১৫১)
ছিলাম বা কই
আইলাম বা কই যাব বা কই কে তা জানে,
কেন আইলাম
কি করিলাম ভুলে রইলাম মূল না জেনে।
তত্ত্ব জ্ঞানে
মত্ত হইয়া করিলে অনুসন্ধান,
আসা যাওয়ার কি উদ্দেশ্য অবশ্য মিলত প্রমাণ।
নামের মধু
করিয়া পান, সুখি হইতাম ভুবনে।।
ঠিক ঠিকানা
না জানিয়া অবহেলে দিন কাটাই
আজ আছি কাল কোথায় যাবো একবারও ভাবি না তাই।
অস্থায়ী
জগতে বড়াই, করি মনের গোমানে।
চিরদিন থাকব
না জানি চলে যাব একদিন,
অজানা অচেনা পথে একেলা সঙ্গীবিহীন।
মরণ ভয়ে
হেলাল উদ্দিন, কি বলবে কাল শমনে।।
১৫২)
আমার ঘরে
বসত করে পাই না তারে দেখিতে,
আসা যাওয়া করে সদায় চলে তার ইচ্ছামতে।।
ঘরে থাকে
কথা কয় না, ডাকি তারে ডাক শুনে না,
নিষ্ঠুর সোনার ময়না, আপন হতে চায় না।
সারা জীবন
রইল একা, আমারে দিলো না দেখা,
সময় হলে দিবে ধোঁকা, উড়ে যাবে তার পথে।।
আমায় কিছু
না বলিল, ঘরেতে বাসা বাঁধিল,
তার ভাবেতে দিন কাটাইল, আমায় দোষী বানাইল।
পাখি যদি
হইত আপন, বুঝি তো সে মনের বেদন,
কাটিয়া মায়ারই বাঁধন, পারিতো না ভুলিতে।।
সারা জীবন
রইল ঘরে, দেখলাম না দুই নয়ন ভরে,
আদর করে পুষলাম তারে, হৃদয়ও পিঞ্জরে।
হেলাল
উদ্দিন বলে পাখি, সদায় করো লুকালুকি,
তোমার মনে দয়া নাই কি, আমারে ধরা দিতে।।
১৫৩)
প্রেমের অনল
জ্বলে সদায় আমার অন্তরায়,
অন্তরায় রে।।
মনের দুঃখ
রইলরে বন্ধু আমার কলিজায়,
কোথায় গিয়া পাবো তোমায় বল না আমায় রে।।
ফাঁকি দিয়া
গেলেরে বন্ধু তুই যে নিদয়ায়,
আজ আসবে কাল আসবে বলে সময় চলে যায় রে।।
প্রেম
পিপাসা রইল রে বন্ধু আমার অন্তরায়,
দিবানিশি তোমার লাগি কাঁদি সর্বদায় রে।।
কাঁদাও
কাঁদাও ওরে বন্ধু যাহা মনে চায়,
জীবনও থাকিতে আমি ভুলব না তোমায় রে।।
ডাকব ডাকব
ওরে বন্ধু প্রাণ থাকতে দেহায়,
যৌবন কলি ঝরে গেল তোমার অপেক্ষায় রে।।
হেলাল
উদ্দিনের এই মিনতি বলি যে তোমায়,
শেষ বিচারে দিও দেখা যদি মনে চায়রে।।
১৫৪)
কেগো রূপসী
তোমার কাংখে কলসী,
মুখে মধুর হাসি, প্রাণে সহে না।
আমারে করিলে
তুমি দেওয়ানা।।
কত যে
সুন্দর তুমি লম্বা মাথার কেশ,
মাঝা চিকন গড়ন গাড়ন দেখতে লাগে বেশ।
তোমার পরনে
শাড়ি, দেখতে লাগে হুরপুরী,
ডাগর ডাগর চোখেতে কাজল টানা।।
কেবা তোমার
মাতা পিতা কোথায় তোমার ঘর,
জলের ঘাটে আইলে একা মাথায় নাই কাপড়।
তুমি এমন
করে কেন ডাকো আমারে,
মনের কথা আমার কাছে খুলে বল না।।
অঙ্গে ভরা
যৌবন তোমার করে টলমল,
ভ্রমরবিনে ফুলের মধু কে খাইবে বল।
কয় হেলাল
উদ্দিনে তোমার পাইলে নির্জনে,
মধুর মধুর কথা কইতাম বসে দুজনা।।
১৫৫)
সবাই আমায়
মন্দ বলুক তাতে কী বা যায় আসে,
আমায় যদি প্রাণ বন্ধে ভালবাসে।।
রাস্তা দিয়া
যখন চলি,
পাগল বলে দেয় গালি।
আরো বলে
লম্বা চুলি,
মরবেরে তুই উপবাসে।।
কেউ কয় ভাল
কেউ কয় মন্দ,
যার যে ভাবে পায় আনন্দ।
ওদের মধ্যে
লাগে দ্বন্দ্ব,
দেখলে থাকি নিরব বসে।।
এসব শুনেও
শুনি না,
ভাল মন্দের ধার ধারি না।
কারো কথায়
জবাব দেই না,
হিংসার বশে আক্রোশে।।
পাইতে
বন্ধুর চরণের ধূল,
মন আমার হইল ব্যাকুল।
হেলাল
উদ্দিন হইল বাউল,
গান গাই মনের উল্লাসে ।।
১৫৬)
আমার বন্ধু
কোথায় রইল গো আইল না দেখলাম না নয়ন ভরিয়া,
আজ আসবে কাল আসবে বলে আশাতে রইলাম চাইয়া।।
আসবে বন্ধু
বলিয়া গেল,
কার প্রেমে মন মজাইয়া আমায় ভুলিল।
কেন সে
নিদারুণ হইল,
জানি না কি দোষ পাইয়া।।
কোন বা দেশে
প্রাণবন্ধু রয়,
কে আনিয়া দিবে তারে হইয়া সদয়।
দুই নয়নে
ধারা যে বয়,
নিশি কাটাই জাগিয়া।।
কোথায় যাব
কি করি এখন,
কেমনে পাইব আমি বন্ধুর দরশন।
কাঁদে হেলাল
উদ্দিনের মন,
শুধু তাহার লাগিয়া।।
১৫৭)
সারা জীবন
থাকো সুখে স্বামীর ঘরে গিয়া,
দোয়া করি আমরা সবাই তোমার লাগিয়া।।
স্বামীর
সেবায় দিয়া মন,
কাটাইও সারা জীবন।
ছোটদের ভাই
বোনদের মতন,
নিও আপন করিয়া।।
শ্বশুড়
শ্বাশুড়ী থাকলে ঘরে,
মা বাবার মতন মনে করে।
যাইও তাদের
ভক্তি করে,
হৃদয় উজাড় করিয়া।।
ননদ ভাবী আর
প্রতিবেশী,
আদর সোহাগে আরশী পড়শী।
হেলাল
উদ্দিন কয় হাসি হাসি,
যাইও সংসার করিয়া।।
১৫৮)
ও বিদেশী
বন্ধুরে কোথায় রইলায়,
তুমি আমারে ভুলিয়া রে।।
পাইতাম যদি
তোমায় রে বন্ধু আদর করিয়া,
দিবানিশি রাখতাম তোমায় কোলেতে বসাইয়ারে।।
পাখি যদি
হইতাম রে বন্ধু দেখিতাম খুঁজিয়া,
কোনবা দেশে আছো তুমি আমায় পাশরিয়া রে।।
দয়া মায়া
নাইরে বন্ধু দয়াহীন তোর হিয়া,
থাকো চিরসুখে তুমি আমারে কাঁদাইয়া।।
হেলাল
উদ্দিন তোমার আশায় আছি পন্থ চাইয়া,
নিদানকালে দিও দেখা সামনে আসিয়ারে।।
১৫৯)
তোমার কথা
মনে হইলে চোখের জলে বুক ভেসে যায়,
আর কোনদিন আইবায়রে বন্ধু বল না আমায়।।
হারানো ধন
যে জনে পায়,
তার মত সুখি কেউ নাই এ ধরায়।
চাতক পাখির
মত আশায়,
মরি আমি বেদনায়।।
তোমার আশায়
দিন গণিয়া,
আশার পন্থে রইলাম চাইয়া।
দেখে যাইও
একবার আইয়া,
যদি তোমায় মনে চায়।।
আর কত দিন
থাকব একা,
কবে এসে দিবে দেখা।
হেলাল
উদ্দিন বলে সখা,
এসে দিও শেষ বিদায়।।
১৬০)
থাকিয়া
মায়ারই জালে জীবনটা হইল অসার,
তুমি বিনে কে আছে আমার।।
ও দয়াল রে-
আমি অধম গোনাগারে, ডাকি তোমায় নতশীরে,
কর আমায় ভব সিন্ধু পার।
ওগো আমার
অন্তর্যামী, আমায় ক্ষমা করো তুমি,
হৃদয় স্বামী, ওহে পরোয়ার।।
ও দয়াল রে-
এই মিনতি করি সদায় সু-পথগামী কর আমায়
আশা মনে পাইতে দিদার
যে পথে করেছ
মানা সে পথে আমায় নিও না,
এই প্রার্থনা, দরবারে তোমার।।
ও দয়াল রে-
ওলীউলা যত ছিল, তোমার নামে পাগল হইল,
হইল তারা অমর এ সংসার।
হেলাল উদ্দিন
ভব সাগরে, তোমারই নাম স্মরণ করে,
তরাও মোরে, জানি না সাঁতার।।
১৬১)
একদিন তোর
হবে অবসান রে মন পাষাণ,
একদিন তোর হবে অবসান।
ছেড়ে যাবে এ
দুনিয়া ভবের যত শান আর মান।।
ভাই বন্ধু
স্ত্রী পুত্র আত্মীয় স্বজন,
সকলে মিলিয়া শুধু করিবে কান্দন।
কান্দনেও
সার হবে না সৃষ্টিকর্তার এই বিধান।।
গরম জলে
গোসল দিতে করবে আয়োজন,
আতর গোলাপ দিয়া সাদা পরাইবে কাফন।
কাঁচা
বাঁশের পালকি করে নিয়ে যাবে কবরস্থান।।
হেলাল
উদ্দিনের মনে শুধু লেগে আছে ডর,
খালি হাতে কেমনে যাব কয়বরের ভিতর।
রাসূলুলার আশা রাখি তরাইতে ঘোর নিদান।।
১৬২)
হৃদয়ে
বিচ্ছেদের আগুন জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হই,
বন্ধুয়া বিহনে ঘরে কেমন করে রই।।
পাইতাম যদি
প্রাণবন্ধুরে,
দেখাইতাম হৃদয় চিরে।
লোকের কাছে
কই না ডরে,
বোবা হইয়া সদায় রই।।
এইভাবে আর
কয়দিন থাকি,
বলে দে গো প্রাণো সখি।
বন্ধে আমায়
দিয়া ফাঁকি,
গাছে তুলে নিল মই।।
কিবা দোষে
রইল ভুলে,
সদায় ভাসি নয়ন জলে।
কলংকেরই
মালা গলে,
লোকের নিন্দা কত সই।।
যার কারণে
হইলাম দোষী,
যদি দেখে যাইত আসি।
হেলাল
উদ্দিন যার পিপাসী,
সেবা গিয়া রইল কই।।
১৬৩)
কিবা দোষে
প্রাণবন্ধে আমায় ছেড়ে গেল,
সখি বল গো।
নিদয়া হইয়া
বন্ধু কোথায় লুকাইল।।
যাও সখি বন্ধুর
তালাসে,
কেন বন্দে ভিন্ন বাসে।
মরি আমি
প্রেম পিপাসে,
একি জ্বালা হইল।।
কইও তারে
বিনয় করে,
সে যদি না আসে ফিরে।
কথা দিয়া
কেন মোরে,
ছলনা করিল।।
বন্ধুরে কইও
বুঝাইয়া,
আমি অভাগিনীর নাম ধরিয়া।
দেখে যাইত
একবার আসিয়া,
কেন কাঁদাইল।।
এই ছিল
বন্ধের পিরিতে,
কলংকি হইলাম জগতে।
হেলাল
উদ্দিন তারে পাইতে,
কেঁদে জনম গেল।।
১৬৪)
পাগলও
বানাইলে তুই আমারে,
ও বন্ধুরে।
পাগলও
বানাইলে তুই আমারে।।
আমি কলংকিনী
জগতে, তুই বন্ধুয়ার পিরিতে,
রইতে পারি না একা ঘরে।
দেখিয়া
পাড়ার লোকে, পাগল বলে ডাকে,
থাক সুখে, জনমেরই তরে।।
যে দিন তুমি
ছেড়ে গেলে, কত কথা বলেছিলে,
মনে হলে চোখের পানি ঝরে।
নিষ্ঠুর
তুমি নিদয়া, নাই তোমার দয়ামায়া,
কথা দিয়া এলে না আর ফিরে।।
যদি আমায়
ভালোবাসো, দয়া করে আসে,
কোলে বসো দেখি নয়ন ভরে।।
মিলনের
বাসনা, হেলাল উদ্দিনের কামনা,
জ্বালা সহে না আর অন্তরে।।
১৬৫)
ঘর ছাড়া
করিল পিরিতে,
প্রাণ ললিতে।
ঘর ছাড়া
করিল পিরিতে।।
বন্ধের
বাঁশির সুরে, থাকা যায় না ঘরে,
কি যাদু করিল আমারে।
যাদু জানে
বাঁশের বাঁশি, দোষী আমি কুল বিনাশী,
কলংকের হার পরলাম গলেতে।।
ডাকি বন্ধু
তোরে, থেক না আর দূরে,
অভাগিনী ডাকি বারে বারে।
তুমি যদি
থাক ঘরে, শুনিব গান বিনাতারে,
দুঃখ আর রইবে না মনেতে।।
হেলাল
উদ্দিন ডাকে কত ব্যথা বুকে,
তোমায় ছাড়া বাঁচি কেমন করে।
আমার মরণেরই
কালে, যেও না গো ভুলে,
ধুইও কবর অশ্রু জলেতে।।
১৬৬)
কদম তলায়
বাজাই আমি বাঁশি,
ওলো রূপসী।
কদম তলায়
বাজাই আমি বাঁশি।।
নিত্য আসো
যাও দেখি কলসি লইয়া,
কারে খোঁজ আড় নয়নে হাঁটো টমকিয়া।
আমার পানে
চাও ফিরিয়া, ওগো পূর্ণশশী।।
কার প্রেমে
মন মজাইয়া হইলে উদাসীনি,
ভাবে বুঝি আমার মত তুমিও বিরহিনী।
শুনে যাও
মোর বাঁশির ধ্বনি, কাছে একবার আসি।।
যৌবন ফুলে
মধু ভরা রয় না চিরদিন,
ভ্রমর বিনে শুকাইবে কয় হেলাল উদ্দিন।
থাকিয়া
আমারই অধীন, ধন্য হও ষোড়শী।।
১৬৭)
তোমার লাগি
পরান আমার কান্দে নিশিদিন,
খাজা মঈন উদ্দিন।
তোমার লাগি
পরান আমার কান্দে নিশিদিন।।
তুমি দয়াল,
দয়ার কাঙ্গাল, আমি দীনহীন,
কৃপা করে তরাও মোরে না বাসিও ভিন।।
পাইতে তোমার
চরণ ধূলা আশাতে যায় দিন,
প্রাণ খুলিয়া ডাকি তোমায় করিয়া একিন।।
দয়াল নামের
ধ্বনি তোমার বিশ্বে সীমাহীন,
দাও হে দেখা প্রাণো সখা কয় হেলাল উদ্দিন।।
১৬৮)
ফেব্রুয়ারীর
একুশ তারিখ এলে মনে বড় কষ্ট হয়,
সালাম, বরকত, রফিক, জববার তাদের কথা ভুলার নয়।।
রাজপথ জুড়ে
মিছিল করে দামাল ছেলেরা,
তাদের বুকে চালায় গুলি পাক হানাদাররা।
গুলির
আঘাতে, প্রাণ দিতে, বাঙ্গালী করে না ভয়।।
সোনার দেশের
ছেলেরা মাথা নত করে নাই,
বাংলা মায়ের মান বাঁচাতে জীবন দিলো তাই।
রাষ্ট্রভাষা,
বাংলা ভাষা, পেলাম প্রাণের বিনিময়।।
নবীন যাত্রী
তোমাদের বলি তাদের মতো হও,
বিশ্ববাসী বুঝুক বাঙ্গালী পিছিয়ে যাবার নও।
প্রয়োজনে
হাতে অস্ত্র নিতে, করবে না কোন সংশয়।।
