায়া নাই কি দিলে।।



১৩৩)
আমার ভাইর বউ ভাবি বড় রাঙ্গা,
বরই গাছে ধরছে বরই টেংগা।।

বারো মাইয়া বরই গাছে,
অত সুন্দর বরই ধরছে।
(ভাইয়ে) দিন রাইত একলা খাইতেছে,
তাই দেখি ডাল ভাঙ্গা।।

বরই গাছো ঝারা দিলে,
সাদা রঙের বরই মিলে।
ভাই ভাবিয়ে কলে খলে,
ভরিয়া থইছইন চোঙ্গা।।

বরইর গাছটা ভাইর ঘাটো,
পারো যদি গাছো উঠো।
হেলাল উদ্দিন কয় বাটো,
নইলে লাগবো বেঙ্গা।।



১৩৪)
একলা থইয়া যাইতায় গিয়া অতা তোমার বিচারনি,
কও হুনি।
গেলে তুমি আর আইবায়নি।।

কিতার লাগি যাইতায় গিয়া ছাড়িয়া ঘরখানি,
থাখলায় খাইলায় আমার ঘরো পাউরি লাইছনি।।

যাইতে যদি চাও তোমারে রাখতাম পারমুনি,
কও আমারে আমি তোমায় কোন্তা কইছিনি,

তোমারে খাওয়াইলাম কুরমা পোলাও বিরানী,
আর কিতা চাও তুমি আমারে কইবায়নি।।  

তোমারে ছাড়িয়া কিলা কাটাইমু রজনী,
হেলাল উদ্দিনরে তোমার লগে নিবায়নি।।



১৩৫)
একি হইলো, হইলো গো,
আমায় ছেড়ে বন্ধু কই গেল।
ভুলিতে পারি না তারে কেন সে ভুলিল।।

হাতে হাত রাখিয়া বন্ধে প্রতিজ্ঞা করিল,
ফিরে আসবে বলে আমায় আশাতে রাখিল।।

আমারে ছাড়িয়া যাইতে মনে যদি ছিল,
তবে কেন বন্ধে আমায় পিরিতি শিখাইল।।  

জানি না কি দোষ পাইয়া এত দুঃখ দিল,
তার বিরহে পথ চেয়ে কয়দিন থাকি বল।।

রূপ দেখাইয়া সোনার চান্দে পাগলও বানাইল,
হেলাল উদ্দিন কয় আমারে প্রাণে মারিল।।





১৩৬)
প্রেম শিখাইয়া কাঁদাইল আমায়, সোনা বন্ধুয়ায়,
প্রেম শিখাইয়া কাঁদাইল আমায়।
জানি না কি দুঃখ পাইয়া, বন্ধু রইল বিমুখ হইয়া,
তার লাগিয়া, করি হায়রে হায়।।

বুঝাইলে বুঝে না মন, কি করি বল এখন,
হারালো ধন, বন্ধুয়ার চিন্তায়।
প্রেমের কি দারুণ যন্ত্রণা, প্রেমিক ছাড়া কেউ বুঝে না,
প্রাণে সয় না, করি কি উপায়।।

থাকে বন্ধু অচিন নগর, জানি না কার পাইয়া আদর,
নেয় না খবর, কারবা মন যোগায়।  
বন্ধু বলে আমি ডাকি, আমার ডাক শুনে নাকি,
চেয়ে থাকি, আসিবে আশায়।।

বন্ধুয়ার বিরহের ব্যথা, কার কাছে কই যাব কোথা,
হৃদে চিতা, জ্বলে সর্বদায়।
হেলাল উদ্দিন বন্ধুর লাগি, মান কুলমান সকল ত্যাগী,
হইলাম রোগী, ঔষধ নাই ধরায়।।




১৩৭)
আমার মনে যারে চায়রে,
তারে পাই কোথায়।
বন্ধুহারা হয়ে আমি,
ভাবি সর্বদায় রে।।

কর্মদোর্ষে গেল আমারে ছাড়িয়া,
জীবন আমার গেল শুধু বিরহের গান গাইয়া।
আশায় আছি পন্থ চাইয়া,
কি করি উপায় রে।।

দিনে দিনে সোনার তনু হইল আমার শেষ,
আমারে ভুলিয়া বন্ধু রইয়াছে বিদেশ।
পাইলাম না বন্ধুয়ার উদ্দেশ,
বিফলে দিন যায় রে।।

ফিরে আসবে বন্ধু আমায় দিয়েছিল কথা,
ভুলিতে পারি না স্মৃতি হৃদে আছে গাঁথা।
হেলাল উদ্দিন চাই মমতা,
বিদায়ের বেলায় রে।।  