অকাতরে ঝরে
গেলো লক্ষ লক্ষ প্রাণ,
জীবন দিয়ে রাখবো মোরা (সেই) স্বাধীনতার মান।
হেলাল
উদ্দিন, কয় শুভদিন, সামনে আসবে নিশ্চয়।।
১৬৯)
অপরূপ এক
রূপের মেলা রূপের নাই যার শেষ,
সে যে আমার জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ।।
সবুজে
শ্যামলে ভরা যে দিকে তাকাই,
এমনি অপূর্ব রূপ আর কোথাও নাই।
যতই দেখি
ভালোলাগে হয় না দেখার শেষ।।
গাছে গাছে
ফুটে যে ফুল বাউল করে গান,
সকাল বেলা শুনি কত পাখির কলতান।
এমন দেশে
জন্ম নিয়ে ভালো আছি বেশ।।
রূপসী
বাংলার এই রূপ দেখি নয়ন ভরে,
আর কোথাও যাব নাকো এই দেশটাকে ছেড়ে।
হেলাল
উদ্দিন সুখে আছি দুঃখের নাই যে লেশ।।
১৭০)
শিক্ষাবিহীন
জীবন বৃথা,
শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই।
লেখাপড়া করো
রে সবাই।।
যদি সুফল
পেতে চাও,
লেখাপড়া করে যাও।
সুখি সুন্দর
জীবন গড়তে,
শিক্ষার বিকল্প নাই।।
সঠিকভাবে
পড়ে যারা,
সফলতা পায় যে তারা।
যত্ন ছাড়া
হয় না রত্ন,
এ দুনিয়ায় দেখতে পাই।।
সবাই মিলে
শপথ করি,
সুন্দর একটা সমাজ গড়ি।
হেলাল
উদ্দিন কয় সবাই মিলে,
আঁধারে আলো ফুটাই।।
১৭১)
মহান বিজয়
দিবসে গাই বিজয়ের গান,
মন দিয়া শোনেন তরুণ বৃদ্ধ নওজোয়ান।।
জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,
৭১-এর ৭ই মার্চে ভাষণ করলেন দান।
সেই ভাষণে
পাইল মানুষ স্বাধীনতার ঘ্রাণ।।
বঙ্গবন্ধুর
ভাষণ শুনে কত বীর সন্তান,
স্বাধীন হতে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে যান।
মাতৃভূমি
মুক্ত করতে রক্ত করলেন দান।।
বীর
বাঙ্গালী বীরের জাতি দিয়েছে প্রমাণ,
৭১-এ পরাজিত হইল পাকিস্তান।
বাংলার
আকাশে উড়ে বিজয় নিশান।।
শ্রদ্ধাভরে
স্মরণ করি যত শহীদান,
জাতি ভুলবে না কখন তাদের অবদান।
দোয়া করি আল্লাহ
তাদের বেহেস্ত করেন দান।।
(নয় মাস)
রক্তঝরা সংগ্রামের হইল অবসান,
বিজয় এলো পলাইল হানাদার শয়তান।
সবুজ শ্যামল
সোনার বাংলা আল্লাহতায়ালার দান।।
হেলাল
উদ্দিন সবার কাছে করি আহবান,
প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রাখবো দেশের মান।
স্ত্রী
খোঁজে স্বামী আজও মা খোঁজে সন্তান।।
১৭২)
বাংলা আমার
জন্মভূমি বাউল আমার মন
এই দেশকে ভালবেসে আছি পরষ্পর আপন।।
সংস্কৃতি
মোর শিল্প স্বদেশ আমার মঞ্চ
সেই মঞ্চে দাঁড়াইয়া,
সবুজ শ্যামল
সোনার বাংলার রূপ দেখি চাইয়া।
ভাবিতেছি অবাক হইয়া, প্রকৃতির মিলন।।
শিল্পী আর
কবি আউলিয়া মনীষী
ধ্যানমগ্ন হইয়া,
কতভাবে সুরে
ছন্দে গেলেন রচিয়া।
তাদের অনুসারী হইয়া, গড়তে চাই জীবন।।
দেশকে
ভালবেসে করব দেশের কাজ
সকলে মিলিয়া,
শোষণহীন
সমাজ গড়ব এই প্রতিজ্ঞা নিয়া।
হেলাল উদ্দিন কয় ভাবিয়া, এই আমাদের পণ।।
১৭৩)
রক্ত দিয়েছি
আরো দেব, প্রয়োজন হলে মরব,
রাখবো দেশের মান।
জন্মভূমি
বাংলাদেশ আমার প্রাণের প্রাণ।।
একতায় হইয়া
বদ্ধ,
অশান্তি করিব রুদ্ধ,
দেশের জন্য
করব যুদ্ধ,
উড়াইব শান্তির নিশান।।
সবাই মিলে
শপথ নেব,
শোষণহীন সমাজ গড়ব,
অন্যায়কে
ধ্বংস করব,
মজলুমের করব উত্ত্বান।।
ন্যায় নীতি
প্রতিষ্ঠা করব,
অনাচার দূর করিব,
আঁধারে আলো
ফুটাব,
গাইব জয়ের গান।।
শহীদের
স্মৃতি ধারণ করে,
অসমতা রাখবো দূরে,
হেলাল
উদ্দিন সবার তরে,
করি আহবান।।
১৭৪)
প্রভাতের
সূর্যের মত,
পূর্ব আকাশ করে আলোকিত
দুযোর্গেরই
সন্ধিক্ষণে শেখ মুজিব হলেন আবির্ভূত।।
পর্বতের মত
অটল হয়ে দাঁড়ালেন জাতির সামনে,
স্বাধীনতা পেল দেশ যোগ্য নেতার কারণে,
নিজের জীবন
তুচ্ছ করে দিয়ে ছিলেন নেতৃত্ব।।
মানুষের
প্রতি ছিল তাহার ভালবাসা স্নেহ মমতা,
তাই তো হয়েছিলেন বাঙ্গালীর জাতির পিতা,
সর্বকালের
শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী হয়েছিলেন প্রমাণিত।।
লক্ষ
মানুষের ভিড়ে ছিল ফুটন্ত একটি ফুল,
ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে দিতে করেননিক ভুল,
হেলাল
উদ্দিন বলে তিনি ছিলেন সবার কাঙ্কিত।।
১৭৫)
কিছু মানুষ
ভালবাসার আন্দাজ জানে না,
কতটুকু
ভালবাসলে মরা লাগবে না।।
মন প্রাণ
দিয়া ভালবাইস,
খারাপ দেখলে ফিরে আইস,
প্রেমের
লাগি নিজের জীবন বলি দিও না।।
প্রেম
পাবেরে বাঁইচা রইলে,
কি লাভ হবে মইরা গেলে,
অমূল্য ধন
মানব জীবন নাইরে তুলনা।।
বলে হেলাল
উদ্দিনে
প্রেম করোরে মানুষ চিনে,
স্বর্গীয়
দান ভালবাসা পাপ হবে না।।
১৭৬)
আমি কেমনে
থাকি ঘর,
নিদয়া নিষ্টুর ও বন্ধুর পাইলাম না খবর।।
ঘুরলাম কত
দেশ বিদেশে গ্রাম আর শহর,
মিলল না বন্ধুর দরশন হইল কার দোসর।।
দেহমন
বিকাইয়া দিলাম পাইয়া আদর,
আপন বলে কাছে টেনে করে দিলো পর।।
দুই নয়নে
অশ্রু ঝরে গায়ে প্রেম জ্বর,
ব্যথায় বিদূরিত হেলাল উদ্দিনের অন্তর।।
১৭৭)
বসে ভাবছ
কিরে অবুঝ মনা,
করো গুরুর আরাধনা।
গুরুর চরণ
আরাধ্য ধন মনরে তুই ভেবে দেখ না।।
আসলে ভবে কি
করিতে, ভুলে রইলে মায়াতে,
আয়ু থাকতে, মুক্ত হলে না।
ওতোর গণার
দিন ফুরাইয়া গেলে,
সঙ্গেত আর কেউ যাবে না।।
বুঝলে না
দুনিয়ার খেলা, ভব যন্ত্রণায় পড়ে রইলা,
গেল বেলা, গুরু ভজলে না,
তুমি সময়
থাকতে সাধন করো
অসময়ে আর হবে না।।
মানব লীলা
সাঙ্গ হলে, পরপারে যাবে চলে,
হারাইলে, পুঁজি ষোলআনা,
হেলাল
উদ্দিন কয় পাগল মন
চরণ ধরে পড়ে থাক না।।
১৭৮)
তোমার নামের
আছে বল,
যে নৌকায় কাঁড়ার ধরো নৌকা হয় না তল,
কাতর হয়ে
ডাকি তোমায় নাই কোন সম্বল।।
আমি অভাজনা
সর্বহারা হয়েছি দুর্বল।
দুঃখের তাপে সদায় জ্বলি একি কর্মফল।।
পাপী জেনে
উদ্ধার করো নাহি বুদ্ধি বল।
নিজও গুণে ক্ষমা করো অপরাধ সকল।।
মোহমুগ্ধ
হইল জীবন এসে মহীতল।
হেলাল উদ্দিনের জনম গেলোরে বিফল।।
১৭৯)
একবার কি
ভেবেছি, আল্লাহ নবীর পথ ছেড়ে কই যাইতেছি,
নবীর প্রদর্শিত আদর্শে জীবন কি গড়েছি।।
করলে নবীজির
আদর্শ গ্রহণ
সুন্দর হইত মানব জীবন।।
মারামারি
হিংসা নিদন,
করতাম না মিছামিছি।।
ধর্মের আদেশ
নিষেদ মানা,
মানুষের কর্তব্য কি না,
অশিলতা বেহায়াপনা,
না বুঝিয়া করতেছি।।
সৃষ্টির
মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ
শ্রেষ্ঠতের নাই আর অবশিষ্ট,
একে অন্যের
টেলায় পৃষ্ঠ,
হয়ে নিত্য মরতেছি।।
মানুষের কাজ
নয় মানুষ মারা,
ছিনতাই সন্ত্রাস চুরি করা,
হেলাল
উদ্দিন বলে আমরা,
মরণ কথা ভুলেছি।।
১৮০)
তোমারই
সান্নিধ্যে আমার জীবন ধন্য মনে হয়,
ভুলিতে পারব না তোমায় এলে মহাপ্রলয়।।
তুমি
চিরকাঙ্ক্ষিত,
হৃদয়ে ছিলে নিদ্রিত,
তাই হয়েছি
ঘনীভূত,
ঘনত্বের হবে না ক্ষয়।।
চিত্তহারী
অবলোকন,
করেছে প্রণয়াকর্ষণ,
পদরেণু পেয়ে
জীবন,
হয়েছে প্রভাময়।।
থাকি সদা
প্রাণবন্ত,
মন প্রাণ হবে ফুলন্ত,
হেলাল
উদ্দিন পয়মন্ত,
তাতে নাই কোন সংশয়।।
১৮১)
আপনকে পর
ভাবিয়া পর করলায় আপন
চিনতে পারলে নারে মন,
কে দোস্ত আর
কে তোমার দুশমন।।
ভোগাসক্ত
হইয়া তুমি বিপথগামী হইলে,
আসল নকল না বুঝিয়া সংকটে পড়িলে,
রিপুর
তাড়নায় করলে, কত ভ্রষ্টাচরণ।।
মণি আর
মানিক্য নিয়ে এলে ভূমন্ডল,
মহাসিন্ধু পাড়ি দিতে নাই কোন সম্বল,
হারাইলে
পুঁজি সকল, তরীবে কেমন।।
রোষানলে
পতিত হবে কে করবে উদ্ধার,
হেলাল উদ্দিন সময় থাকতে হওরে হুঁশিয়ার,
ক্রান্তদর্শীর
আশ্রয়ে এবার, কারো কালক্ষেপণ।।
১৮২)
আমার বন্ধুয়ারে দেখাও আনি গো সখি
যাও তোরা তালাসে।
আমার কলিজায়
ধরিল সখি বন্ধুর প্রেমও বিষে।।
শিঘ্র করে
যাও তোরা গো
সখি আমার বন্ধু যেন আসে।
পন্থ চাইয়া
বসে আছি পাগলিনীর বেশে।।
আমার কথা
কইও তারে গো
সখি আমায় ভুলিল কোন দোষে।
আমি তার
লাগিয়া দিবানিশি মরি হাহুতাশে।।
কোন দিন আমি
মরে যাবগো
সখি যদি সে না আসে।
(কইও) হেলাল
উদ্দিনরে রাখিত তাহার চরণ পাশে।।
১৮৩)
আমি মরেছি
মরেছি, তোমার প্রেমে পড়েছি
কি ভুল করেছি।
মারিয়া
রূপের বান, কেড়ে নিলে মনোপ্রাণ।
পিরিতের মালা গলে পড়েছি।।
অংগে নব
যৌবন যেন মধু বরিষণ
হারিয়ে মন আমার পাগল হয়েছি
(তোমায়)
করিতে আপনা, মনে জাগে বাসনা।
কেন জানি তোমার আঁচল ধরেছি।।
যদি তোমায়
কাছে পাই, বুকে নিয়ে প্রাণ জুড়াই
যতনে বাসর সাজিয়ে রেখেছি।
দেখিয়া
মায়াবী মুখ, ভুলিব যত দুঃখ।
হেলাল উদ্দিন তোমার আশায় রয়েছি।।
১৮৪)
প্রেম না
করে ছিলাম ভালা
প্রেম করে হইল জ্বালা
অনেক দিন গত
হইল আইল না শ্যাম কালা।।
আমায় ছেড়ে
রয় কোন দেশে,
মরি আমি হাহুতাশে।
চোখের জলে
যায় বুক ভেসে।
কাঁদি বসে নিরালায়।।
বিধি যদি
দিত পাখা,
উড়ে গিয়ে করতাম দেখা
না পাইলে
প্রাণ বন্ধু সখা,
কার গলে দিতাম মালা।।
এই কি তাহার
প্রেমের রীতি
ডুবাইল মোর কুলমান জাতি
হেলাল
উদ্দিন দিবা রাতি
তোর নামে গান গাই বাউলা।।
১৮৫)
আমি কেন
পিরিত করিলাম সখি গো
বিদেশী বন্ধুয়ার সনে।
গেল বন্ধু
আর আইল না কাঁদি রাত্র দিনে গো।।
আমার কথা
প্রাণো বন্ধুর পড়ে নাকি মনে
কেন আমায় ছেড়ে গেল এ ভরা যৌবনে গো।।
ভুলিতে পারি
না তারে শয়নে স্বপনে
যে দিকে আঁখি মেলি হেরি দুই নয়নে গো।।
আর কত দিন
থাকব আমি চেয়ে পন্থপানে
হয়ত বন্ধু ভুলে গেছে কয় হেলাল উদ্দিনে গো।।
১৮৬)
আমার
বন্ধুরে কেমনে দেখি বলও গো সখি
তার কারণে দিবানিশি ঝরে সদায় দুই আঁখি।।
প্রেমাগুনে
পুড়ে হইলাম ছাঁই,
নিদয়া নিষ্টুরও বন্ধুর দয়া মায়া নাই।
কেমন করে
তার দেখা পাই, আমি যে ছাতক পাখি।।
আমি তার
পিরিতের মরা,
বাঁচি না গো প্রাণও সখি বন্ধুয়া ছাড়া,
হয়েছি
পাগলের ধারা, মরণ শুধু রয় বাকি।।
একবার যদি
দেখা পাইতাম,
বুকেতে বুক মিশাইয়া জড়াইয়া রাখতাম,
হেলাল
উদ্দিন সুখি হইতাম, বন্ধুরে কাছে রাখি।।
১৮৭)
আমি দেখিব
তোমারে, আমার দুটি নয়ন ভরে
দয়া করে এসো যদি আমারই ঘরে।।
তোমায় ভাবি
শয়নে স্বপনে,
ঘুম আসে না শান্তি নাই মোর মনে,
ব্যথা দিলে
অকারণে, থাকিয়া দূরে।।
একবার যদি
পাইতাম তোমায় কাছে
কইতাম মনের দুঃখ যত আছে।
কে তোমায়
ধরে রেখেছে, কি যাদু করে।।
সঙ্গি ছাড়া
একা কেমনে থাকি,
তুমি আমার দুঃখ বুঝ নাকি?
হেলাল
উদ্দিন তোমায় ডাকি, দেখা দাও মোরে।।
১৮৮)
যারে আপন
ভেবেছিলাম গো সখি
সে হইল পর।
আশা ছিল
তারে লইয়া বাঁধবো সুখের ঘর।।
প্রথম
দেখারকালে আমায় বলল কাছে এসে।
ছায়ার মত সব সময় থাকবে আমার পাশে।
ফাঁকি দিল
অবশেষে, এত কঠিন তার অন্তর।।
তার সাথে অনেক বিষয় হইল আলোচনা,
সে জানে আর আমি জানি অন্য কেউ জানে
না।
ভুলতে চাই তুলতে পারি না, সে বড় স্বার্থপর।।
হাতে ধরে বলেছিল নিবে সংগে করি,
এখন বুঝেছি এসব ছিল তার চাতুরী,
হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস করি, কেন করিলাম আদর।।
১৮৯)
আমায় সকলে ছাড়িয়া যাউক তাতে দুঃখ নাই
প্রাণের বন্ধুয়ারে, তোমার কাছে যদি
আশ্রয় পাই।।
আশা দিয়া যে আমারে নিরাশ করেছে,
স্বার্থ আদায় করে অনেক দূরে চলে
গেছে।
আমার মনের দুঃখ তোমার কাছে প্রকাশ করে যাই।।
কথা দিয়া আমার সাথে কথা রাখল না,
অন্তরে তার অনিষ্টতা আগে জানি না
সকলি তোমারই জানা, তুমি অন্তর্যামী সাঁই।।
বিনীতভাবে তোমার কাছে নিবেদন আমারই।
তুমি বিচারের মালিক আমার বিচার দাও
করি।
হেলাল উদ্দিন চরণ ধরি, এই ভিক্ষা চাই।।
১৯০)
আর কতদিন তোমারই আশায়
পথও চেয়ে আমি থাকব।।
আসবে আশায় রয়েছি বসে,
কেন এলে না তুমি জানি না কি দোষে।
এসো হে প্রাণনাথ, দিও না আঘাত,
নয়ন জলে তোমার চরণ মুছাব।।
জানি না কার সনে, রয়েছ গোপনে।
আমার কথা তোমার পড়ে নাকি মনে।
কত যে বেদনা, প্রাণে আর সহে না,
তোমার বিরহে আর কত কাঁদিব।।
দাও হে দরশন, শান্ত কর মন,
তোমার লাগিয়া নিশি জাগরণ।
বলে হেলাল উদ্দীন, তোমায় পাই না যদি
কলংকিনী মুখ আমার কারে দেখাব।।
১৯১)
একি হইল হইল গো
আমায় ছেড়ে বন্ধু কই গেল
ভুলিতে পারি না তারে কেন সে ভুলিল।।
হাতে হাত রাখিয়া বন্ধে প্রতিজ্ঞা করিল।
ফিরে আসবে বলে আমায় আশাতে রাখিল।।
আমারে ছাড়িয়া যাইতে মনে যদি ছিল।
তবে কেন বন্ধে আমায় পিরিতি শিখাইল।।
জানি না কি দোষ পাইয়া এত দুঃখ দিল।
তার বিরহে পথ চেয়ে কয়দিন থাকি বলো।।
রূপ দেখাইয়া সোনার চান্দে পাগলও বানাইল।
হেলাল উদ্দিন কয় আমারে প্রাণে
মারিল।।
১৯২)
ভালবাসায়, হাসায় আর কাঁদায়
ভালবাসি, দিবানিশি, করে হায় হায়।।
যে যারে ভালবাসে,
সে যদি থাকে পাশে,
যুগল মিলনের আশে,
মিলনের গান গায়।।
ভাললাগা ভালবাসা নয়,
ভালবাসলে মন দিতে হয়,
যদি দুই মন এক মন না হয়,
প্রেম বিফলে যায়।।
আমি ভালবাসলাম যারে,
তার দেখা পাই কেমন করে,
হেলাল উদ্দিন আঁখি নীরে
ভাসি সর্বদায়।।
১৯৩)
আমি যারে চাই তারে পাই না
পাই যারে সে নয় আমার আপনা।।
গান গেয়ে ডাকিলাম যারে
কাছে আয় না থাকে দূরে
কাঁদায় আমায় কাঁদে নারে
মনে কি তার দয়া হয় না।।
যারে ভালবেসে মন দিয়েছি
তারে পাব আশায় আছি
যত দিন এই ভবে বাঁচি
করব তাহার আরাধনা।।
তোমায় চাওয়া তোমায় পাওয়া
তোমার গুণগান গাওয়া
একবার তোমায় দেখে যাওয়া
হেলাল উদ্দিনের কামনা।।
১৯৪)
প্রেম করিলে মন সাধে গো রাধে,
প্রেম করিলে মন সাধে।
মন দিয়াছ যারে, সে নাই ব্রজপুরে,
মথুরা নগরে, আছে আনন্দে।।
ব্রজের গোপি বালা, সবাই করত খেলা
বসে কদম তলা, নির্বিবাদে
রাখত শ্যামে ধেনু, বাজাইত বেণু
হারাইয়া কানু, বিরহে কাঁদে।।
তোমায় দিল ধোঁকা, শোন গো রাধিকা,
আর কি দিবে দেখা, কালা চান্দে।
রাই গো তোমার মনচোর, থাকে এখন মধুপুর
হেলাল উদ্দিন কয় বিভোর কুব্জার
ফাঁদে।।
১৯৫)
তোমায় ভালবেসে হইল দুর্গতি
পাড়ার লোকে সদায় আমায় বলে অসতী।।
তোর লাগিয়া দোষি হইলাম দেখা না পাইলাম,
তোমার বিহনে আমি কত জ্বালা সইলাম।
একি আমি ভুল করিলাম
নিষ্টুর বন্ধুর সনে করে পিরিতি।।
নিদারুণ পিরিতের জ্বালা, কেমনে সই অবলা,
সরল মনে আমায় কেন এত দুঃখ দিলা।
আমায় ছেড়ে কোথায় গেলা,
মন প্রাণ হরে নিয়া করে ডাকাতি।।
কত আশা ছিল মনে, থাকব প্রেম বাঁধনে,
তুমি বিনে আর কে আছে আমারই ভুবনে।
কাঁদি হেলাল উদ্দিনে,
হারাইয়া জীবনের সংগেরও সাথী।।
১৯৬)
কার কাছে জানাব বল আমার মনের বেদনা,
আগে জানি না,
দারুণ প্রেমের এত জ্বালা,
সখি গো আগে জানি না।।
আসবে বলে গেল চলে,
বুক ভাসে মোর নয়ন জলে গো
এখন কেমনে থাকিব ভুলে
বুঝাইলে মন বুঝে না।।
যৌবনকালে বন্ধুহারা
প্রেম আগুনে হৃদয় পুড়া গো
কর্ম দোষে দেয় না ধরা
করিলাম যার কামনা।।
হেলাল উদ্দিন কয় কি জ্বালা
বন্ধুরে পাইলে নিরালা গো
গলে দিয়া প্রেমের মালা
পুরাইতাম মন বাসনা।।
১৯৭)
ও বিদেশীরে বাঁশের বাঁশি আর বাজাইও না,
বাঁশির সুরে মন উদাসী ঘরে রইতে পারি
না।।
তোমার বাঁশির সুর শুনিয়া
মনে লয় যাইতাম উড়িয়া
ঠেকছি আমি নারী হইয়া
বাইরে যাইতে পারি না।।
নাম ধরিয়া বাজাও বাঁশি
মন্দ বলে প্রতিবেশী
পাইলে সেবার হইতাম দাসী
কলংকের ভয় করি না।।
তোমারে পাইব যে দিন
প্রেমের পুড়া হেলাল উদ্দিন
কুলমান সঁপিয়া সেই দিন
পাবো চির সান্ত্বনা।।
দিয়া মুখের হাসি আমায় করলে উদাসী,
নাম ধরিয়া বাজাও কেন বাঁশি রে
নাম ধরিয়া বাজাও কেন বাঁশি।।
কেবা তুমি দূর বিদেশী যৌবনও বেলা
অভাগীনির মনও প্রাণ হরিয়া নিলা,
তুমি যেথায় যাও বন্ধু আমায় সংগে নাও
নইলে আমি গলে দিব ফাঁসিরে।।
আপনও জানিয়া তোমায় এ নব যৌবন
বিনামূল্যে তোর চরণে করেছি অর্পণ।
সহে না বিরহ জ্বালা, কেমনে সইব অবলা,
আমি শুধু তোমার প্রেম পিপাসীরে।।
যা লয় মনে কর বন্ধু বলি যে তোমায়
হেলাল উদ্দিন রইল শুধু তোমারই আশায়
আমায় বাসিও না ভিন, সুখে থাকব চিরদিন
তোমার চরণে হইয়া দাসীরে।।
১৯৮)
মনরে তুই আর কতদিন খেলবি রঙ্গের খেলা
সামনে তোর ঘোর অন্ধকার আকাশে নাই
বেলা।।
ভব নদী হইতে পার,
সঙ্গের সাথী কেউ নাই তোমার,
কি ভয়ংকর ভাব,
একবার বসে নিরালা।।
পড়বেরে তুই ঘোর সংকটে,
কেউ আসবে না তোর নিকটে,
পার ঘাটেতে টেকবে বটে,
বুঝবে কি জ্বালা।।
রঙ্গে ডুবে রইলে মিছে,
গনার দিন তো ফুরাইতেছে,
হেলাল উদ্দিন কাঁদিতেছে,
(এখন) বিদায়ের পালা।।
১৯৯)
আগে কররে মন সাধনা, আগে কররে মন সাধনা,
তন্ত্র-মন্ত্র না শিখিয়া কালনাগ ধইর
না,
না বুঝিয়া নাগের মাথায় হাতখানি বাড়াইও না।।
তারা নাগিনী জাতি, পুরুষের করে যে ক্ষতি,
জাতি ধর্ম কিছুই মানে না এই তাদের
রীতি,
তাদের কাছে চলে না শক্তি, পাইবে শুধু
যন্ত্রণা।।
তুমি গুরু ধর না, মন্ত্র শিখ না,
মন্ত্র শিখে কালনাগ ধরলে দংশন করবে
না।
কালনাগিনী মন্ত্র ছাড়া, বাধ্য কভু হবে না।।
গুরু যে করে সাধন, পাইয়াছে অমূল্য রতন,
নিরধনিয়ার ধন, তিনি অন্ধেরই নয়ন।
হেলাল উদ্দিন কয় সে মহাজন, তার কিছু নাই
ভাবনা।।
২০০)
প্রাণ বন্ধুয়ার আশার আসে একা বসে দিন কাটাই,
কোন বা দেশে গেলে তারে পাই।।
নতুনও যৌবনের বেলা,
প্রেম শিখাইয়া ছেড়ে গেলা,
এখন আমি হই একলা
চোখের জলে বুক ভাসাই।।
কি করিব কোথায় যাব,
তাহার সন্ধান কেমনে পাব,
একা ঘরে কেমনে থাকব,
কি দিয়া মোর মন বুঝাই।।
যদি বন্ধুর দেখা পাইতাম,
মনের দুঃখ সবি কইতাম,
হেলাল উদ্দিন শান্তি পাইতাম,
নইলে বাঁচার দরকার নাই।।
২০১)
আমি তোমায় ভালবাসি তুমি আমার সর্বস্ব,
প্রাণনাথ বন্ধু আমার হৃদয়ে আস।।
যেথায় থাক যে রূপ ধরে, হায়রে বন্ধু
সে রূপ একবার দেখাও আমারে,
বিরাজ করো ভুবন জুড়ে,
সৃষ্টিকে ভালবাস।।
ভুল করেছি ভুল স্বীকার করে হায়রে বন্ধু,
ক্ষমা চাই তোমার দরবারে।
রহিম নামের খাতিরে
রহমতের বারি বর্ষ।।
তুমি আমার হৃদয়ের রাজা, হায়রে বন্ধু,
আমি পাপী তোমারই প্রজা,
হেলাল উদ্দিন চাই না সাজা,
ভয় সংশয় বিনাশ।।
২০২)
তোমায় ভালবেসে দিতে পারি আমারই জীবন,
তোমার প্রেমে পাগল হইল আমার অবুঝ
মন।।
তোমারই মুখেরই হাসি, করেছে আমায় উদাসী
পরেছি প্রেমেরই ফাঁসি, হয়েছি কুল
বিনাশী,
তোমায় কত ভালবাসি, বুঝাবো কেমন।।
তোমারই মোহনী অঙ্গ, করিবে ঋষির ধ্যান ভঙ্গ,
আকুল হয় ভ্রমর পতঙ্গ, মন চায় তোমারই
সঙ্গ।
কি বলব তোমার প্রসঙ্গ তুমি চাঁদেরই মতন।।
তোমারে বুঝাই কি করে, মন চায় শুধু তোমারে,
রাখিব হৃদয় বাসরে বেঁধে মায়ারই ডোরে,
হেলাল উদ্দিন যাব মরে তোমারই কারণ।।
২০৩)
সাধন বিনে হবে মন তোর অকারণে সাধু সাজন
হৃদয় কালি লুপ্ত করে ভাব সিন্ধুতে কর
অবগাহন।।
ঐশ্বর্য আর যশের লোভে,
সাধু বেশে রইলে ডুবে।
ছদ্মবেশে কি ফল হবে,
সাজলে রে শয়তানের বাহন।।
সর্বপ্রকার অপকর্ম,
ত্যাগ করে মান সত্য ধর্ম।
মনে রেখে পাপের কর্ম,
বাইরে কেন কর সাজন।।
হেলাল উদ্দিন কয় সাধুর বাজার,
গিয়ে সেথায় কর ব্যাপার।
সাধনায় সার কর উদ্ধার,
হবে রে তুই শ্রদ্ধাভাজন।।
২০৪)
আমার মনের আশা পুরল না, প্রাণ বন্ধুয়ার দেখা
পাইলাম না,
দেখা দিয়া প্রাণ বন্ধু পুরাও মনের
বাসনা।।
আশা দিয়া কেন মোরে,
নিলায় না তোমার ধারে।
কি দোষ পাইয়া রইলে দূরে,
একবার এসে দেখলা না।।
তোমারে জানিয়া আপন,
দেখেছিলাম সুখের স্বপন।
সেই সুখ ভাঙ্গলে অকারণ
পাইয়া পরের মন্ত্রণা।।
এই কি, ছিল তোমার মনে,
কাঁদাইতে নিশিদিনে।
ডাকে তোমায় হেলাল উদ্দিনে,
তোমার কি দয়া হয় না।।
২০৫)
তুমি তুমি আমায় ছেড়ে যেও না,
না না তোমায় ছাড়া বন্ধু আমি প্রাণে
বাঁচি না।।
ধন্য আমার জীবন আমি পাইয়া তোমারে,
যেতে দিব না রাখব বেঁধে মায়ার তরে,
তোমার লাগি, সকল ত্যাগী, আর কিছু চাহি না।।
আদর সোহাগ দিয়ে তোমায় রাখিব যতনে,
আমি ফুল তুমি ভ্রমর আমার মনবাগানে,
ফুলে বসি, দিবানিশি, মধু পান কর না।।
বিনয় করি কই তোমারে দুটি চরণ ধরি,
যেতে যদি চাও চলে যাও বুকে মেরে
ছুরি,
বাসিলে ভীন, হেলাল উদ্দিন, কোথায় যাই বল না।
২০৬)
বহু দিনে প্রাণবন্ধু পেয়েছি তোমায় মনের
বাগিচায়,
আমার মনের
বাগিচায়।।
যাইতে দিব না বন্ধু যদি প্রাণ যায়
আজ নিশিতে খেলব পাশা আমরা দুজনায়,
বকুল ফুলের মালা দিব তোমারই গলায়।।
আদর সোহাগ দিব বন্ধু আমি যে তোমায়
যতনে রাখিব আমার মনের পিঞ্জিরায়,
আর ব্যথা দিও না আমায় বলি যে তোমায়।।
হাতে ধরি পায়ে পড়ি ভুল না আমায়
নইলে আমি প্রাণ ত্যাজিব ঝাঁপ দিয়ে
যমুনায়,
হেলাল উদ্দিন থাকব সদায় চরণও সেবায়।।
২০৭)
ও বন্ধু কোথায় চলে যাও ও বন্ধু কোথায় চলে
যাও,
সবার আগে আমার পানে একবার ফিরে চাও,
বন্ধু কোথায় যাও কোথায় যাওরে।।
দেখে তোমার চান্দ মুখ পাশর না ও না যায়,
কেমনে ছাড়িয়া তুমি যাইবায় রে আমায়,
তোমারই বিরহের জ্বালায় কেন আমারে কাঁদাও।
অঙ্গে আমার নতুন যৌবন কারে করি দান,
তুমিবিনে ফলের মধু কে করিবে পান,
তুমি যে আমার জানের জান, ধরি তোমার পাও।।
তুমি ছাড়া এভুবনে আপন কেহ নাই,
হেলাল উদ্দিন কয় চরণে দিও আমায় ঠাঁই,
চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই থাকবে কথা দাও।।
২০৮)
ভাবছ কি বসিয়ারে মানুষ ভাবছ কি বসিয়া
পরপারে যাওয়ার সময় আসিল গনিয়া রে,
কি জবাব দিবে রে মন তুই কয়বরেতে গিয়া।।
সময় থাকতে পর পারের কররে কামাই
আল্লাহ নবীর নাম ছাড়া আর কোন গতি
নাই,
কয়দিনের মুসাফির সবাই, দেখলে না ভাবিয়া রে।।
অন্ধকার কবরের মাঝে থাকবে রে একেলা
বিছানা নাই মাটির ঘরে নাই দরজা