১৩৮)
আমায় পাগল করেছে, আমায় যাদু করেছে,
আমার বুকে প্রেমের একটা তীর মেরেছে।।

বিষমাখা তীরে, সে মারলো আমারে,
মরি ব্যথায়, কি করি হায়,
বলি কার কাছে।।

কেন করিল আঘাত, কষ্টে যায় দিন রাত,
ভাবি নিত্য, পাই না পথ্য,
কি রোগ হয়েছে।।

হেলাল উদ্দিন কয় প্রাণে নাহি সয়,
কি যে জ্বালা, যায় না বলা,
কেমনে প্রাণ বাঁচে।।  



১৩৯)
প্রাণ সখি আমায় বল গো
বন্ধু বিনে কেমনে দিন কাটাই।।

বন্ধু বিনে একা ঘরে 
থাকব আমি কেমন করে।
তার বিরহে হৃদয় পুড়ে ছাই।।

আসবে বন্ধু বলে গেল,
সোনার যৌবন বিফল হল।
নিষ্ঠুর বন্ধুর দয়া মায়া নাই।।  

কত আশা ছিল মনে,
দেখা হবে বন্ধুর সনে।  
হেলাল উদ্দিনের ভাগ্যে বুঝি নাই।।



১৪০)
কুল ছাড়িলাম কুলের আশায় কুল পাইলাম না,
একুল সেকুল দু-কুল গেল কুলে নিল না।।

নিরাশার বেদনায় অন্তর পুড়ে হইল কালা,
কার কাছে কই কে শুনিবে আমার মনের জ্বালা।
সরল মনে মুই অবলা, ডাকি কেউ শুনে না।।

অকুলে ভাসিলাম আমি উপায় যে কি করি,
কে আমারে কুলে নিবে হইয়া কান্ডারী।
যাইতাম আমার বন্ধুর বাড়ি, মনেতে বাসনা।।

দেখতাম তারে নয়ন ভরে বুকে বুক রাখিয়া,  
পুড়া প্রাণই শীতল করতাম জনমের লাগিয়া।।
হেলাল উদ্দিন কয় ভাবিয়া, মিলনে সান্ত্বনা।।



১৪১)
আমি যার লাগি কলংকি হইলাম ছাড়িয়া মান কুলো,
প্রাণো সই গো, এখন আমার উপায় কি বলো।
নিষ্ঠুর বন্ধে আমায় ছেড়ে গেলো প্রাণো সইগো।।

কত আশা দিয়া বন্ধে,
প্রেম করিল মনানন্দে।
তার লাগি মোর পরাণ কান্দে,
কোথায় গিয়া লুকাইলো।।
 
পাষাণে বান্ধিয়া হিয়া,
আছে বন্ধু কারে লইয়া।
সদায় থাকি পন্থ চাইয়া,
আসিবার কথা ছিলো।।

কত কথা আমার মনে,
কেউ জানে না বন্ধু বিনে।
কয় তোমার হেলাল উদ্দিনে,
সোনার তনু ছাই হলো।।



১৪২)
তোরা বাসর সাজাও গো,
সাজাও যতন করে।
অচিন দেশের সুজন মানুষ আসবে আমার ঘরে।।

শুভলগ্নে শুভক্ষণে করবে আগমন,
আদর করে সবাই তারে করিও বরণ।
ধূপ লোবান আগর চন্দন, ছিটাও ধীরে ধীরে।।

নতুন মুখের নতুন কথা শুনতে মনে চায়,
জীবন সাথী করব প্রণয় ভালোবাসায়।
সুখের নীড় বাঁধব দুজনায়, দেব না আর ছেড়ে।।

প্রেমও পরশ রসিক মানুষ হইবে উদয়,
নতুন রূপের আলোয় বাসর হইবে উজ্জ্বলময়।
ভেবে হেলাল উদ্দিনে কয়, মিলন আশা করে।।  


১৪৩)
কলির কালো আইলোরে ভাই বেঈমানের বাজার,
সত্যরে গোপন করিয়া মিথ্যা চলছে বেশুমার।।

বেঈমানের তিন পাওয়ায় হয় একসের,
মাতে কথায় খুব ভালা ছেলা শয়তানের।
শোধ ঘুষে লোভ তাদের,
দেখতে লাগে ফরেজগার।।

মিথ্যায় সমাজ সাজায় খুব সুন্দর,
দিবানিশি তার অন্তরে থাকে শুধু ডর।
কোন সময় সত্যের ঝড়,
উপরে চাপে তাহার।।

সত্যের আদর সব জায়গাতে রয়,
রাখে তারে স্বসম্মানে নাই তার কোন ভয়।
ঈমান ছাড়া মুমিন নয়,
হেলাল উদ্দিন কয় বারেবার।।


১৪৪)
কলসি কাখে ও রূপসি জলের ঘাটে আসিলে,
রূপ দেখাইয়া মায়া লাগাইলে।
একি করিলে, আমারে পাগল বানাইলে।।

তুমি কার ঘরের রমণি,
লাগে তোমায় চিনি চিনি।
হাসিমুখে বল শুনি,
কার প্রেমে মন মজাইলে।।

মায়াময় রূপ মধু মাখা,
চাঁদ বদনি নয়ন বাঁকা।
হঠাৎ কেন দিলে দেখা,
বিচ্ছেদ জ্বালায় মারিলে।।

মুখে দন্ত মুক্তা দানা,
ললাটে তিলক গলায় সোনা।
তোমার রূপের নাই তুলনা,
হেলাল উদ্দিনে বলে।।