জানালা,
সেই ঘরেতে কত জ্বালা, বুঝবে সেথায় গিয়ারে।।
সময় হলে যেতে হবে কেউ রাখতে পারবে নাতো
আমার আমার কইয়া রে মন আয়ু হল গত,
হেলাল উদ্দিন অবিরত নাম জপ বসিয়া রে।।
২০৯)
আসে যদি বন্ধু মোর বাসরে
তারে দেখিব নয়ন ভরে রে।।
আতর গোলাপ চুয়া চন্দন অঙ্গে দিব ছিটাইয়া
আজ নিশিতে খেলব পাশা আমরা দুজন
মিলিয়া।
রাখিব হৃদয় পিঞ্জরে।।
ফুল তুলিয়া মালা গেঁথে দিব বন্ধুয়ার গলায়,
জীবন যৌবন সঁপে দিব বন্ধুর দুটি
রাঙ্গা পায়,
যেতে নাহি দিব রাখব ধরে রে।।
কত কথা বলব আমি প্রাণ বন্ধুয়ার সনে
একবার যদি এসে দাঁড়ায় আমারই সামনে,
হেলাল উদ্দিনের এই আশা রে।।
২১০)
কে এমন দরদী আছে, খবর নিয়ে যাবে আমার
বন্ধুয়ার কাছে,
বন্ধু বিনে এ জীবনের মূল্য কী আছে।।
বন্ধুয়ার ছবি আমার হৃদয়ে আঁকা,
সেই রূপ ভুলে এখন যায় না থাকা,
ও রূপে কী মধুমাখা যাদু করেছে।।
কেন বন্ধু ভুলে গেল আমারই কথা,
কত কষ্টে আছি নিয়ে বিরহ ব্যথা
জানি বন্ধুর নাই মমতা নিদয় হয়েছে।।
কত আশা ছিল বন্ধু আসিবে একবার,
এ জীবনে করেছিলাম কামনা যাহার,
হেলাল উদ্দিন প্রাণ বন্ধুয়ার আশায় রয়েছে।।
২১১)
আদর করে পুষেছিলাম পাখিটারে
আমি দেখলাম না তারে দুটি নয়ন ভরে।।
পাখি ঘুরে বেড়ায় যথায় তথায়,
একবার দেখা দেয় না আমায়,
খাওয়াই তারে যা খাইতে চায়,
তবু আপন হয় না রে।।
মাটির খাঁচায় আছে স্বাধীন,
উড়ে যাবে হঠাৎ কোনদিন,
পাখিটার হৃদয় কঠিন
যাবে অচিনপুরে রে।।
একদিন নিবে চিরবিদায়,
আসবে না আর মাটির খাঁচায়,
হেলাল উদ্দিন পাখির মায়ায়,
সদায় বসে কান্দিরে।।
২১২)
আমি তারে ভালবাসি রে আমি তারে ভালবাসি,
আইল নারে প্রাণের বন্ধু আমার মন হইল
উদাসী রে।।
প্রেম শিখাইয়া বন্ধে আমার ওলো সখিরে
করল কুল বিনাশী,
সে বিহনে শূন্য বাসর আমি কাঁদি দিবানিশি
রে।।
বন্ধের লাগি এ জগতে ওলো সখিরে
হইলাম আমি দোষী,
আসবে কী মোর প্রাণ থাকিতে হায়রে আমার কালো
শশী রে।।
দুই নয়নে দেখিয়া যাই ওলো সখিরে
বন্ধুর মুখে হাসি,
নইলে হেলাল উদ্দিন প্রাণ ত্যজিব আমার গলে
দিয়া ফাঁসি রে।
২১৩)
আমারে কেন ভুলেছ
তুমি এত নিষ্ঠুর হয়েছ।।
আমি তোমায় ভাবি দিন রজনী
ঝরে সদায় চোখের পানি রে বন্ধু,
আমায় ভুলে পাষাণে মন বেঁধেছ।।
মন প্রাণ তোমাকে দিয়ে
বুক ভরা ব্যথা নিয়ে রে বন্ধু,
দেখে যাইও কত সুখে রেখেছ।।
মনের আশা মনে রইল
তোমায় দেখা নাহি হল রে বন্ধু,
হেলাল উদ্দিনরে কাঁদাইয়া কি সুখ পেয়েছ।।
২১৪)
প্রেম করেছি বলে গেল জাতি কুল,
আমি তার প্রেমে কান্দিয়া আকুল।।
প্রথম আমি প্রেম করেছি বন্ধুরে জেনে আপন,
মন প্রাণ সঁপে দিয়া সার হলো আমার
কান্দন,
কেমনে রাখি এ জীবন, যেমন ঝরা ফুল।।
থাক বন্ধু তুমি সুখে আমি মরি দুঃখে,
তোমার সাথে প্রেম করিয়া পড়েছি
বিপাকে,
একবার এসে যাইও দেখে, না করিও ভুল।।
আগে যদি জানতাম তোমার প্রেমে এত জ্বালা,
নানা জাতি ফুল তুলিয়া না গাথিতাম
মালা,
হেলাল উদ্দিন বিদায় বেলা, পাই যে চরণ ধুল।।
২১৫)
ও বন্ধুরে তুমি যাইও না ছাড়িয়া
তুমি গেলে অভাগিনি থাকব কারে লইয়া,
বন্ধু যাইও না রে।।
ও বন্ধুরে তোমায় পাইয়া আশা নিয়া রে,
ও বন্ধু বিছানা সাজাইয়া,
আজ নিশি পোহাব আমি তোমায় বুকে নিয়া।।
ও বন্ধুরে হাতে ধরি পায়ে পড়িরে
ও বন্ধু বলি বিনয় করিয়া,
সারা জীবন থাকব তোমার চরণ দাসী হইয়া।।
ও বন্ধুরে এ নব যৌবন আমার রে,
ও বন্ধু তোমায় দান করিয়া
প্রেম যমুনায় খেলব সাঁতার দুজনে মিলিয়া।।
ও বন্ধুরে আতর গোলাপ চুয়া চন্দন রে
ও বন্ধু অঙ্গেতে ছিটাইয়া
হেলাল উদ্দিন গান শোনাবে বেহালা বাজাইয়া।।
২১৬)
আয় লো সখি জলের ঘাটে জল আনিতে যাই,
জলের ছলে যদি আমার বন্ধুর দেখা পাই।।
নিত্য আসে যায় বন্ধু বাঁশরী বাজাই,
বাঁশির সুরে নাম ধরিয়া ডাকে রাই
রাই।।
দুই নয়নে দেখে তারে পোড়া প্রাণ জুড়াই,
বন্ধু বিনে অভাগিনির বাঁচার উপায়
নাই।।
মন প্রাণ দিয়াছি তারে ভুলার সাধ্য নাই
হেলাল উদ্দিন প্রেম আগুনে পুড়ে হইলাম
ছাই।
২১৭)
বন্ধু দেখলা
না বন্ধু দেখলা না রে
আমার মরণকালে তুমি দেখলা না।।
কোথায় আছ কত
সুখে করিয়া দেওয়ানা
বন্ধু করিয়া দেওয়ানা,
এত নিষ্ঠুর
হইবা তুমি,
বন্ধু আগে জানি না।।
আজ আসবে কাল
আসবে করি যে ভাবনা
বন্ধু করি যে ভাবনা,
প্রাণের
বন্ধু তুমি এসে
আমার খবর নিলা না।।
হেলাল
উদ্দিন তোমায় ছাড়া প্রাণে তো বাঁচি না
বন্ধু প্রাণে তো বাঁচি না,
একবার মোরে
দেখে যাইও,
বন্ধু আমায় ভুলো না।।
২১৮)
প্রেমের
আগুনে জ্বলে পুড়ে হইলাম ছাই
আগুন কি দিয়া নিভাই।।
ঘরেতে আগুন
লাগিলে,
আগুন নিভে জল ঢালিলে,
প্রেম আগুনে
জল ছিটাইলে,
দ্বিগুণ জ্বলে তাই।।
সে আগুন
দেখা যায় না,
কইলে কেউ বিশ্বাস করে না,
প্রেমিক
বিনে কেউ জানে না,
মনে শান্তি নাই।।
আমি যার
আগুনে পুড়ি,
তারে যদি ধরতে পারি,
হেলাল
উদ্দিন সবি ছাড়ি,
তাহার সঙ্গে যাই।।
২১৯)
ভালবাসার এত
জ্বালা গো সখি সহিব কেমনে,
আমারে জ্বালাইলো বন্ধে বিচ্ছেদের আগুনে গো।।
যার লাগিয়া
দুঃখ সইলাম গো
তারে দেখলাম না নয়নে,
একবার তারে
পাইলে রাখতাম,
হৃদয় সিংহাসনে গো।।
কাকুতি
মিনতি করি গো
আমি ডাকি মন প্রাণে,
ডাক শুনে
না, দেখা দেয় না,
কাঁদায় নিশিদিনে গো।।
অশান্ত মন
শান্ত হবে গো
আমার বন্ধুয়ার মিলনে,
বন্ধু ছাড়া,
জিতে মরা,
কয় হেলাল উদ্দিনে গো।।
২২০)
যাবার বেলা
বলে গেলে তুমি আসবে ফিরে আসবে,
সেই যে গেলে তুমি আর এলে না বল আমার কি হবে।।
প্রতিশ্রুতি
দিয়ে আমায়,
হাসিমুখে তুমি নিলে বিদায়,
আমি ভুলতে
পারিনি আজও তোমায়
কোন দিন দেখা হবে।
না আসিতে
যদি মনে ছিল,
কথা দিলে কেন আমায় বল,
আমার আশার
প্রদীপ নিবে গেল,
সবাই দেখে হাসবে।।
আমি তোমায়
কত ভালবাসি,
আমার প্রাণের চেয়ে তুমি প্রিয় বেশি,
হেলাল
উদ্দিনে কয় তুমি একবার আসি,
আমায় সঙ্গে নিবে।।
২২১)
ভাল আর মন্দ
বুঝে না জানে শুধু শয়তানি,
বেআক্কলের কথা হুনছনি।।
বেআক্কলের
কথায় ছলি,
আকলের লুটায় ভরছে ছালি,
কাঁধে লইয়া
কুলি মালি,
হাটে যায় কেউ লইবনি।।
গিয়ান আর
বুদ্ধির টেলায়,
রাইত ওইলে কিলা ঘুমায়,
চুরি করি
নিবা মশায়,
মশরী টাংগাইছতনি।।
আমারে তুই
আকল দিছ না,
ঝিনুক ছাড়া মুক্তা হয় না,
বেল গাছে
তাল ধরে না,
হেলাল উদ্দিন কয় বুচ্ছনি।।
২২২)
আর কতদিন
বন্ধু বলে ডাকি প্রাণ সখি গো,
বন্ধুরে আন একবার দেখি
বন্ধুয়া
বিহনে আমার ঝরে সদায় দুই আঁখি।।
সখি গো পাই
না যদি প্রাণ বন্ধুরে,
কি লাভ হবে ডেকে তারে,
তবু ডাকি
বিশ্বাস করে,
আসবে আশা রাখি।।
সখি গো
বন্ধে যদি করে গ্রহণ,
সঁপে দিতাম এ দেহমন,
করিয়া
আত্মসর্মপণ,
হইতাম আমি সুখি।।
সখি গো বলি
আমি বিনয় করি,
করো না আর বেশি দেরি,
আসতে বল
তাড়াতাড়ি
কাঁদে পরাণপাখি।।
সখি গো কঠিন
হৃদয় পাষাণ হিয়া,
আমারে মারে কান্দাইয়া,
হেলাল
উদ্দিন কয় ভাবিয়া,
কেমনে সইয়া থাকি।।
২২৩)
আমার মনের
মানুষ আইলো না গো সই,
মন প্রাণ দিয়াছি যারে তারে ছাড়া কেমনে রই।।
সই গো
সই-সঙ্গী ছাড়া একা একা, দায় হলো গৃহে থাকা,
প্রাণ সখা, লুকি দিল কই,
পাখা থাকলে
যাইতাম উড়ে, দেখতাম বন্ধু কত দূরে,
পাইলে তারে, চরণ দাসী হই।।
সই গো সই-
আমারে ভাবিয়া পর, বন্ধু হইল দেশান্তর,
এই দুঃখ মোর, কার বা কাছে কই,
ঘুরি আমি
পাগল বেশে, শুধু বন্ধুয়ার উদ্দেশ্যে,
আশার আশে, তাহার খবর লই।।
সই গো সই,
ভক্তি ভাবে করজোড়ে, ডাকি সদায় প্রাণবন্ধুরে,
রইল দূরে, আমি কি তার নই,
বন্ধু যদি
আপন হইত, একবার এসে দেখে যাইত,
হেলাল উদ্দিন পাইত বন্ধু ঐ।।
২২৪)
শ্যামের
লাগি কেন মন উতালা গো রাই অবলা,
শ্যামের লাগি কেন মন উতালা,
শ্যাম গিয়া
মথুরাপুরে, কুবজার প্রেমে ধরা পড়ে,
তোমায় মারে দিয়া বিরহ জ্বালা।।
শ্যাম হইল
রাজা মথুরায়, প্রেম ডোরে বেঁধে কুবজায়,
প্রেমের নেশায়, হইল আত্মভোলা,
তোমারে
ভুলিয়া শ্যামে, কুবজারে বসাইল বামে,
ব্রজধামে, তুমি সে একেলা।।
ব্রজে শ্যাম
আসবেনি ফিরি শুন ওগো রাই কিশোরী,
প্রেমে পড়ি, কেন কুল ডুবাইলা,
হেলাল
উদ্দিন কয় জপ নাম, ভাগ্যে থাকলে পাবে শ্যাম,
মনষ্কাম, পুরাবে বংশিওয়ালা।।
২২৫)
এসো, এসো,
প্রাণবন্ধু এসো আমার ঘরে,
ভালবাসি আমি যে তোমারে।।
অপেক্ষা আর
করব কত,
তুমিহীনা মর্মাহত ওরে
চোখের জলে
অবিরত,
ডাকি গানের সুরে।।
আমায় কেন
দুঃখ দিলা,
সরলে গরল মিশাইলা ওরে,
ভালবাসার কি
যে জ্বালা,
সইব কেমন করে।।
কল্পনাতে আঁকি
ছবি,
শুধু তোমার কথা ভাবি ওরে,
হেলাল
উদ্দিন করে দাবি,
দেখিতে তোমারে।।
২২৬)
পাষাণের মত
গুলি করে মানুষ হইয়া মানুষ মারে,
অন্যায় আর অবিচারে ছিনতাই আর সন্ত্রাসী,
মানুষে
মানুষে নাই ভালবাসাবাসি।।
মানুষরূপি
রাক্ষসের দল, লইয়া বন্দুক আর পিস্তল,
টাকার জন্য হইয়া পাগল, হানা দেয় আসি,
গাড়ি কিংবা
বাড়িতে, না হয় রাস্তায় চলিতে,
অস্ত্র ধরে বুকেতে নরপিচাশি।।
ককটেল বোমা
মারি গলে ধরে ছুরি,
সর্বস্ব নেয় কাড়ি, দেয় অট্টহাসি,
এরা
স্বার্থের লোভে অন্ধ, বুঝে না ভাল মন্দ,
যাহা তাদের পছন্দ, করছে দিবানিশি।।
জোর করে নারী
ধর্ষণ, কেউ করে অপহরণ,
দাবি করে মুক্তিপণ, গোপনে বসি,
হেলাল
উদ্দিন কয় এসব ছাড়ো, মানুষের সেবা কর,
চিন্তা কর, এই ভবে আমরা কয় দিনের প্রবাসী।।
২২৭)
ইহ জনমে
আমায় যত পার ব্যথা দাও নিরবে সইব,
তোমার দেয়া ব্যথা আমি সুখ ভেবে নেব।।
জন্ম থেকে
আজ অবধি যত ভুল করেছি,
ভুলের মাশুল দিতে হবে হিসাবে তা জেনেছি,
তোমার
কৃপাদৃষ্টির আশায় আছি, মুক্তি পাইব।।
রিপুর
তাড়নায় আমি চলেছি উল্টো পথে,
ভালো মন্দ না বুঝিয়া মনের সাধ মিটাইতে,
আমি পারিনি
তোমার হইতে কি জবাব দেব।।
দুঃখ আর
ব্যথা দিয়ে কাঁদাও আমি কাঁদব তাই,
পরজনমে যেন তোমার কাছে মায়া পাই,
হেলাল
উদ্দিন তোমারে চাই, দেখে সাধ মিটাব।।
২২৮)
তোমার কথা
ভাবতে ভাবতে সোনার তনু করলাম ছাই,
বন্ধুরে তোর দায়া মায়া নাই।।
আমি দয়াল
বলে ডাকি তোমারে,
তোমার দয়া পাইতে আশা রাখি অন্তরে,
একবার দেখা
দাও আমারে,
দেই তোমার নামের দোহাই।।
আমার জীবন
মরণ জানি তোমার ঠাঁই,
যা ইচ্ছা তা করতে পার আমার কিছু নাই,
হুকুমে
চালাও চলি তাই,
তোমারে আমি ডরাই।।
একা একা বসে
রাত্র দিন,
ভাবিতেছি তোমার আমার মিলন হয় কোনদিন।
এই আশাতে
হেলাল উদ্দিন,
পন্থপানে সদায় চাই।।
২২৯)
পাগল বেশে
ঘুরে বেড়াই কি করিব হায়রে হায়,
কোথায় যাব
তার তালাসে যারে আমার মনে চায়।।
প্রাণো
বন্ধুর দেখা পাইতে, হাঁটতে বইতে খাইতে শুইতে
ভাবি আমি শুধু তাহার দায়,
কোন দিন
আসবে দেখা দিতে বসে আছি অপেক্ষায়।।
কবে বন্ধুর
দয়া হবে, কাছে আসবে প্রাণ জুড়াবে
কইতাম মনের দুঃখ নিরালায়,
লোকে নাহি
মন্দ কইত জড়াইয়া ধরতাম গলায়।।
নাম শুনিয়া
পাগল হইলাম, আমায় আমি সঁপে দিলাম,
যদি রাখে চরণও সেবায়,
হেলাল
উদ্দিন ধন্য হইত বন্ধুরে পাইয়া ধরায়।।
২৩০)
আমারে
কাঁদাইয়া যদি তুমি সুখ পাও বন্ধু,
যত পার ব্যথা দাও যত পার আমারে কাঁদাও।
দুঃখের
সাগরে ভেসে সারা জনম গেল,
সুখ নামের সুখ পাখিটা ধরা নাহি দিল,
কেন পাখি
দূরে রইল
কোথায় গিয়ে হইল উধাও।।
এমন সুখ চাই
না আমি যে সুখে শান্তি নাই,
সুখ ভোগে মত্ত্ব হয়ে তোমাকে যদি হারাই
যে সুখে
তোমারে পাই,
সেই সুখের তরীতে উঠাও।।
তোমায় তুষ্ট
করতে যদি আমি কষ্ট পাই,
কষ্টকে বরণ করিব সুখের দরকার নাই,
হেলাল
উদ্দিন তোমারে চাই,
একবার এসে সামনে দাঁড়াও।।
২৩১)
মানুষে
মানুষে কেন এত ব্যবধান
কেউ ধনী কেউ গরিব কেউ জ্ঞানী কেউ অজ্ঞান।।
কেউ অন্ধ
কেউ মন্দ কেউ বন্দ কাটে ধান,
কেউ কোঠে কেউ মাঠে কেউ হাটে বর্তমান,
শেখ সৈয়দ
মগল ফাটান,
সবাই এক মায়ের সন্তান।।
কেউ গাড়ি
কেউ বাড়ি কেউ মারি দৌলতবান,
কেউ সুদে কেউ ঘুষে কেউ বসে টাকা পান,
মানতে চাই
না ধর্ম বিধান,
নামে মাত্র মুসলমান।।
কেউ মানুষ
কেউ অমানুষ কেউ বেহুঁশ নাই তার শান,
কেউ নষ্ট কেউ ভ্রষ্ট কেউ তুষ্ট করছে ধ্যান,
হেলাল
উদ্দিন কয় শেষ প্রস্থান,
ব্যবধানের সমাধান।।
২৩২)
না জানিয়া
না বুঝিয়া গো সখি পিরিত করিয়া
কোন বা দেশে রইল ভুলে প্রাণবন্ধু কালিয়া গো।।
দরদী কেউ
থাক যদি গো বন্ধুরে আন গিয়া
ও তার চরণ তলে পড়ে থাকব চিরসুখী হইয়া গো।।
আর কত দিন
বন্ধুর আশায় গো সখি থাকব পন্থ চাইয়া
কি সুখে রইয়াছে বন্ধু আমারে ভুলিয়া গো।।
আশা নাই আর
আমার মনে গো আমি যাইব মরিয়া
আমার প্রাণপাখি উড়ে যাবে দেহ শূন্য করিয়া গো।।
বিনয় করে
কইও তারে গো যদি না আসে ফিরিয়া
হেলাল উদ্দিন প্রাণ ত্যাজিব প্রেম শেল বুকে লইয়া গো।।
২৩৩)
কেন এসেছ
তুমি আমায় জ্বালা দিতে,
যে জ্বালা দিয়েছ আমি পারিনি ভুলিতে।।
দুঃখ ব্যথা
নিয়ে আমি একা আছি ভাল
আবার কেন এলে তুমি আমার কাছে বল,
তোমার পথে
তুমি চল,
থাক তোমার মতে।।
আমার মনে
আঘাত দিলে অন্যেরই কথায়
সেই আঘাতে হয়ত তুমি একদিন কাঁদিবায়,
কর্মফল ভোগ
করিবায়,
কষ্ট হবে সইতে।।
স্বার্থ
আদায় করে যারা চলে যায় দূরে
অকৃতজ্ঞ হয়ে অনেক সত্য গোপন করে,
হেলাল
উদ্দিন কয় আমারে,
এসো না কাঁদাইতে।।
২৩৪)
অনেক দিন
পরে তুমি এলে আমার ঘরে,
আমি কি দিয়া সেবিব তোমারে।।
তোমায়
পাওয়ার আশায় কত ব্যথ্যা সয়েছি,
তোমার আগমনে আমি ধন্য হয়েছি,
এখন সব
ব্যথা ভুলে গেছি,
ভেসে সুখ সাগরে।।
কি দিয়া
তোমারে আমি করিব বরণ,
কোথায় রাখব কেমন করে করিয়া যতন,
বিরহে জ্বলে
দেহ মন,
ছাই হয়েছি পুড়ে।।
কাছে এসো
বসো আমি দেখি তোমার মুখ,
প্রাণ খুলিয়া কইব কথা মনে যত দুঃখ,
হেলাল
উদ্দিন ছবি আঁকুক,
রাখতে হৃদয়পুরে।।
২৩৫)
আমারে পাগল
করিল চোখের ইশারায়,
অচেনা এক রূপসী কন্যায়।।
হেলেদুলে
হাঁটে আর বাঁকা চোখে চায়,
মায়াবিনির মুখের হাসি ভুলা নাহি যায়,
কাছে আয় না
কথা কয় না,
চোখ ফিরানো দায়।।
নাকে নোলক
কানে দুল কাজলকালো আঁখি,
হাতে বালা গলে হার যেমন চন্দ্রমুখি,
সবুজ শাড়ি,
গায়ে পরি,
চলেছো কোথায়।।
জানি না তার
নাম ঠিকানা দুলালী সে কার,
ধন্য হইতাম জীবনসাথি হইলে আমার,
কাছে আস,
পাশে বস,
হেলাল উদ্দিন চায়।।
২৩৬)
আমি চাইলাম
যারে পাইলাম না আমার মনের কথা কইলাম না,
কে বলিবে মনমানুষের ঠিকানা।।
আমায় ভুলে
কত দূরে, আছে বন্ধু জানি না রে,
আমার ঘরেতে মন বসে না, কি নিদারুণ যন্ত্রণা।।
ভক্তি
বিশ্বাস মনে রাখি, বন্ধু বলে আমি ডাকি,
বন্ধে আমার ডাক কি শুনে না, আমি তাহার দেওয়ানা।।
না পাইলে
প্রাণবন্ধুর দেখা, আমি কেমনে থাকিব একা,
বন্ধুর দয়া মায়া লাগে না, আমায় দেখা দিল না।।
আশার পন্থে
চেয়ে আছি যতদিন এ ভবে বাঁচি,
হেলাল উদ্দিনের বাসনা, করব তাহার কামনা।।
২৩৭)
আমারে
ছাড়িয়া যাইতে ছিল যদি মনে,
তবে কেন দেখা দিলে আসিয়া সামনে।।
অনুগ্রহ করে
যখন আমায় দেখা দিলে,
পুড়া প্রাণে শান্তি পাব তুমি কাছে থাকিলে,
ব্যথায় মরব
চলে গেলে,
বিচ্ছেদের আগুনে।।
যাইও না
থাকরে বন্ধু রাখ আমার কথা,
গলেতে পরাব মালা নানা ফুলে গাঁথা,
জানবে না
কেউ তোমার কথা,
রাখব গোপনে।।
সাধনার ধন
তুমি আমার মানিকও রতন,
একবার বল আমায় ছেড়ে যাবে না কখন,
হেলাল
উদ্দিন চায় সর্বক্ষণ,
থাকতে চরণে।।
২৩৮)
ও
প্রাণবন্ধুরে একবার এসে তুমি আমায় দেখে যাও না রে,
তোমার লাগি সদায় আমার মন কান্দে রে,
আড়ালে
থাকিয়া তুমি আমায় দেখ সর্বদায়,
চোখ থাকিতে অন্ধ আমি দেখতে পাই না তোমায়,
হায় রে
নিদারুণ জ্বালায়,
মরে যাব রে।।
না দেখিয়া
তোমায় আমি থাকি বল কেমনে,
মনের মানুষ ছাড়া মনের দুঃখ ব্যথা কে জানে,
তুমি ছাড়া এ
জীবনে,
কিছুই চাই না রে।।
যে যাহা চায়
তাহা তারে যদি কর দান,
কেউ তোমায় বলবে না কিছু লাশরিক তুমি মহান,
জানি কেউ
নাই তোমার সমান,
ভুবন জুড়ে রে।।
আমারে
কাঁদাইয়া তুমি কি সুখ পাইলে জানি না,
হেলাল উদ্দিনের কথা মনে কি তোর পড়ে না,
তোমায় পাইলে
মন বাসনা,
পূরণ হবে রে।।
২৩৯)
তুমি আমায়
ছেড়ে গেছো কেন জানি না,
আমি তোমায় ভুলতে পারি না,
বন্ধু ফিরে
আইলা না।।
তোমারে
হারিয়ে আমি একা কেমনে থাকি,
জল ছাড়া মীন বাঁচে না তুমি বুঝ নাকি।
তোমার লাগি
পরাণপাখি হইল যে দেওয়ানা।।
জানি না কার
সনে কোথায় বাঁধলে সুখের ঘর,
মনে কি পড়ে না তোমার লইতে মোর খবর।
আমার কাছে
তুমি সুন্দর, নাই তোমার তুলনা।।
অভিমান করে
তুমি চলে গেছো দূরে,
হেলাল উদ্দিন বলে আমার ভুবন শূন্য করে।
বাঁচি আমি
কেমন করে তোমায় যদি পাই না।।
২৪০)
প্রেম করিয়া টেকলাম বিষম দায়,
করি কী উপায়,
বন্ধুর চিন্তায় হইলাম রোগী, ঔষধ নাই সদায়
ভোগী,
সর্বত্যাগি শুধু তার আশায়।।
প্রেম ডুরে আমায় বেঁধে, ছেড়ে গেল সোনা
বন্ধে,
মন কান্দে, বিরহ জ্বালায়।
আশা ছিল ভালবাসি, শ্রী চরণে হইব দাসি,
পাশাপাশি থাকব দুজনায়।।
যার লাগিয়া হইল দাহ, আমার মন প্রাণ দেহ,
কয় না কেহ, সে রইল কোথায়।
হেলাল উদ্দিন বাঁচিব না, যদি আমি তারে পাই
না,
কি যন্ত্রণা মরি হায়রে হায়।।
২৪১)
জনম ভরে খুঁজলাম যারে পাই না গেল কই,
সই গো সই, আমি কি বন্ধুয়ার কেহ নই।
বন্ধুর শানে গাই কত গান,
তবু পাই না তাহার সন্ধান,
ছাড়িয়া লাজ কুলমান,
পাগলিনী হই।।
উতলা মন রয় না ঘরে,
খুঁজে বেড়াই শহর বন্দরে।
এক নজর দেখিতে তারে,
পথ চেয়ে রই।।
আসবে বন্ধু বিশ্বাস করি,
হেরিব রূপ নয়ন ভরি।
হেলাল উদ্দিন চরণ ধরি,
কোলে তুলে লই।।
২৪২)
অনুমানে বুঝি আমার সময় বেশি নাই,
ভাবিতেছি অচিন পথে একা কেমনে যাই।।
আয়ু যেদিন শেষ হইবে,
পরাণপাখি উড়ে যাবে।
মাটির দেহ মাটি হবে,
মনে ভাবি তাই।।
সময় থাকতে ভাঙ্গল না ভুল,
মানব গাছে ফুটল না ফুল,
কর্মদোষে হারিয়ে কুল,
অকুলে ডরাই।।
চলে যাব চিরতরে,
আসব না কোনোদিন ফিরে।
হেলাল উদ্দিন ভাবি যারে,
তারে যেন পাই।।
২৪৩)
কে গো তুমি কান্দ বসে একা নদীর পাড়ে,
কন্যা বল না আমারে কি দুঃখ অন্তরে।।
মুছো তোমার চোখের পানি,
মনের দুঃখ বল শুনি।
ভিড়াইয়াছি তরীখানি,
তোমার বিলাপ সুরে।।
বল তোমার মন বাসনা,
কারে খোঁজ ওলো কন্যা।
আমার সঙ্গে যাবে কিনা,
বল সত্য করে।।
উঠো কন্যা আমার নায়ে,
পাল তুলিয়া যাব বেয়ে,
হেলাল উদ্দিন তোমায় নিয়ে,
যাব অচিনপুরে।।
২৪৪)
সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে রে, একা থাকব কেমন
করে রে,
বিছানা নাই, মশারী নাই, বালিশ নাই
শিয়রে।।
আলো বাতাস ছাড়া সেই ঘর,
দরজা নাই জানালা নাই কি ভয়ংকর।
মাটি আর পোকা মাকড়
খাইবে দেহটা রে।।
চতুর্দিকে মাটি আঁধার ঘর,
কেমনে থাকিব আমি সেই ঘরের ভিতর।
মরণ স্মরণে অন্তর,
কাঁদে সদায় ডরে।।
এই দুনিয়া মুসাফিরখানা,
মাটির ঘর হবে সবার আসল ঠিকানা।
হেলাল উদ্দিন ভাবিলে না ভবের মায়া ছেড়ে।।
২৪৫)
ভবে এসে রিপুর বশে দিন কাটাইলাম,
আগে না ভাবিলাম।
ভবের মায়া জালে আমি বন্দি হইলাম।।
শৈশব গেলো কিশোর এলো যৌবনে দিল দেখা,
কামরিপুর যন্ত্রণায় ঘরে থাকা যায় না
একা।
ঘরে বাইরে দৌড়ে মনে রাত দিন অবিরাম,
মন্ত্র না শিখিয়া একটা সর্প ধরিলাম।।
কামসাগরে কামের নেশায় মত্ত হয়ে রই,
যৌবনের ঢেউ দেখে না কেউ করে থই থই।
কামিনীর সঙ্গ পাইয়া রঙ্গে মজিলাম,
নিজের হাতে নিজের মাথায় কুড়াল
মারিলাম।।
কামনদীতে জল নাই এখন হইল বালুচর,
রূপসাগরে দৌড়ায় না আর রঙ্গের বাড়ই
মোর।
হেলাল উদ্দিন টেকছি ফাঁদে বিধি হইলো বাম,
না বুঝিয়া যৌবনকালে মানিক হারাইলাম।।
২৪৬)
নয়নে হেরিলাম যারে ভুলিতে কি পারি তারে,
ঘরে বাইরে দৌড়ে আমার মন, আমি কি করি
এখন।।
পলকে এক ঝলক দেখা, সে রূপ ভুলে যায় কি থাকা,
মধুমাখা রূপেরই কিরণ।
দেখা দিয়া মন হরিল আমারে উদাস করিল,
কই লুকাইল পাই না চাঁদ বদন।।
দুঃখ ব্যথা লইয়া মনে, খুঁজি তারে পাই কেমনে,
নিশিদিনে করতেছি রোদন।
ফিরে আসবে এই বিশ্বাসে পথ চেয়ে আছি বসে,
থাকব পাশে, সেবিতে চরণ।।
হেলাল উদ্দিন স্বপ্ন দেখি, আমার বুকে হাত
রাখি,
বলছে ডাকি করতে অলিঙ্গন।
কোমল হস্তের পরশ পাইয়া, জেগে উঠি চমকিয়া,
দেখি চাইয়া, কাছে নাই সে জন।।
২৪৭)
সখি তারে আইনা দে সখি তারে আইনা দে
যার লাগিয়া পাগল হইয়া আমার মন
কাঁদে।।
দাউ দাউ করে জ্বলে বুকে পিরিতের আগুন,
সহিতে পারি না সখি আমার কথা শুন।
পষাণসম কি নিদারুণ,
দাগ লাগাইল হৃদে।।
আগে যদি জানতাম আমার হবে এমন দশা,
দিতাম না মন করতাম না তার সনে
ভালবাসা।
না বুঝিয়া সর্বনাশা,
টেকছি প্রেম ফাঁদে।।
আন তারে নয়ন ভরে দেখে প্রাণ জুড়াই,
হেলাল উদ্দিন কোলে লইয়া প্রেমআগুন
নিবাই।
নাইলে আর বাঁচার উপায় নাই,
প্রাণ যাবে বিষাদে।।
২৪৮)
আমার মন হইল চঞ্চল,
একা কেমনে থাকি বল।
বন্ধুয়ার লাগিয়া সদায় ঝরে চোখের জল।।
বন্ধুর টানে নিশিদিনে হয়েছি দুর্বল,
দেহ ছেড়ে পাখি উড়ে পলাইবে জংগল।।
কার আদরে ভুলে মোরে বানাইল পাগল,
প্রাণ বন্ধুয়ার এই উপহার ভালবাসার
ফল।।
কেন কাঁদায়, বন্ধু আমায় জানিয়া সরল,
তারে ভাবি, দিলাম সবি, যা ছিল
সম্বল।।
কয় হেলাল উদ্দিন, হও দয়াশীন, মিলনে মঙ্গল,
নইলে আমি বলব তুমি করিয়াছ ছল।।
২৪৯)
দয়াময় দয়াল আল্লায়, কোন জায়গার মাটি দিয়া
আদমকে বানায়।
কেন আদমকে বানাইলেন না সোনা রূপা মুক্তা
হীরায়।।
মস্তকে লাগিল মাটি পবিত্র মক্কার,
বায়তুল মুকাদ্দাসের মাটিতে হইল তার
গাড়।
আদনের মাটি পরয়ার,
আদমের পিঠে লাগায়।।
সিংহল দ্বীপের মাটি দ্বারা আদমের পিঠ হয়,
পূর্বাঞ্চলের মাটি দিয়া হইল হস্তদয়।
পশ্চিমের মাটিতে পদদ্বয়,
গড়িলেন হাঁটিবার দায়।।
বিভিন্ন জায়গার মাটি সংগ্রহ করিয়া,
অস্থি, চক্ষু, রক্ত, মাংস, রগ বানাইয়া।
হেলাল উদ্দিন কয় ভাবিয়া,
অগ্নি বায়ু পানি মিশাইয়া।।
২৫০)
আমার প্রাণ বন্ধু রে ভালবাসি তোমারে,
তুমি বিনে আর কে আছে এই সংসারে।।
ভালোবাসার
ফাঁদ পাতিয়া,
ছলনাতে মন ভুলাইয়া।
আমারে পাগল
বানাইয়া,
রয়েছ দূরে।।
না জেনে
পিরিতের ধারা,
হইলাম আমি সর্বহারা
নয়ন জলে
হইলাম সারা,
বাঁচি কী করে।।
হেলাল
উদ্দিনের কী জ্বালা,
কেমনে বুঝাই মুই অবলা।
কেন এত দুঃখ
দিলা,
সয় না অন্তরে।।
২৫১)