১৪৫)
আর কোনদিন তুমি আইবায় রে,
প্রাণ বন্ধু আমারই ঘরে।।

অমূল্য ধন মানিক রতন,
পাইলে তোমায় করব যতন।
মনের মতন, দেখব নয়ন ভরে।।

থাকব তোমার চরণ সেবায়,
মনের কথা কইব তোমায়।
ফুল বিছানায়, রাখব যতন করে।।

জানি তুমি বন্ধু সুজন,
মনের আশা করো পূরণ।
দিয়া দরশন, শান্তি দাও মোরে।।

তোমায় ছাড়া কেমনে বাঁচি,
হেলাল উদ্দিন আশায় আছি।
কাঁদিতেছি, পাইতে তোমারে।।  



১৪৬)
বিদেশ গিয়া বন্ধু আমায় ভুলে যাইও না,
সুখি সুন্দর জীবন তোমার করি কামনা।।

কত স্মৃতি কত কথা,
আদর সোহাগ মায়া মমতা।
হৃদয়ে রাখিও গাঁথা,
ব্যথা দিও না।।

দুঃখ লাগে দিতে বিদায়,
প্রকাশ করা যায় না ভাষায়। 
চোখের আড়াল করতে তোমায়,
মন মানে না।।

চলার পথে যদি কোন কথায়,
দুঃখ দিয়া থাকি তোমায়।
ক্ষমা করে দিও আমায়,
মনে রেখ না।।

জানি না আর কোনদিন কবে,
          তোমার সাথে দেখা হবে।
আমারে ছাড়িয়া সবে,
গেল আইল না।।

বিনয় করি কই তোমারে,
ভুলে যাইও না আমারে।
হেলাল উদ্দিনের হৃদয় জুড়ে,
তুমি একজন।।  



১৪৭) 
জানি না কোন অপরাধে আমায় ভুলেছ,
তুমি কোথায় কেমন আছ।।

ভুল করে থাকি যদি ক্ষমা করে দাও,
একবার আসিয়া তুমি আমায় দেখে যাও।
কেন তুমি আমায় কাঁদাও, নিদয় হয়েছ।।

আদর করে ডাকি তোমায় জানিয়া আপন,
আমি জানি তুমি আমার সাধনারই ধন।
তবে কেন রইলে গোপন, প্রাণে মেরেছ।।

তুমি ছাড়া এ জীবনে শান্তি নাই আমার,
চাওয়া পাওয়ার শেষ হবে সাক্ষাতে তোমার।
সাধ মিটিবে তোমায় দেখার, কথা বুঝেছ।।

ক্ষমাই মহত্ত্বের লক্ষণ সত্য যদি হয়
আমার ভাগ্য আকাশে হও তুমি উদয়।
হেলাল উদ্দিন কয়, ভুলে কি সুখ পেয়েছ।।



১৪৮)
ঘরে থাকা হল দায়,
নাম ধরে শ্যাম বাঁশরী বাজায়।
যাও সখি বলো তারে সবাই রাধার মন্দ গায়।।

বাঁশির সুর বাজলে কানে
ছটফট করে আমার মনে।
মনের মানুষ বিহনে, কি করিব অবলায়।।

আমি তার প্রেমে বাঁধা,
তবে কেন বলে রাধা রাধা।
সার হল আমার কান্দা, ননদীর মন্দ কথায়।।

নাম ধরিয়া আমায় ডাকে,
ননদীর চেয়ে থাকে।
লজ্জায় মরি কই না মুখে, কি যাদু করল আমায়।।

বাজায় বন্ধে মোহন বাঁশি,
মন আনন্দে হাসি হাসি।
রাধারে বানাইল দোষী, হেলাল উদ্দিন কয় কালায়।।



১৪৯)
সুন্দরী ললনা,
আমার পানে চেয়ে একটু হাসো না।
আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি কি তা বুঝ না।।

অপরূপ তুমি সুন্দরী,
মন প্রাণ নিয়াছ কাড়ি।।
কেমনে যাব তোমায় ছাড়ি,
আমায় করো সান্ত্বনা।।

আমি তোমার তুমি আমার,
এই কথা বলো একবার।
প্রেম সাগরে খেলব সাঁতার
গোপনে কেউ দেখবে না।।

দূরে নয় আর কাছে আসো,
নয়ন ভরে দেখি হাসো।
হেলাল উদ্দিন বলে বসো,
দুই জনে হই একজনা।।



১৫০)
কেমন আছে বিনদিনী রাই,
রে সুবল ভাই।
কেমন আছে বিনদিনী রাই।।

জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে,
বলো রাধা কেমন আছে।
নইলে পাছে, আমি মরে যাই।।

বাঁশি বাজাই কদমতলা,
বাড়ে মনে দ্বিগুণ জ্বালা।
হই উতলা, দরশন না পাই।।

রাধা কি আসবে না জলে,
সখিগণ সকলে মিলে।
হেলাল উদ্দিন বলে, দেখে প্রাণ জুড়াই।।

No comments:

Post a Comment