বড়পীর মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী,
তুমি আউলিয়া কুলের শিরমণি।।
আবু সালে জংগি মুছা তোমারই হলেন পিতা,
উম্মুল খায়ের ফাতেমা হন গর্ভধানি মাতা।
কি বলবো তোমার কথা, তুমি কত সম্মানি,
শোনে যারা ধন্য তারা তোমারও জীবনি।।
তোমায় গর্ভে রেখে মায়ে পড়তেন পবিত্র কোরআন,
১৮ পারা মুখস্ত করে হও তুমি শ্রেষ্ঠ
সন্তান,
জন্ম তোমার প্রথম রমজান, ৪৭১ হিজরী জানি,
দিনের বেলায় রাখ রোজা আল্লার কী
মেহেরবানি।।
কত মানুষ আউলিয়া হয় তোমার সঙ্গ পাইয়া,
তোমার মুখে আলাহতায়ালার অমৃত বাণী শুনিয়া,
কেরামতি দেখাইয়া হও সবার নয়নমণি,
হেলাল উদ্দিন তোমায় পাইতে কাঁদি দিন
রজনী।।
২৫২)
বৃষ্টি ভেজা এই নিঝুম রাতে তোমাকে মনে জাগে
তুমি ছাড়া এই আমাকে বড় একা লাগে।।
আঁধারে ভরা এই ভুবন,
তোমাকে দেখিতে চায় নয়ন।
তোমারই বিরহে চৌচির আমার,
হৃদয় গেছে ভেঙ্গে।।
তুমি আছ এই তনু মনে,
অনুভবে শিহরণে।
তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি,
থাকি অনুরাগে।।
ওগো প্রিয় তোমায় না দেখে,
ব্যথার পাহাড় আমার বুকে,
এমন হবে হেলাল উদ্দিন,
ভাবিনি তো আগে।।
২৫৩)
তোমাকে ভালবেসে মন সঁপেছি,
তোমাকে আপন করে পেতে চেয়েছি।
তাই তো তোমার নামে আমার জীবন লিখে দিয়েছি।।
যেদিকে তাকাই আমি দেখি শুধু তুমি,
তুমি ছাড়া সব আমার হল মরুভূমি।
মনের অজান্তে তোমাতে হারিয়ে গেছি।।
এই পৃথিবীর বুকে কেহ নাই আমার,
তোমায় ছাড়া কিছু চাইনি বলেছি কতবার।
তুমি আমার হও বা না হও আমি যে তোমারই আছি।।
মনের গভীরে তুমি লুকিয়ে আছো জানি,
ছিনিয়ে নিয়েছ ওগো মোর হৃদয়খানি,
হেলাল উদ্দিন দুই নয়নে তোমার ছবি এঁকেছি।।
২৫৪)
আদম বানাইলেন মাটি দিয়া, দেখ ভাবিয়া,
আদম বানাইলেন মাটি দিয়া।
যখন আল্লায় ইচ্ছা করে, আদম বানাইবার তরে,
ফেরেশস্তারে বলেন ডাকিয়া।।
জিব্রাইলকে ডেকে আল্লায়
শোনো বলি আমি তোমায়,
যাও দুনিয়ায়, মাটি আনো গিয়া।
জিব্রাইল মাটি নিতে, এলেন যখন দুনিয়াতে,
মাটি লাগল কাঁদতে আল্লার দোহাই দিয়া।।
মাটি আল্লার দোহাই দিলে,
মাটি নিলেন না জিব্রাইলে,
আল্লাহ বলে, যাও মিকাইল চলিয়া।
মিকাইল গেলে পরে, মাটি কাঁদে চিৎকার করে,
এলেন ফিরে মাটি না আনিয়া।।
তার পরে মাটি নিতে,
ইসরাফিল এলেন ধরাতে,
মাটি লাগল কাঁদতে ব্যাকুল হইয়া।
শুনে মাটির আহাজারি, ইসরাফিল গেলে ফিরি,
দিলেন আদেশ করি, আজরাঈল পাঠাইয়া।।
আজরাঈল মাটির কাছে গেলে,
মাটি আল্লার দোহাই দিয়া বলে,
যাও চলে, আমারে রাখিয়া।
আজরাঈল লাগলেন ভাবতে, আদেশ বড় নামের দোহাই
হাতে,
আদেশ পালন করতে গেলেন মাটি লইয়া।।
আল্লাহতায়ালা বলেন তখন,
মাটি তোমায় করল বারণ,
কিসের কারণ, এত নিদয় হইয়া।
এত নিষ্টুর হইলে যখন, সবার প্রাণ করতে হবে
হরণ,
হেলাল উদ্দিন এখন, কাঁদি মরণ ডরাইয়া।।
২৫৫)
বছর ঘুরে সবার দ্বারে ঈদ এসেছে,
আনন্দ আর উল্লাসেতে সবাই মেতে
উঠেছে।।
গ্রাম গঞ্জ আর শহর নগরে,
ভাসে সব খুশির জোয়ারে,
ঈদের খুশি সবার দ্বারে,
এসে জানান দিয়েছে।।
নতুন কাপড় কিনতে সকল,
হাট-বাজার করেছে দখল,
যার যা কিছু আছে সম্বল,
তা দিয়ে আয়োজন করতেছে।।
ঈদগায় গিয়ে নামাজ পড়বো,
বুকেতে বুক মিলাবো,
সালাম বিনিময় করবো,
সবাই সবার কাছে।।
গরিব ধনী সবাই সমান,
সহযোগিতার হাত বাড়ান।
একে অন্যের পাশে দাঁড়ান,
হেলাল উদ্দিন বলতেছে।।
২৫৬)
অপরূপ এক রূপের
মেলা
রূপের নাই যার শেষ
সে যে আমার জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ।।
সবুজে শ্যামলে ভরা যে দিকে তাকাই
এমনি অপূর্ব রূপ আর কোথাও নাই
যতই দেখি ভাললাগে হয় না দেখার শেষ।।
গাছে গাছে ফোটে যে ফুল বাউল করে গান
সকাল বেলা শুনি কত পাখির কলতান
এমন দেশে জন্ম নিয়ে ভাল আছি বেশ।।
রূপসী বাংলার এই রূপ দেখি নয়ন ভরে
আর কোথাও যাব নাকো এই দেশটাকে ছেড়ে
হেলাল উদ্দিন সুখে আছি দুঃখের নাই যে লেশ।।
২৫৭)
জন্মভূমি মাগো তুমি
আমার অহংকার
তোমার গায়ে সবুজ শাড়ি মন কাড়ে সবার।।
লক্ষ কোটি ছেলে মেয়ে
তোমার কোলে জন্ম নিয়ে
কী অপরূপ দেখি চেয়ে রূপেরই বাহার।।
কত পীর আউলিয়া সাধক
শিল্পি কবী বাউল বাদক
মাঠে ফসল ফলায় কৃষক
অভাব নাইরে আর।।
সাগর পাহাড় খাল বিল নদী
মাঝিরা গনি গায় ত্রিপদী
হেলাল উদ্দিন নীরবদি
রূপ দেখি তোমার।।
২৫৮)
মহান বিজয় দিবসে গাই বিজয়ের গান
মনো দিয়ে শোনেন তরুণ বৃদ্ধ নওজুয়ান।।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
৭১ এর ৭ই মার্চে ভাষণ করলেন দান
সেই ভাষণে পাইল মানুষ স্বাধীনতার ঘ্রাণ।।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে কত বীর সন্তান
স্বাধীন হতে অস্ত্র হাতে
মুক্তিযুদ্ধে যান
মাতৃভূমি মুক্ত করতে রক্ত করলেন দান।।
বীর বাঙ্গালী বীরের জাতি দিয়েছে প্রমাণ
মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হইল পাকিস্তান
বাংলার আকাশে উড়ে বিজয়ের নিশান।।
শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি যত শহীদান
জাতি ভুলবে না কখন তাদের অবদান
দোয়া করি আল্লাহ তাদের বেহেস্ত করেন দান।।
(নয় মাস) রক্তঝরা সংগ্রামেরই হইল অবসান
বিজয় এলো পালাইলো হানাদার শয়তান,
সবুজ শ্যামল সোনার বাংলা আল্লাহতায়ালার দান।।
হেলাল উদ্দিন সবার কাছে করি আহবান
প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রাখব দেশের মান
স্ত্রী খোঁজে স্বামী আজও মা খোঁজে সন্তান।।
২৫৯)
রক্ত দিয়েছি আর দেব প্রয়োজন হলে মরব
রাখব দেশের মান।
জন্মভূমি বাংলাদেশ আমার প্রাণের প্রাণ।।
একতায় হইয়া বদ্ধ,
অশান্তি করিব রুদ্ধ
দেশের জন্য করব যুদ্ধ,
উড়াইব শান্তির নিশান।।
সবাই মিলে শপথ নেব,
শোষণহীন সমাজ গড়ব
অন্যায়কে ধ্বংস করব,
মজলুমের করব উত্ত্বান।।
ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করব,
অনাচার দূর করিব
আঁধারে আলো ফুটাব
গাইব জয়ের গান।।
শহীদের স্মৃতি ধারণ করে,
অসমতা রাখব দূরে
হেলাল উদ্দিন সবার তরে,
করি আহবান।।
২৬০)
বাংলা আমার জন্মভূমি বাউল আমার মন
এই দেশকে ভালবেসে আছি পরষ্পর আপন।।
সংস্কৃতি মোর শিল্প স্বদেশ আমার মঞ্চ
সেই মঞ্চে দাঁড়াইয়া
সবুজ শ্যামল সোনার বাংলার রূপ দেখি চাইয়া
ভাবিতেছি অবাক হইয়া, প্রকৃতির মিলন।।
শিল্পী আর কবি আউলিয়া মনীষী
ধ্যানমগ্ন হইয়া
কতভাবে সুরে ছন্দে গেলেন রচিয়া
তাদের অনুসারী হইয়া, গড়তে চাই জীবন।।
দেশকে ভালবেসে করব দেশের কাজ
সকলে মিলিয়া
শোষণহীন সমাজ গড়ব এই প্রতিজ্ঞা নিয়া
হেলাল উদ্দিন কয় ভাবিয়া, এই আমার
পণ।।
২৬১)
পরাধীনতার গানী
মুছে জাগোরে বাঙ্গালী
অস্ত্র ধরো, যুদ্ধ করো, সকলে মিলি।।
পঁচিশে মার্চের কালোরাতে চালায় গণহত্যা
তাই তো সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিলেন
জাতির পিতা
সেই ডাকে, ঝাঁকে ঝাঁকে, সামনে এগিয়ে চলি।।
অনাচার আর অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে
রুখে দাঁড়ায় বাংলার মানুষ অস্ত্র
হাতে নিয়ে
মান বাঁচাতে শক্ত হতে চালিয়ে যায়রে গুলি।।
বাংলা মায়ের মান বাঁচাতে জীবন দিল যারা
তারাই ধন্য তারাই পূণ্য তারাই
সৃষ্টির সেরা
আজকের দিনে, হেলাল উদ্দিনে, জানাই
শ্রদ্ধাঞ্জলি।।
২৬২)
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই বাংলা চাই
মিছিল দিল যারা
বীর বাঙ্গালীর বীরের প্রতীক মুক্তিসেনা
তারা।।
মাতৃভাষা বাংলা ছাড়া বুঝে না আর অন্য
তাই তো তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে এই ভাষারই
জন্য
সহজ সরল বাংলার মানুষ বুঝে না বাংলা ছাড়া।।
রফিক সফিক সালাম বরকত আরও কত ভাই
বজ্রকণ্ঠে বলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই
ভাষার জন্য শহীদ হলো এই দামাল ছেলেরা।।
বাংলার মানুষ ভুলবে নাকো তাদের অবদান
ইতিহাসের পাতায় থাকবে চির অমান
শ্রদ্ধা জানায় হেলাল উদ্দিন দিয়ে নয়ন ধারা।।
২৬৩)
শিক্ষাবিহীন জীবন বৃথা
শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই
লেখা-পড়া কররে সবাই।।
যদি সুফল পেতে চাও
লেখা-পড়া করে যাও
সুখী সুন্দর জীবন গড়তে শিক্ষার বিকল্প নাই।।
সঠিকভাবে পড়ে যারা
সফলতা পায় যে তারা
যত্ন ছাড়া হয় না রত্ন
এই দুনিয়ায় দেখতে পাই।।
সবাই মিলে শপথ করি
সুন্দর একটা সমাজ গড়ি
হেলাল উদ্দিন কয় সবাই মিলে
আঁধারে আলো ফুটাই।।
২৬৪)
ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখ এলে মনে বড় কষ্ট হয়
সালাম বরকত রফিক জববার তাদের কথা
ভুলার নয়।।
রাজপথ জুড়ে মিছিল করে দামাল ছেলেরা
তাদের বুকে চালায় গুলি পাক হানাদাররা
গুলির আঘাতে প্রাণ দিতে বাঙ্গালী করে না
ভয়।।
সোনার দেশের ছেলেরা মাথা নত করে নাই
বাংলা মায়ের মান বাঁচাতে জীবন দিল
তাই
রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা পেলাম প্রাণের
বিনিময়।।
নবীন যাত্রী তোমাদের বলি তাদের মত হও
বিশ্ববাসী বুঝুক বাঙ্গালী পিছিয়ে
যাওয়ার নও
প্রয়োজনে হাতে অস্ত্র নিতে করবে না কোন
সংশয়।।
অকাতরে ঝরে গেল লক্ষ লক্ষ প্রাণ
জীবন দিয়ে রাখব মোরা স্বাধীনতার মান
হেলাল উদ্দিন কয় শুভ দিন আসবে সামনে
নিশ্চয়।।
২৬৫)
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পেলাম স্বাধীন দেশ
সেই স্বাধীনতা রক্ষা করব আসুক যতই
ক্লেশ।।
খুন ধর্ষণ আর চাঁদাবাজি ঘটায় প্রতিদিন
মানুষের আচরণ কেন বল এত হীন
অপরাধীর হয় না বিচার (তারা) হয় যে
নিরুদ্দেশ।।
অরাজকতা হানাহানি আর স্বার্থপরতায়
সাধারণ জনগণ এখন বড় অসহায়
অত্যাচারে জর্জরিত সোনার বাংলাদেশ।।
কঠোর হস্তে দুর্নীতিকে করবরে দমন
মাতৃভূমির মান বাঁচাতে রাখব জীবনপণ
কষ্টার্জিত স্বাধীনতা হতে দেব না শেষ।।
হেলাল উদ্দিন কয় শপথ করি মিলেরে সবাই
বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে যাব হাতে হাত মিলাই
ধনী গরিব সবাই মিলে থাকব মোরা বেশ।।
২৬৬)
আমার মন মজিল গো
মন মজিল বন্ধুয়ার প্রেমে,
প্রেমে
মজিয়া ডাকি প্রতি দমে দমে গো।।
আমি করেছি
আত্মসর্মপণ,
পাইতে বন্ধুর দরশন,
কাটাইব বাকি
জীবন,
প্রাণবন্ধুর নামে গো।।
হেলায় বেলা
হারিয়েছি,
সন্ধ্যায় অন্ধকারে আছি,
এখন আমি টের
পেয়েছি,
কোন দিন ধরবে যমে গো।।
নাম স্মরণে
রাত্র দিনে,
রইতে চায় মন বন্ধুর সনে,
দয়া চায়
হেলাল উদ্দিনে,
থাকতে ধরাধামে গো।।
২৬৭)
আমি কেমনে
থাকি ঘরে,
ঐ শোন বাজায় বাঁশি আমার নাম ধরে।।
নিষেধ কর
তারে সখি বাজাইত না বাঁশি,
পরাণ আমার নেয় কাড়িয়া মন করে উদাসী।
দেয় জ্বালা
দিবানিশী,
এই কি তার অন্তরে।।
সর্বনাশা
বাঁশি আমায় করিল পাগল,
পিরিতি করিলে জানি সার হয় চোখের জল।
এখন আমি কি
করি বল,
বাঁচি কেমন করে।।
চিরদিনের
জন্য যদি সঙ্গে নেয় আমারে,
মনের কথা বলবো তারে দেখবো নয়ন ভরে।
হেলাল
উদ্দিন বিনয় করে,
কইও বন্ধুয়ারে।।
২৬৮)
পিরিতের শেল
বুকে সই গো পিরিতের শেল বুকে,
কি দোষ পাইয়া প্রাণোবন্ধে যায় না আমায় দেখে।।
এ জীবনে
ভুলিবে না কহিল আমাকে,
এগো আপন জেনে দেহমন সব দিয়াছি যাহাকে।।
প্রেম করিয়া
বন্ধুর সনে পড়েছি বিপাকে,
এগো কলংকিনী বলে আমায় ডাকে পাড়ার লোকে।।
আমারে
কান্দাইয়া বন্ধু থাকো তুমি সুখে,
হেলাল উদ্দিন বলে ব্যথা যায় না বলা মুখে।।
২৬৯)
নামাজ পড়
রোজা রাখ মুমিন ভাই,
নামাজ রোজা আল্লাহর ফরজ।
না করিলে
উপায় নাই।।
বৎসর ঘুরে
আইল রমজান,
রোজা রাখ ভাই মুসলমান।
নামাজ পড়ে
চাও পরিত্রাণ,
ক্ষমা করবেন দয়াল সাঁই।।
রহমত
মাগফিরাত নাজাতে,
দয়াল আল্লার করুণাতে।
মনের আবেগ
মোনাজাতে,
যদি তাহার দিদার পাই।।
পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ পড়ি জামাতে,
রাত দিন কাটাই ইবাদতে।
সবাই মিলে
ইফতার করতে,
মনে কত শান্তি পাই।।
রোজা হয় আল্লার
নিয়ামত,
সিয়াম সাধনার একমাত্র পথ।
শুদ্ধভাবে
করে নিয়ত,
দয়াল আল্লার গুণ গাই।।
রহমত পূর্ণ
রমজান মাসে,
আত্মশুদ্ধি উপবাসে।
হেলাল
উদ্দিন কাঁদি বসে
আল্লার কাছে ফানা চাই।।
২৭০)
মহরমের দশ
তারিখে, সৃষ্টিকুল কাঁদে দুঃখে,
ইমাম হোসেন শহীদ হইলেন দাস্ত কারবালায়,
বেহেস্তে
থাকিয়া কান্দেন মা ফাতেমায়।
কান্দেন আলী নবীগণ,
পীর আউলিয়া
যতজন,
নবীর বংশ করল নিধন, নিষ্ঠুর এজিদায়।।
কারবালার
নিষ্ঠুর ঘটনা, আমি করে যাই বর্ণনা,
শোনেন ভাই বন্ধুগণা বলতেছি সভায়।
এজিদ ছিল
মাবিয়ার ছেলে মাবিয়া ইন্তেকাল করিলে,
ছলেবলে কল কৌশলে ক্ষমতা সে পায়।।
এজিদ
সিংহাসনে বসলে পরে, দেশে আদেশ জারি করে,
তাহার বাইয়াত গ্রহণের তরে, সবারে জানায়।
ইমাম হোসেন
করলেন ঘোষণা, জালিমের বাইয়াত হব না,
ছাড়িয়া সোনার মদিনা, চলে যান মক্কায়।।
বিশ্বের
অগণিত মুসলমান, হিজরত করে মদিনা যান,
অনাবিল শান্তি পান, নবীজির রওজায়।
প্রিয় নবীর
স্নেহভাজন, ফাতেমার কলিজার ধন,
মক্কাতে করিলেন গমন, হৃদয় ফেটে যায়।।
হযরত আলীর
খেলাফতকালে (কোফায়) রাজধানী স্থানান্তর করিলে,
রাসুলের ভক্ত সকলে, হোসাইনকে জানায়।
আপনি কোফায়
করেন আগমন, আমরা আছি সর্বক্ষণ,
কোফার জন সাধারণ, আছে অপেক্ষায়।।
আন্তরিক
শ্রদ্ধা ভক্তি, দেখাইল ইমামের প্রতি,
নিরাপত্তায় দিবারাতি থাকব সর্বজনায়।
(এত) আবেদন
নিবেদনের পরে, (ইমামের) চাচাতো ভাই মুসলিমেরে
পাটাইলেন কোফানগরে বিষয় জানার দায়।।
মুসলিম
কোফাতে গেলেন, তার দুটি সন্তান সঙ্গে নিলেন,
পরিস্থিতি অনুকুলে দেখলেন পৌঁছিয়া কোফায়।
মুসলিম
ইমামের কাছে পত্র লিখেন, শিঘ্র কোফায় চলে আসেন
তারপরে কি ঘটল শোনেন প্রকাশ করা দায়।।
পত্র পাইয়া
ইমাম হোসেন কোফায় যাত্রা করিলেন,
মুসলিম হত্যার খবর পাইলেন দুখে বুক ফেটে যায়।
দশই মহররম
রোজ শুক্রবার, ইমামের প্রাণ করতে সংহার,
যুদ্ধের জন্য পাষাণ দুরাচার, আমন্ত্রণ জানায়।।
ফোরাত নদী
ঘেরাও করে, রাখল এজিদ পামরে,
পানির জন্য কষ্ট করে, পানি খাইতে না পায়।
অগণিত শত্রু
সেনা, ইমামের হাত থেকে রেহাই পেল না,
পিপাসায় প্রাণ বাঁচে না, নিলেন চিরবিদায়।।
ইমামের শির
কাটিল, আকাশ বাতাস কেঁপে উঠিল,
বিশ্ব ভূবন কাঁদিল, কারবালার ঘটনায়।
ন্যায়
প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি, ইমাম গেলেন দুনিয়া ছাড়ি,
(তাদের) মাগফেরাত কামনা করি, হেলাল উদ্দিন গায়।।
২৭১)
তোমার সাথে
আমার কোন কথা নাই,
তোমার পথে তুমি চলো আমার পথে আমি যাই।।
পাগল কি আর
গাছে ধরে,
মানুষ থেকে পাগল হয় রে।
পাগল ছাড়া
কে পাগল কয় রে,
পাগল পাগলের ভাই।।
তুমি হইলা
স্বার্থের পাগল,
তাই চিনলা না আসল নকল।
পাগলামিতে
পাইলে কি ফল,
হিসাব করে দেখ চাই।।
ঠিক নাই তোমার
কথায় কাজে,
দশটা কইলে বারোটা বাজে।
হেলাল
উদ্দিন যারে খুঁজে,
তারে বল কোথায় পাই।।
২৭২)
মাধবী বনে
খেলবো দুজনে প্রেম খেলা,
নিশিতে নিরলে আসিও একেলা।।
উদাসী নয়ন,
তোমারই কারণ,
মায়াবী রূপে যাদু করেছ আমার মন।
এসো তোমায়
করব বরণ,
পরাব ফুলের মালা।।
পূর্ণিমা
নিশি, ওহো প্রিয়সী,
সাজিয়ে রেখেছি বাসর দেখে যাও আসি।
দেখে তোমার
মুখের হাসি,
মিটাব মনের জ্বালা।।
সহে না দেরি
এসো হে কিশোরী,
তোমার কারণে আমি বনে বনে ঘুরি।
হেলাল
উদ্দিন বলে পিয়ারী,
তোমার পাগল শ্যাম কালা।।
২৭৩)
ও মন
যাইবারে যাইবা একদিন অন্ধকার কবরে,
হায়াতের রশি তোমার হঠাৎ যাবে ছিঁড়ে।।
মরণ কথা
স্মরণ হইলে অন্তর কাঁপে ডরে,
কি ধন লইয়া যাব আমি জগৎ স্বামীর ঘরে।।
যাহা ইচ্ছা
করিতেছো শুধু গায়ের জোরে,
শক্তি বল জোয়ারের মত গেলে আসে নারে।।
হেলাল
উদ্দিন কর্ম দোষে রয়েছি আঁধারে
আশা করি মুর্শিদ মাওলা নিবেন উদ্ধার করে।।
২৭৪)
ওই রূপসী
মেয়েটা পাগল করেছে মনটা,
লজ্জাবতীর লাজুক হাসি ললাটে তিলক ফোটা।।
ডাগর ডাগর
চোখ, মায়াবী তার মুখ,
দৃষ্টিনন্দন, মনের মতন, খোঁপায় পরা ফুলটা।।
রূপে
অনন্যা, নাই যার তুলনা,
দুটি অধর, কি মনোহর, ভালবাসার ঘোমটা।।
কয় হেলাল
উদ্দিন, সে উজ্জ্বল অমলিন,
ভালবাসি, কাছে আসি, শুনে যাও এই গানটা।।
২৭৫)
একটা পাখি
বসত করে আমার ঘরে
ডাক শুনে না কথা কয় না মায়া নাই অন্তরে।।
জন্ম থেকে
আজ পর্যন্ত,
ধরা দেয় না রয় উড়ন্ত।
আমার কথা
যদি শুনতো,
থাকত না আর দূরে।।
জানি না সে
কি উদ্দেশ্যে,
দেখা দেয় না রয় অদৃশ্যে।
মিছে তারে
রাখলাম পোষে,
ডাকলে চায় না ফিরে।।
কোনদিন পাখি
যাবে উড়ে
মাটির পিঞ্জর শূন্য করে।
হেলাল
উদ্দিন বিনয় করে,
ডাকি গানের সুরে।।
২৭৬)
কেউবা হাসে
কেউবা কাঁদে কেউবা গাছ তলায়,
এ দুনিয়ায় তোমার লীলা বুঝা দায়।। ও আলাহ
কেউরে দিলা
জমিদারী,
গাড়ি বাড়ির মালিক করি।
গহনা পরা
সুন্দর নারী,
কত শোভা পায়।। ও আল্লাহ
কেউরে
কাঁদাও দিয়া অভাব,
অভাবে তার নষ্ট স্বভাব।
তার উপরে
রিপুর প্রভাব,
বাঁচার নাই উপায়।। ও আল্লাহ
কেউ থাকে
গাছ তলায় বসি,
নাই তার মুখে হাসি খুশি।
শুধু তোমায় ভালবাসি,
হেলাল উদ্দিন গায়।। ও আলাহ
২৭৭)
দুই দিনের
জিন্দেগী পাইয়ারে মানুষ করতেছ বড়াই,
আইছ একা যাইবায় একা সঙ্গের সাথি কেহ নাই।।
আসলে ভবে
যাইতে হবে,
এই কথা জানি সবে।
একদিন আশার
বাসা ভাঙ্গবে,
পলকে সব হবে ছাই।।
যত রাজা
বাদশাহ আমির,
ফকির সাধু সন্ন্যাসী পীর।
সবাই কয়
দিনের মুসাফির,
কিসের পুত্র কন্যা ভাই।।
জীবন মরণ
যাহার হাতে,
ডাকো তারে সময় থাকতে।
অচিন পথে
একা যাইতে,
হেলাল উদ্দিনে ডরাই।।
২৭৮)
যাইতে পারব
না যমুনায়, নিষেধ করেছে আমায়,
যাও সখি বলো তারে শ্যাম আছে আমার অপেক্ষায়।।
ননদী কুটিলা
রানী,
চেয়ে থাকে দিন রজনী,
জটিলা করে
কানাকানি,
আড় নয়নে চায়।।
আয়ান ঘোষের
বেতের বাড়ি,
কেমনে সই অবলা নারী,
কালা
চান্দের প্রেমে পড়ি,
লাজ কুলমান যায়।।
সদায় আমায়
দেয় পাহারা,
আমি বাঁচবো নাগো তারে ছাড়া
হেলাল
উদ্দিন কয় মন চুরা রাধারে কাঁদায়।।
২৭৯)
মনটা আমার
পাগলা ঘোড়া,
ভুবন জুড়ে ঘুরে বেড়ায় যায় না তারে শাসন করা।।
খাইতে চাইলে
খাওয়াই তারে যখন যাহা চায়,
এক জায়গায় স্থির থাকে না অস্থির সর্বদায়।
বুঝে না মোর
পাগল মনটায়,
আমায় করল সর্বহারা।।
অবিরত পাখির
মত উড়ে ডালে ডালে,
অভিমানে কয় না কথা জবাব দেয় না ডাকলে।
একবার তারে
ধরতে পারলে,
থাকব সুখে জীবন ভরা।।
দুষ্টতায়
তুষ্ট থাকতে চায় সে রাত দিনে,
মন হইল না মনের মত কয় হেলাল উদ্দিনে।
দুষ্ট মনে
অকারইে,
ঘুরে সদায় লাগাম ছাড়া।।
২৮০)
ও মন দেখরে
ভাবিয়া,
যাইতে হবে একদিন এই দুনিয়া ছাড়িয়া।
জাগরে মন
ঘুমাইও না অচেতন হইয়া।।
যেদিন তোমার
হবে মরন,
দেখতে আসবে ভাই বন্ধুগণ।
পরাইবে সাদা
কাফন,
গোসলও করাইয়া।।
যখন পালকি
আসবে দুয়ারে,
নিবে চার বেহারা কাঁধে করে।
রাখবে
অন্ধকার কবরে,
জনমের লাগিয়া।।
খালি হাতে
স্বামীর ঘরে,
যাইবা তুমি কেমন করে।
হেলাল
উদ্দিন কাঁদি ডরে,
কি ধন যাব লইয়া।।
২৮১)
যার লাগিয়া
মন, সদায় করে উচাটন,
হৃদয়ের ধন বন্ধু আইল না।
বিরহের
আগুনে, জ্বলি রাত দিনে,
বন্ধুয়ার সনে, দেখা হইল না।।
বন্ধুয়ার
বিরহ, বুঝে না কেহ,
পুড়ে মন দেহ, সইতে পারি না।
এই কি
ভালবাসার ফল, মুছব কত চোখের জল,
আমায় করিল পাগল দেওয়ানা।।
ঘুরে
বন-বনান্ত, হয়েছি অশান্ত,
মনে অফুরন্ত বাসনা।
মনের মণি
কোথায়, রাখিব তোমায়,
হেরিব সদায়, কেউ দেখবে না।।
প্রেম করিয়া
অকুলে, আমায় কেন ভাসাইলে,
কথা দিয়েছিলে, কোন দিন ভুলবে না।
কয় হেলাল
উদ্দিনে, শুধু তোমার কারণে,
মনের বাগানে, ফুল ফোটে না।।
২৮২)
বন্ধুর শানে
গাইব গান নাচিয়া সকলে গো,
আদর করিয়া লইব কোলে
বন্ধুয়া আসিবে গো আদর করিয়া লইব কোলে।।
ভক্তি বিশ্বাস প্রেমভাবে ডাকার মত ডাকিলে,
নিশ্চয় বন্ধু দিবে সাড়া ভক্তের
অনুকুলে গো।।
চুয়া চন্দন আগর আতর ধূপ গোলাপ জলে,
সাজাও বাসর আসবে বন্ধু নিশিতে নিরলে
গো।।
সাবধানে থাকিও সবাই দুয়ার রাখো খোলে,
ফুল তুলিয়া গাঁথ, মালা দিব বন্ধুর
গলে গো।।
হেলাল উদ্দিন কয় আমার বন্ধু আসবে বলে,
আনন্দে হই আত্মহারা দুঃখ ব্যথা ভুলে
গো।।
২৮৩)
পুরুষ ছাড়া
নারীর কোন মূল্য নাই, শুনেন ভাই,
মিছে কেন কর তুমি রূপ যৌবনের বড়াই।।
জল ছাড়া মাছ
যেমন,
পুরুষ ছাড়া নারী তেমন।
সাথীহারা
পাগলের মতন,
ঘুরে সদায় দেখতে পাই।।
পুরুষ ভ্রমর
নারী মধু,
ভ্রমর মধু খুঁজে শুধু।
নারী হয়
পুরুষের বধু,
পুরুষ যদি দেয়রে ঠাঁই।।
নারীর নাই
স্বাধীনতা,
মানতে হয় পুরুষের কথা।
উচিত কইলে
পাবে ব্যথা,
চল পুরুষের মন যুগাই।।
পুরুষের
সেবা না করিলে,
মুক্তি নাই কোনকালে,
ভেবে হেলাল
উদ্দিন বলে,
খাইলে পুরুষের কামাই।।
২৮৪)
মরতে হবে
সবাই একদিন মরার জন্য হও তৈয়ার,
আয়োজন কররে মন তোমার শেষ বিয়ার।।
মরতে কেহ
চায় না জানি তবু মরতে হয়,
যার যেভাবে মরণ লেখা নাই কোন সংশয়।
মরণ ব্যাধি
যন্ত্রণাময়,
মন তুমি হও হুঁশিয়ার।।
রোগে আর
দুর্ঘটনায় নিত্য মানুষ মরে,
কার কখন হবে মরণ কেউ জানে না রে।
দেহ মন
পবিত্র করে,
নাম জপ দয়াল আল্লার।।
মরন কথা
সবাই যদি করিতাম স্মরণ,
ভুলেও করতাম না কেহ অন্যায় আচরণ।
হেলাল
উদ্দিন কাঁদে এখন,
সামনে ঘোর অন্ধকার।।
২৮৫)
তোমার বিরহে
আর কাঁদিব কত,
কাঁদিতে কাঁদিতে আমি হয়েছি শয্যাগত।।
দুঃখ ব্যথা
যন্ত্রণায়,
কাঁদাইতে পারে সদায়।
কি করে
বুঝাব তোমায়,
আমি নয় তোমার মত।।
আমি কি ভুল
করেছি,
তোমায় হারা হয়েছি।
কত জ্বালা
সহিতেছি,
জ্বালাতে মন অশান্ত।।
কেন থাক
আড়ালে,
ক্ষতি কি দেখা দিলে।
হেলাল
উদ্দিন আপন বলে,
ডাকি যে অবিরত।।
২৮৬)
ও বিদেশী
নাইয়া, ভাইটালী গান গাইয়া,
রঙ্গিন তরী বাইয়া, যাও তুমি রঙ্গিন পাল উড়াইয়া।।
বিনয় করি ও
মাঝি ভাই ঘাটে ভিড়াও তরী,
কেমন করে ভরা নদী দিব আমি পাড়ি,
যাব আমার বন্ধুর
বাড়ি,
যাও না আমায় লইয়া।।
উজান ভাটি
কত নাইয়া নিত্য আসে যায়,
ডাক শুনে না ফিরে চায় না করি কী উপায়।
আর কতদিন
পারের আশায়,
থাকব আমি চাইয়া।।
ভরা নদীর
ঢেউ দেখিয়া পরাণ কাঁপে ডরে,
দোহাই লাগে ও মাঝি ভাই একবার চাও ফিরে।
হেলাল
উদ্দিন নদীর পাড়ে,
কোনদিন যাই মরিয়া।।
২৮৭)
মাগো তুমি
আমায় ছেড়ে চলে গেছো পরপারে,
জানি তুমি আর কোনদিন আসবে না ফিরে।।
এ দুনিয়ায়
মায়ের মতন নাইরে আপনজন,
মা-হারা সন্তানে জানে মায়ের কি বেদন।
মায়ের কারণ
সারা জীবন,
চোখের পানি ঝরে।।
কেমনে থাকিব
মাগো আমি তোমায় ভুলে,
মাতৃস্নেহে কে আমারে বসাইবে কোলে।
আমি তোমার
পাগল ছেলে,
মা ডাকিব কারে।।
মাগো তোমার
জন্য সদায় কাঁদে আমার প্রাণ,
দোয়া করি আল্লাহ তোমায় বেহেস্ত করেন দান।
হেলাল
উদ্দিন লেখি এই গান,
তোমায় স্মরণ করে।।
২৮৮)
শুন বলি
সখিগণ কি করিব কোথায় যাই এখন,
না বুঝিযা প্রেম করিয়া কেন দিলাম মন।।
ননদী শাশুড়ী
মোরে, বন্দী করে রাখলো ঘরে,
প্রেম আগুনে দাউ দাউ করে, বন্ধুয়ার কারণ।।
যখন বন্ধে
বাঁশি বাজায়, জ্বালা পুড়া করে গায়,
আমার পানে সকলে চায়, ফিরায় না নয়ন।।
সখি তরা
সবাই মিলে, বন্ধুর কাছে যাও চলে,
কেন রাধা রাধা বলে, পাগলের মতন।।
দেয় না আমায়
বাইরে যেতে, আয়ান ঘোষ থাকে পথে,
হেলাল উদ্দিন কয় পিরিতে, মানে না শাসন।।
২৮৯)
সারানিশি
জেগে বন্ধুর অপেক্ষায় রইলাম,
সখি কেন আমি কুঞ্জ সাজাইলাম।।
সখি তরা
বাহির হইয়া,
দেখ না চাইয়া, আসেনি মোর শ্যাম।
কেলে সোনা,
এনে দে না,
কোলে বসাইতাম।।
মাথায় চুড়া
কালশশী,
বাজায় বাঁশি, নিত্য ব্রজধাম।
পূর্ণিমা
রাত, হইল প্রভাত,
তারে না পাইলাম।।
এনে দেখাও
বংশিধারী,
সয় না দেরি, প্রেম জ্বালায় মইলাম,
হেলাল
উদ্দিন কয় রসময়,
হইল কেন বাম।।
২৯০)
এলোরে এলোরে
খুশির ঈদ এলোরে,
গলাগলি করি সবাই বিভেদ ভুলেরে।।
নতুন জামা
পরিয়া গায়,
নামাজ পড়তে যাব ঈদগায়।
হাত উটাইয়া আল্লার
দরগায়,
ক্ষমা চাইবরে।।
ভুলে যাব
হিংসা বিভেদ,
ধনী গরিব নাই ভেদাভেদ,
কারো মনে
রাখবো না জেদ,
সবাই মুমিনরে।।
পবিত্র এই
ঈদের দিনে,
কি আনন্দ বয়ে আনে,
হেলাল
উদ্দিন কয় সবার মনে,
শান্তি আসুক রে।।
২৯১)
তোর বিরহে
কোনদিন যাব মরে, ও দয়ালরে,
একবার দেখা দিলা না আমারে।
আমায় থুইয়া,
কারে লইয়া, রইলা তুমি দূরে।।
দয়াল রে-
শৈশব গেল কিশোর গেল,
যৌবনেও ভাটি দিল,
চুল পাকিল
দন্ত গেছে পড়ে।
চোখে আগের জ্যুতি নাই, শ্রবণে কম শুনতে পাই,
সোনার তনু হইল
ছাই, প্রেম আগুনে পুড়ে।।
দয়ালরে- ঘন
ঘন বহে দম, হাত পায়ে বল কম,
আসিবে যম নিবে আমায় ধরে।
তোমারে না
পাওয়ার ব্যথায়, হেলাল উদ্দিন কত গান গায়
দুঃখ রইল কলিজায়, আইলা না মোর ঘরে।।
২৯২)
শ্যাম বাঁশি
বাজায় ঐ শোনা যায় কদম তলায়
বাঁশির সুরে, উদাস করে, ঘরে থাকতে দেয় না আমায়।।
সখিগো বাজায়
বাঁশি নাম ধরিয়া,
সুরে নিল মন হরিয়া,
প্রেম
করিয়া, টেকলাম বিষম দায়।
বুঝে না মোর মন চোরা, কি করিব বল তোরা,
জ্বালা
পুড়া, করে আমায় গায়।।
সখিগো তোমরা
সবাই আমার হইয়া,
একটা উপায় দে করিয়া,
তার লাগিয়া,
মরি যে লজ্জায়।
তোমরা কি শুন না লোকে, মন্দ বলে আমায় দেখে,
দুঃখ বুকে
দিল বন্ধুয়ায়।।
সখিগো- তারে
গিয়া করো মানা,
বাঁশি যেন আর বাজায় না।
কি
যন্ত্রণা, প্রকাশ করা দায়।
হেলাল উদ্দিন বলে রাধা,
তুমি
শ্যামের অঙ্গের আধা, প্রেমে বাধা থাক এ ধরায়।।
২৯৩)
সোনা বন্ধু
কোথায় গেল জানি না খবর,
তাহার তরে সদায় আমার কাঁদে যে অন্তর।।
অনেক দিন হয়
বন্ধু আমার হইল নিরুদ্দেশ,
তার লাগিয়া এখন আমার পাগলিনীর বেশ।
রইল দূরে,
কারবা ঘরে,
আমায় ভেবে পর।।
সয় না
জ্বালা, অঙ্গ কালা, বন্ধুয়ার চিন্তায়,
দিবানিশি খুঁজি তারে মরিয়ে ব্যথায়।
দেয় না
দেখা, প্রাণ সখা, পেয়ে কার আদর।।
মনের দুঃখ
রইল মনে কার কাছে বলি,
বন্ধুহারা হয়ে বিচ্ছেদ আগুনে জ্বলি,
হেলাল
উদ্দিন, বন্ধুর অধীন, কাঁদি জনমভর।।
২৯৪)
কার লাইগারে
ও মন বাঁধলে ঘর-বাড়ি
তুমি যাইবা, তুমি যাইবা, তুমি যাইবা সব ছাড়ি।
যতন করে
সাজাইয়াছ সুন্দর বাড়ি ঘর,
আরামে ঘুমাও নরম বিছানার উপর।
স্ত্রী
পুত্র কন্যার আদর, যেমন মায়ার বেড়ি।।
হালাল হারাম
না চিনিয়া করলে উপার্জন,
অর্জিত সম্পদ হবে বিপদের কারণ।
আসলে শমন
কাঁদবে তখন, হায় হায় করি।।
সত্য ভুলে
অভিশপ্ত পথে দিন কাটাই,
কেহ কারো পাপের ভাগি হবে নারে ভাই।
হেলাল উদ্দিন
ভাবতেছি তাই, নাই পারের কড়ি।।
২৯৫)
আমার জানের
জান, তুমি পূর্ণিমারই চান,
তোমারও লাগিয়ারে বন্ধু কাঁদে আমার প্রাণ।।
ছাতক যেমন
মেঘের আশায় হয় পিপাসিত,
তোমায় পাওয়ার আশায় আমি ভাবি অবিরত।
শূন্য ভূবন,
তোমার কারণ, হইল যে শ্মশান।।
জল ছাড়া মাছ
যেমন শুকনাতে বাঁচে না,
সাথীহারা একা আমি তুমি কি বুঝ না।
রইলে ভুলে,
চোখের জলে, গাই বিরহের গান।।
আমি তোমায়
বিশ্বাস করে দিলাম দেহমন,
হেলাল উদ্দিন চায় একবার তোমার দরশন,
ডাকি মিছে,
লোকের কাছে, হইলাম অপমান।।
২৯৬)
পিরিতি
করিয়া, গিয়াছে ছাড়িয়া,
আমারে ভুলিয়া আছে কোন দেশে।
মনে ছিল
আশা, পাব ভালবাসা,
মিটাইবো প্রেম পিপাসা, থাকিয়া পাশে।।
বসিয়া আমার
কোলে,
জড়াইয়া ধরে গলে।
বিদায় নিল
আসবে বলে,
আইল না কোন দোষে।।
বসে আছি
বিশ্বাস করে,
একদিন সে আসবে ফিরে।
তার বিরহে
যাব মরে,
পায় না যদি এসে।।
কঠিন হৃদয়
পাষাণ হিয়া,
দেখলা না একবার আসিয়া।
হেলাল
উদ্দিন তার লাগিয়া,
ঘুরি পাগল বেশে।।
২৯৭)
অবহেলায় গেল
আমার সারাটা জীবন,
আমি কি করি এখন।
কর্মদোষে
হইল না বন্ধুয়ার দরশন।।
কামে মত্ত
হইয়া করলাম রাত জাগরণ,
কাম সাগরে হারাইলাম অমূল্য রতন।।
দিবস গেল
হেসে খেলে নাই সাধন ভজন,
এ দুনিয়ার মায়ায় ভুলে হইলাম অচেতন।।
আপনকে পর
ভাবিয়া পর করলাম আপন,
কি জবাব দিব জিজ্ঞাস করলে মহাজন।।
আশা ছিল মনে
বন্ধুর সেবিব চরণ,
হেলাল উদ্দিন হইল দোষি ছয় রিপুর কারণ।।
২৯৮)
কার কুঞ্জে
রইয়াছে নিষ্ঠুর কালিয়া,
সারা নিশি
যায় রে আমার কাঁদিয়া।
আর কত রহিব
পন্থ নিরখিয়া।।
ফুল তুলে
মালা গাঁথিলাম
চুয়া চন্দন ধূপ রাখিলাম,
যতনে শয্যা
সাজাইলাম, কার লাগিয়া।।
দারুণও
বিচ্ছেদানলে
দিবানিশি হিয়া জ্বলে,
শ্যামের
দেখা না পাইলে, যাব মরিয়া।।
হেলাল
উদ্দিন এ জগতে দোষী নিষ্ঠুয়ার পিরিতে
দুঃখ রইবে
মনেতে, জীবন ভরিয়া।।
২৯৯)
এত
স্বার্থপর মানুষ
সদায় করে
নিজের চিন্তা হইয়া বেহুঁশ।।
স্বার্থের
টানে আঘাত করে অন্যেরই বুকে
স্ত্রী পুত্র আর কন্যা নিয়ে থাকতে চায়
সুখে
সুখ সাগরে
গা ভাসিয়ে হয় সে সন্তোষ।।
বাড়ি গাড়ি
টাকার জন্য চলে কারসাজি
দুনিয়াতে শুধু লোভীদের আড্ডাবাজি,
নিজে করে
অপকর্ম চায় অন্যকে দিতে দোষ।।
ছলে বলে কল
কৌশলে কাজ করে আদায়,
এমন একটি ভূ-মন্ডলে বাস করছি হায় রে হায়
হেলাল
উদ্দিন ভাবি বসে কোনদিন জানি হবে হুঁশ।।
৩০০)
প্রণতি
চরণেরে বন্ধু প্রণতি চরণে,
চরণ ছাড়া
করিও না অভাগিনী জেনে।।
তোমার
প্রেমে পাগলপারা রে
ও বন্ধু জীয়নে মরণে,
দেহ মনে
মিশে আছো ভুলিব কেমনে।।
অহর্নিশি
তোমায় ভাবি রে
ও বন্ধু ধ্যানে জাগরণে,
তুমি বিনে
কে বুঝিবে কি যন্ত্রণা মনে।।
তোমায় হারা
হইলে পরে রে
ও বন্ধু আমার এ জীবনে,
পন্থহারা
পথিক হইব কয় হেলাল উদ্দিনে।।
৩০১)
আমি সুরমার
ফারো থাকি,
সুরমার ফারো বইয়া বইয়া,
বিরহের গান
লেখি।।
পাল তুলিয়া
চলোরে নাও
বন্ধুর খবর লইয়া যাও,
বন্ধুর দেখা
পাইতে আমার
মনে আশা রাখি।।
বিনয় করি
যাও হুনিয়া
কইও তারে বুঝাইয়া,
বিচ্ছেদের
আগুনে পুড়ে
মরণ আছে বাকি।।
যদি মনে
থাকে দয়া
দেখতে মোরে একবার আইয়া,
হেলাল
উদ্দিন আশায় আছি
কান্দে পরাণ পাখি।।
৩০২)
দুর্লভ
মনুষ্য জনম হবে না আর ভূবলয়
জিতেন্দ্রিয়
হয়ে তোমার জীবন করো কনকময়।।
মঞ্জিমায়
উদগ্রীব হয়ে মস্তকে লইয়া ভূভার
কিঞ্চৎ ভাবাত্মক হইলে না সম্মুখে আছে
কান্তার।
সংকটে হবে
না নিস্তার, হলে ভাগ্য বিপর্যয়।।
ভ্রমাত্মকতায়
হলে তুমি মর্মঘাতি ভ্রংশিত,
আত্মাশোধন করোরে মন হইয়া আশংকিত।
হবেরে তুই
প্রশংসিত, থাকবে না আর অনুশয়।।
ভূ-শয্যায়
শায়িত হওয়ার সময় এসেছে চলে,
উত্তরণ হইবে সিন্ধু প্রণিধান করিলে।
উন্মাদ
হেলাল উদ্দিন বলে, হওরে এবার উচ্চাশ । ।
৩০৩)
পুষ্প আর
চন্দনে বরণ করিব তোমায়
তুমি এস এস রে
বন্ধু এস নিরালায়।।
অষ্ট সখি
সঙ্গে নিয়ে তোমারই আশায়
চরণ ধূলি
দিয়ে ধন্য কর হে আমায়।।
লোক লজ্জা
ভাসাইয়া প্রেমও যমুনায়,
নিকুঞ্জ
কাননে বসে আছি অপেক্ষায়।।
পাড়া
প্রতিবেশী মন্দ বলে সর্বদায়,
ভিন্ন বাসলে
হেলাল উদ্দিন যাইব কোথায়।।
৩০৪)
ও মন ভাবরে
একবার,
মায়ার
দুনিয়া ছেড়ে যাইবা পরপার।
কয়দিনের
মুসাফির তুমি কিসের অহংকার।।
ক্ষণিকের
তরে এলে করিতে বেপার,
ভবের নেশায়
হারাইলে সকলি তোমার।।
ভোগে মত্ত
হইয়া রইলে কে করবে উদ্ধার,
রিপুর বশে
করলে কত অন্যায় অবিচার।।
পাড়ি দিতে
হবে নদী জানোনি সাঁতার,
হেলাল
উদ্দিন সময় থাকতে হও হুঁশিয়ার।।
৩০৫)
মন যারে চায়
পাই না তারে রে,
আমি কি করি উপায়।
বন্ধুয়ার
বিরহের আগুন জ্বলে সারা গায় রে।।
বা-অক্ষরে
ঘরের বাহির উ-তে উদাস,
ল-অক্ষরে লয়
না মনে ভবের ভোগ বিলাসরে।।
বাউল,
বেহেস্তের আশা করে না ভয় পায় না দোজখ
খোঁজে শুধু
সেই বন্ধুরে যে বিশ্বপালক রে।।
কোথায় ছিলাম
কোথায় এলাম আবার কোথায় যাব,
হেলাল
উদ্দিন কেমন করে প্রাণ বন্ধুরে পাব রে।।
৩০৬)
বৈশাখ মাস
আইলরে সুখের বার্তা লইয়ারে
আইলো নতুন বর্ষরে।।
নতুন দিনের
নতুন কথা হাওয়ায় যায় বলিয়া
নীল আকাশে মেঘের ভেলা চলিয়াছে খেলিয়া
নিরস মাটি
সরস হইল তোমার আগমনেরে।।
নববর্ষ দিল
দেখা প্রাণবন্ধু বিদেশে
আর কতকাল রইব বল বন্ধুর আশার আশে
বন্ধুবিনে
মনের দুঃখ কারে যাই বলিয়ারে।।
হেলাল
উদ্দিন বলে পাষাণ এসো একবার ফিরি
বিরহের অনল বুকে কেমনে ধৈর্য ধরি
দেখা দিয়া
বুকের অনল যাও নিভাইয়ারে।।
৩০৭)
একদিন তুমি
সব ছাড়িয়া যাইবা আপন দেশে
কার বা আশা করে রে মন রইলে বেহুঁশে।।
রং তামাশায়
দিন কাটাইলে বুঝলে নারে মন
সমন লইয়া পিয়ন যেদিন করবে আগমন
ভাঙ্গিবে
তোর আশার স্বপন মাটিতে যাবে মিশে।।
ফাঁকি দিয়া
সোয়া পাখি যাবে ছাড়িয়া
প্রতিবেশী আসবে দেখতে কলমা পড়িয়া
চোখের জলে
বুক ভাসাইয়া কাঁদবে দাঁড়াইয়া পাশে।।
হেলাল
উদ্দিন কয় যত আত্মীয়-স্বজন
গরম জলে গোসল দিয়ে পড়াইবে কাপন
অচিন পথে
একা গমন করবেরে অবশেষে।।
৩০৮)
প্রেমের অনল
জ্বলে সদায় আমার অন্তরায়
বন্ধুবিনে
সে অনল বল কে নিভায়।।
মনের দুঃখ
রইল মনে না দেখে তোমায়
দিবানিশী
তোমায় ভাবি ভুলে থাকা হল দায়।।
জানি না কার
সংগ পাইয়া রয়েছো কোথায়
আজ আসবে কাল আসবে বলে আছি অপেক্ষায়।।
হেলাল
উদ্দিন তোমায় ডাকি বুক ভরা আশায়
একবার এসে দিও দেখা প্রাণ থাকিতে দেহায়।
৩০৯)
কেমন করে
যাই যমুনায়
ঐ শোন শ্যামের বাঁশি
নাম ধরিয়া
ডাকে আমায়।।
তরুতলে
নিত্য আসি,
বাজায় শ্যামে মোহন বাঁশি,
বুঝে না মোর
কালশশী
রাত দিন যায় কি যন্ত্রণায়।।
বাধি ননদী
শাশুড়ী
পরানে আর সয় না দেরি
কেমনে থাকি
রূপ না হেরী
সখি তোরা বল না উপায়।।
যাও তারে কর
মানা
বাঁশি যেন আর বাজায় না।
হেলাল
উদ্দিন আর পারলাম না
পাহারাতে
রাখে সদায়।
No comments:
Post a Comment